যুক্তরাষ্ট্রে ‘পঞ্চম বার্ষিক দ্বি-পাক্ষিক সন্ত্রাস-বিরোধী অর্থায়নে ব্যাংকিং সংলাপ’-এ হুন্ডি প্রতিরোধ এবং সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কে অর্থের প্রবাহ রোধে বাংলাদেশের গৃহিত পদক্ষেপ প্রশংসিত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র এবং বাংলাদেশের যৌথ উদ্যোগে নর্থ ক্যারোলিনা রাজ্যের শার্লটি সিটিতে ৪ দিনব্যাপী এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।
রূপালী ব্যাংকের এমডি এবং সিইও ওবায়দুল্লাহ আল মাসুদ বলেন, নিত্য-নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হওয়ায় মানি লন্ডারিং তথা হুন্ডির গতিবিধিতেও পরিবর্তন সাধিত হচ্ছে। এর ফলে আমাদেরকেও চ্যালেঞ্জিং পরিস্থিতির সম্মুখীন হতে হয়। সাধ্যমত সচেষ্ট রয়েছি জাতীয় স্বার্থ রক্ষায় মেধা ও শ্রমের সমন্বয় ঘটিয়ে সবকিছু সঠিক ট্র্যাকে রাখার জন্যে। এ অবস্থায় কাজের পরিধি বেড়ে গেছে। কর্মকর্তা পর্যায়েও সঙ্গতি রাখতে হচ্ছে। জিএম পর্যায়ে লোক রাখতে হচ্ছে সবকিছু সঠিকভাবে হচ্ছে কিনা তার তদারকির জন্যে। সন্ত্রাসবাদে অর্থের প্রবাহ প্রতিরোধে বাংলাদেশের অবস্থান বলা যায় সবার ওপরে। এখন দুর্নীতিবিরোধী অভিযান চলছে। মানি লন্ডারিং চিরতরে প্রতিরোধেও সম্মিলিত একটি উদ্যোগের প্রয়োজন।
আল মাসুদ বলেন, এই সংলাপে অংশগ্রহণকারি যুক্তরাষ্ট্রের বিচার বিভাগ, আইন বিভাগ, এফবিআইয়ের শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তারা বাংলাদেশের অর্থনৈতিক সেক্টরের ব্যবস্থাপনায় বিদ্যমান গতি-প্রবাহের প্রশংসা করেছেন। তারা উচ্ছাসা পোষণ করলেন বাংলাদেশ এগিয়ে চলা নিয়ে। এই দ্বি-পাক্ষিক সংলাপ অথবা আলোচনায় গোটাবিশ্বের অর্থনৈতিক পরিস্থিতির পাশাপাশি অর্থনৈতিক সেক্টরের ব্যবস্থাপনা নিয়েও খোলামেলা আলোচনা হয়েছে। তা থেকে আমরা চমৎকার একটি ধারণা নিয়ে গেলাম।
সোনালী ব্যাংকের সিইও এবং ম্যানেজিং ডিরেক্টর আতাউর রহমান প্রধান বলেন, মানি লন্ডারিং এবং সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কে অর্থের প্রবাহ একেবারে থামিয়ে দিতে যুক্তরাষ্ট্রের গৃহিত পদক্ষেপসমূহ বাংলাদেশও যাতে অনুসরণ করতে পারে সে সংকল্প নিয়ে ফিরছি। এ নিয়ে বাংলাদেশের সকল ব্যাংকেই আন্তরিকতায় কোন ঘাটতি নেই। এমনকি পরিবর্তিত পরিস্থিতির পরিপ্রেক্ষিতে হুন্ডি ঠেকাতে যথাযথ পদক্ষেপ নিতেও কোন সমস্যা হবে না বলে আমাদের পক্ষ থেকে উল্লেখ করা হয়। যুক্তরাষ্ট্র যে চর্চাটি করছে, তা সকলের জন্যেই মঙ্গলের এবং তা অনুসরন করা উচিত। আমরা তা করতে বদ্ধপরিকর-এটি বলার অপেক্ষা রাখে না। বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টরে সবকিছুরই উপযুক্ততা রয়েছে। অর্থাৎ অপরাধচক্রের গতিবিধির ওপর গভীর পর্যবেক্ষণ অনুযায়ী বাংলাদেশের ব্যাংকিং সেক্টর সবকিছু ঢেলে সাজাতে পারবে।
জনতা ব্যাংকের এমডি ও সিইও এম এ সালাম বলেন, আর্থিক সেক্টরে স্বচ্ছতার প্রশ্নে এ ধরনের সংলাপের গুরুত্ব অপরিসীম। আমরাও নিজ নিজ আঙ্গিকে ব্যাংকের ঊর্দ্ধতন কর্মকর্তাগণকে নিয়ে এ নিয়ে আলোচনা করে থাকি।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের ২৭ ব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালকরা ২৮ অক্টোবর থেকে শুরু হওয়া এ সংলাপে অংশ নেন।
হুন্ডি প্রতিরোধ এবং আন্তর্জাতিক সন্ত্রাসী নেটওয়ার্কে অর্থ সহায়তা বন্ধে প্রযুক্তিগত কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা নিয়ে গবেষণালব্ধ এবং বাস্তবসম্মত এ আলোচনার ব্যবস্থাপনায় ছিল বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট, যুক্তরাষ্ট্রের পররাষ্ট্রমন্ত্রণালয় এবং বিচার বিভাগ।
বাংলাদেশ থেকে আরো এসেছিলেন ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিটের প্রধান আবু হেনা মোহাম্মদ রাজী হাসান এবং বাংলাদেশ ব্যাংকের জেনারেল ম্যানেজার জাকির হোসেন চৌধুরী, ব্যাঙ্কার্স এসোসিয়েশনের মহাসচিব এবং ব্যাংক এশিয়া লিমিটেডের প্রেসিডেন্ট মোহাম্মদ আরফান আলী।
নিউইয়র্কের ব্যবসায়ী ও শিল্পদ্যোক্তা মোহাম্মদ হাসানুজ্জামান বলেন, বাংলাদেশ যে সত্যিকার অর্থেই এগিয়ে চলছে তা মার্কিন মুল্লুকে এ ধরনের সংলাপ থেকেই অনুধাবন করা যায়। এফবিআইসহ আইন ও বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তারাও গভীর পর্যবেক্ষণের উদ্ধৃতি দিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের শীর্ষ কর্মকর্তাগণসহ বিভিন্ন ব্যাংকের এমডি ও সিইও’র সাথে এই সংলাপে সুস্পষ্টভাবে জানালেন আর্থিক সেক্টরের ব্যবস্থাপনাতেও স্বচ্ছতার কথা। এ ধরনের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বাংলাদেশে বিনিয়োগে আগ্রহীরা উৎসাহিত হবেন-এতে কোন সন্দেহ নেই।
বিডি প্রতিদিন/ফারজানা