‘টাকা-পয়সা দান-দক্ষিণার প্রয়োজন নেই। এখন প্রয়োজন হচ্ছে প্রবাসের মেধা ও অভিজ্ঞতা মাতৃভূমির জন্যে নিয়োজিত করা। প্রবাস প্রজন্মকে বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়ন ও কল্যাণে আকৃষ্ট রাখা। তাহলেই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে চলমান উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ত্বরান্বিত হবে’-প্রবাসীদের প্রতি এই আহ্বান জানিয়েছেন জাতিসংঘে বাংলাদেশের স্থায়ী প্রতিনিধি ও রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেন।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে পদোন্নতি পাওয়ায় মাসুদ বিন মোমেনকে শুভেচ্ছা-অভিনন্দন জানাতে বুধবার (৩০ অক্টোবর) রাতে নিউইয়র্ক সিটির জ্যাকসন হাইটসে পালকি পার্টি সেন্টারে এক সংবর্ধনা-সমাবেশের আয়োজন করে যৌথভাবে যুক্তরাষ্ট্র সেক্টর কমান্ডারস ফোরাম এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন। এ সময় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এবং পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে এ মোমেনকেও ধন্যবাদ জানানো হয় যোগ্য কূটনীতিককে যথাযথ মূল্যায়নে পররাষ্ট্র সচিব হিসেবে পদোন্নতি দেয়ার জন্যে।
রাষ্ট্রদূত মাসুদ বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুর স্থায়ী সমাধান এবং ২৫ মার্চকে আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবস হিসেবে জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়ের ক্ষেত্রে প্রবাসীদের ভূমিকার গুরুত্ব অপরিসীম। আমরা কূটনৈতিক পর্যায়ে দেন-দরবার অব্যাহত রেখেছি। একইসাথে প্রবাসীরাও যদি নিজ নিজ এলাকার সিনেটর-কংগ্রেসম্যানসহ আন্তর্জাতিক পর্যায়ে খ্যাতনামা থিঙ্কট্যাংক, মানবাধিকার সংস্থা, সুশীল সমাজের সাথে দেন-দরবার চালান তাহলে বিষয়টি ত্বরান্বিত হবে।’
এ প্রসঙ্গে তিনি আর্মেনিয়ার গণহত্যা নিয়ে মার্কিন কংগ্রেসে একটি রেজ্যুলেশনের প্রসঙ্গ টেনে বলেন, টানা লবিংয়ের সুফল হিসেবে ২৯ অক্টোবর কংগ্রেসে একটি বিল পাশ হয়েছে বর্বরতার ১০৪ বছর পর। আমাদেরকেও ধৈর্য হারালে চলবে না। সভা-সমাবেশের পাশাপাশি পাকিস্তানি হায়েনাদের বর্বরতার আলোকে সিনেমা তৈরি করা যেতে পারে। নাটক, নৃত্যনাট্য মঞ্চস্থ করা যেতে পারে। তাহলে জনমত জোরদার করা সহজ হবে।
প্রবাসীদের বিভিন্ন সমস্যা এবং নিউইয়র্কে বঙ্গবন্ধু ভবন প্রতিষ্ঠার দাবি সম্পর্কেও তিনি অবহিত এবং যুক্তরাষ্ট্রে ঘাপটি মেরে থাকা বঙ্গবন্ধুর ঘাতকদের ফিরিয়ে নেয়ার ইস্যুটিও তার জানা আছে। তাই মন্ত্রণালয়ে সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালনকালে এসব বিষয় গুরুত্ব পাবে বলেও উল্লেখ করেন তিনি। রাষ্ট্রদূত মাসুদ নভেম্বরের দ্বিতীয়ার্ধে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব হিসেবে যোগদানের জন্যে নিউইয়র্ক ত্যাগ করবেন বলে জানিয়ে সকলের দোয়া চেয়েছেন।
আমেরিকা-বাংলাদেশ প্রেসক্লাবের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা লাবলু আনসারের সঞ্চালনায় এ অনুষ্ঠান শুরু হয় জাতিরজনক বঙ্গবন্ধু এবং তার পরিবারের শহীদ সদস্যসহ মুক্তিযুদ্ধে ৩০ লাখ শহীদের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে এক মিনিট দাঁড়িয়ে নিরবতা পালনের মধ্য দিয়ে। এরপর স্বাগত বক্তব্য দেন সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা রাশেদ আহমেদ। রাষ্ট্রদূতের পদোন্নতিতে গভীর সন্তোষ প্রকাশ করে উচ্চতর পদে দায়িত্ব পালনে প্রবাসীদের বিরাজমান সদস্যাসমূহ সমাধানে মাসুদ বিন মোমেন যত্নবান হবেন বলে প্রত্যাশা ব্যক্ত করে শুভেচ্ছা বক্তব্য দেন যুক্তরাষ্ট্র বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশনের সেক্রেটারি আব্দুল কাদের মিয়া, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের সেক্রেটারি মুক্তিযোদ্ধা রেজাউল বারি, নিউইয়র্ক মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি জাকারিয়া চৌধুরী, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের আন্তর্জাতিক নারী বিষয়ক সম্পাদিকা সবিতা দাস এবং যুক্তরাষ্ট্র জাতীয় পার্টির সাধারণ সম্পাদক আবু তালেব চৌধুরী চান্দু।
এ সময় উভয় সংগঠনের পক্ষ থেকে উপস্থিত মুক্তিযোদ্ধাগণকে সাথে নিয়ে রাষ্ট্রদূত মাসুদ বিন মোমেনকে ফুলেল শুভেচ্ছার পর সম্মানসূচক ক্রেস্ট প্রদান করা হয়।
মুক্তিযোদ্ধার মধ্যে ছিলেন এ কে এম ফজলুল হক, আবুল বাশার চুন্নু, ফারুক হোসেন, খোরশেদ আনোয়ার বাবলু, মিজানুর রহমান চৌধুরী, আব্দুল আওয়াল প্রমুখ। বিশিষ্টজনদের মধ্যে আরো ছিলেন জাতিসংঘে বাংলাদেশ মিশনের ফার্স্ট সেক্রেটারি নূরএলাহি মিনা, মূলধারার রাজনীতিক খোরশেদ খন্দকার, জয় চৌধুরী, রিয়েল এস্টেট এক্সিকিটিভ নিলুফা শিরিন, সেক্টর কমান্ডারস ফোরামের নেতা হাজী জাফরউল্লাহ, আলিম খান, শুভ রায়, আশরাফ হোসেন লিটন, উইলি নন্দি, ফাহাদ সোলায়মান, এ টি এম মাসুদ, নাজিম উদ্দিন, এটিএম আলম, সাহাবউদ্দিন চৌধুরী লিটন জে চৌধুরী, কানু দত্ত, আবুল কাশেমহ, কমিউনিটি লিডার শাহাদৎ হোসেন,শহীদুল ইসলাম, রিজু মোহাম্মদ, শাহ ফারুক প্রমুখ।
বিডি প্রতিদিন/এনায়েত করিম