নিউইয়র্কে ‘হুমায়ূন আহমেদ সম্মেলন ও আন্তর্জাতিক বাংলা বইমেলা’ অনুষ্ঠিত হয়েছে। এই অনুষ্ঠানে বিশ্বখ্যাত জাদুশিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা জুয়েল আইস বলেন, ‘মানুষ তার হাসির সমান সুন্দর, স্বপ্নের সমান বড় আর তার কাজের সমান সফল।’
জ্যামাইকায় মেরি লুইস একাডেমিতে রাইটার্স ক্লাব যুক্তরাষ্ট্রের ব্যবস্থাপনায় এবং শোটাইম মিউজিকের উদ্যোগে অনুষ্ঠিত এই সম্মেলনে জুয়েল আইস আরও বলেন, বিখ্যাত মানুষ দেখলেই সেলফোনে ছবি তোলার পরিবর্তে উপরোক্ত তিনটি অনুশীলন দ্বারা বরং নিজেই বিখ্যাত হওয়ার দিকে আমাদের সবাইকে মনোনিবেশ করতে হবে। এ সম্মেলনের প্রধান আর্কষণ ছিলেন জাদুশিল্পী জুয়েল আইচ। রাত ১১টা পর্যন্ত তার সাথে প্যানেল আলোচনায় ছিলেন ছড়াকার লুৎফর রহমান রিটন, পূরবী বসু ও মাজহারুল ইসলাম।
জুয়েল আইচ তার গুরুগম্ভীর বক্তব্যের ফাঁকে শ্রোতাদের কিছুটা হালকা করার জন্য জাদু দেখাচ্ছিলেন। আলোচনার শুরুতেই হল ভর্তি মানুষকে মনস্তাত্ত্বিক বক্তব্য দিয়ে আবেগ ও সম্মেহিত করে ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যান। এরপর হুমায়ূন আহমেদের সাথে দীর্ঘ স্মৃতিচারণ করেন। এ সময় জাদুকর জুয়েল আইচ হুমায়ূনের ১৪ লাউ ও রশি লাগানো ৭ বোতল ওয়াইনের গল্প শোনান। তুলে ধরলেন ৪২ রকমের মাছ দিয়ে মধ্যাহ্ন ভোজ কিংবা ডিনার করানোর স্মৃতি। একটি দেয়ালের ব্যবধানে তাদের বাস হলেও বেলকুনিতে নানা খুনসুটির গল্প। এমনই নানা স্মৃতিচারণ নিয়ে জুয়েল আইচ ঘণ্টাব্যাপী হুমায়ূনের কথা বলেন।
দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার মধ্যেও অনুষ্ঠিত এ সম্মেলনের প্রধান অতিথি ছিলেন একুশে পদকপ্রাপ্ত সাহিত্যিক বীর মুক্তিযোদ্ধা ড. নুরুন নবী। অতিথি হিসেবে আরও উপস্থিত ছিলেন জ্যোতিপ্রকাশ দত্ত, পূরবী বসু, বেলাল বেগ, জুয়েল আইচ, লুৎফর রহমান রিটন, জিনাত নবী, ফরহাদ হোসেন ও মাজহারুল ইসলাম। অনুষ্ঠানের শুরুতেই সদ্য প্রয়াত কবি আসাদ চৌধুরী স্মরণে ১মিনিট নিরবতা পালন করা হয়।
হলুদ হিমুদের পাশে মেয়েরাও হলুদ শাড়ি পরে সম্মেলনে অংশ নিয়ে সম্মেলনকে পুরো হিমুময় করে তোলে। এমনকি শিশু কিশোররাও হলুদ পোশাকে সেজে মূলমঞ্চে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতায় অংশ নেয়। ফারজিন রাকিবা, ডা. আইনুন নাহার রলি চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা দেখভাল করেন। নেলী ইসলাম, ছন্দা সুলতান ও শাহীন দিলওয়ারের সঞ্চালনায় স্বরচিত কবিতা ও ছড়ার আসর বসে। এবিএম সালেহ উদ্দিন পরিচালনা করেন বই পরিচিতির আসর। ‘লেখক হুমায়ূন আহমেদ: আমার ভালো লাগা ’ পর্বটি পরিচালনা করেন মাকসুদা আহমেদ। সহযোগিতায় ছিলেন নেলী ইসলাম। বেনজির সিকদার রচিত পুঁথি পাঠ করেন মৃদুল আহমেদ।
বক্তব্য রাখেন হোস্ট সংগঠনের সদস্য-সচিব খালেদ সরফুদ্দিন। শিশু কিশোরদের অংশগ্রহণে ‘আমাদের প্রজন্ম আমাদের অহংকার’ সঞ্চালনা করেন আবু সাইদ রতন। হুমায়ূন আহমেদের শিশুতোষ গল্প পাঠ ‘গল্পে গল্পে হুমায়ূন’ পর্বে সাবিনা নিরু শিশুদের সাথে গল্পের আসর জমান। শিশুদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন লুৎফর রহমান রিটন, জুয়েল আইচ, কৌশিক আহমেদ, ড. নুরুন নবী ও পূরবী বসু।
আবৃত্তির অনুষ্ঠান সঞ্চালনা করেন জি এইচ আরজু। ‘গীতিকার হুমায়ুন আহমেদ’ বিষয়ে আলোচনা করেন বেলাল বেগ। সঞ্চালনা করেন শাহ ফিরোজ। মুমু আনসারী ও নাহরীন ইসলামের যুগল কণ্ঠে ‘জাগো বাহে কুনঠে’ সবাইকে আপ্লুৃত করে। ফরিদা ইয়াসমিন ও শামীম আরা বেগমের তত্বাবধানে ও মার্জিয়া স্মৃতির কোরিওগ্রাফিতে বাফার ক্ষুদে শিল্পীদের নৃত্য পরিবেশনা প্রশংসা কুড়িয়েছে।
সম্মেলনের আমেজে সঙ্গীত পরিবেশন করেন চিত্রা রোজারিও, লিয়ানা মানহা, বাঁধন, তাসকিনুল হক, কৃষ্ণা তিথি, সেলিম চৌধুরী ও এস আই টুটুল। যুগলবন্দি করেন শান্তনু সাজ্জাদ ও ডা. আইনুন নাহার রলি। উল্লেখ্য, এটি ছিল নিউইয়র্কে শো টাইম মিউজিকের উদ্যোগে ষষ্ঠ হুমায়ূন সম্মেলন।
বিডিপ্রতিদিন/কবিরুল