করোনার অজুহাতে প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অভিবাসনের কর্মসূচি আপাতত স্থগিত করার হুমকি দিয়েছেন। ‘অদৃশ্য শত্রুর ভয়ঙ্কর আক্রমণের পরিপ্রেক্ষিতে গ্রেট আমেরিকান সিটিজেনদের চাকরি সংরক্ষণের স্বার্থে অভিবাসন (পারিবারিক, ব্যবসা-বিনিয়োগ ইত্যাদি ক্যাটাগরিতে ইমিগ্র্যান্ট ভিসা) মর্যাদায় যুক্তরাষ্ট্রে আসার কার্যক্রম সাময়িকভাবে স্থগিতের জন্য আমি একটি নির্বাহী আদেশে স্বাক্ষর করব’ ("In light of the attack from the Invisible Enemy, as well as the need to protect the jobs of our GREAT American Citizens, I will be signing an Executive Order to temporarily suspend immigration into the United States!" Trump tweeted.)
সোমবার রাতে এক টুইটে এ মনোভাব প্রকাশ করেছেন ট্রাম্প। রাত ১০টা ৬ মিনিটের এই টুইটের পরই তীব্র প্রতিক্রিয়া শুরু হয়েছে সর্বমহলে। কারণ, এ ধরনের কোনও নির্দেশ জারি করতে আবারও নিজের সর্বোচ্চ ক্ষমতা প্রয়োগ করতে চান ট্রাম্প। সোয়া চার বছর আগে দায়িত্ব গ্রহণের পর অভিবাসনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি পদক্ষেপ নিয়েছিলেন ট্রাম্প। সীমান্তে দেয়াল নির্মাণ, এসাইলাম প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠোর শর্তারোপ, বেআইনিভাবে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশকারী মা-বাবার কাছে থেকে শিশু-সন্তানদের কেড়ে নেওয়া, দক্ষতা না থাকলে পারিবারিক কোটায়ও ভিসা প্রদান না করার বিভিন্ন নির্দেশ জারি করেছিলেন। এর অধিকাংশই আইনি লড়াইয়ে থমকে গেছে।
সর্বশেষ এই হুমকির পরিপ্রেক্ষিতে সত্যি সত্যি যদি তিনি অভিবাসনের কার্যক্রম স্থগিতের নির্দেশ দেন তাহলে সেটিও বিনা চ্যালেঞ্জে ছেড়ে দেওয়া হবে না বলে অভিবাসীদের অধিকার ও মর্যাদা নিয়ে কর্মরতরা উল্লেখ করেছেন।
করোনাভাইরাসের তাণ্ডবে সমগ্র জনগোষ্ঠী যেখানে ভীত-সন্ত্রস্ত, আর্থিকভাবে নাজুক অবস্থায় প্রায় সকলেই, তেমনি পরিস্থিতিতে অভিবাসন বিরোধী নির্দেশ জারির ঘটনায় সকলেই হতবাক।
উল্লেখ্য, করোনার কারণে ইতোমধ্যেই ইউরোপের অধিকাংশ দেশ, চীন, কানাডা, মেক্সিকো, ইরান এবং দক্ষিণ কোরিয়ার লোকজনের যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণের বিরুদ্ধে নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে ট্রাম্প প্রশাসন। এখন যদি অভিবাসনের সকল কার্যক্রম (পারিবারিক কোটা, বিনিয়োগ, ব্যবসা, ট্যুরিস্ট ইত্যাদি) স্থগিত করা হয় তাহলে যুক্তরাষ্ট্রের ট্যুরিজম সেক্টরের উপর বিরুপ প্রভাব পড়বে বলে মনে করা হচ্ছে। এমন নির্বাহী আদেশ জারির কথা প্রকাশের আগে যুক্তরাষ্ট্রের বন্ধুপ্রতিম রাষ্ট্র এবং হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রণালয়ের সাথে আলোচনা করা হয়েছে কি না সে ব্যাপারে ই-মেইলে হোয়াইট হাউজের বক্তব্য জানতে চেয়েও কোনও জবাব পাওয়া যায়নি রাত ১২টা পর্যন্ত।
প্রসঙ্গত, বিপুলসংখ্যক বাংলাদেশিসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশ থেকে অভিবাসন মর্যাদায় (গ্রিনকার্ডসহ) প্রতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে আসেন ৬ লাখ ৭৫ হাজার বিদেশি। এর বাইরেও রয়েছে সিটিজেনদের স্বামী/স্ত্রী/সন্তানেরা। ট্রাম্পের স্থগিতাদেশ কার্যকর হলে সবকিছু থমকে দাঁড়াবে।
ডেমক্র্যাটিক পার্টির প্রেসিডেন্ট প্রার্থী জো বাইডেন এ ব্যাপারে মন্তব্য করে বলেছেন্, করোনাভাইরাসের প্রকোপ রোধে নিজের ব্যর্থতা আড়াল করতে অভিবাসন বিরোধী পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হচ্ছে। আসলে এমন কিছু করার এখতিয়ার তার নেই। কারণ, করোনার পরিপ্রেক্ষিতে ২ কোটি ২০ লাখ আমেরিকান বেকার হয়ে পড়েছেন। ৪১ হাজারের বেশি আমেরিকান মারা গেলেন। করোনা রোধে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ না করার অসহায় ভিকটিম হচ্ছে নাগরিকেরা।
উল্লেখ্য, করোনার কারণে ১৮ মার্চ থেকেই অভিবাসনের ভিসা, এসাইলামের শুনানি ইত্যাদি কার্যক্রম স্থগিত করা হয়েছে। অনলাইনে কাজ চালানো হচ্ছে বিভিন্ন দেশের কন্স্যুলেটে। সবকিছু রেডি করে রাখা হচ্ছে। করোনা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আসার পর দূতাবাস এবং স্টেট ডিপার্টমেন্ট ও হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টে স্বাভাবিক কাজকর্ম চালু হলেই ইন্টারভিউর তারিখ জানিয়ে দেওয়া হবে।
বিডি প্রতিদিন/কালাম