২৬ মে, ২০২৪ ১৩:৪৫
ক্যালিফোর্নিয়া ফেডারেল কোর্টের ঐতিহাসিক রুলিং

দরজায় নক করে অভিবাসী গ্রেফতারের এখতিয়ার নেই ইমিগ্রেশন পুলিশের

যুক্তরাষ্ট্র প্রতিনিধি

দরজায় নক করে অভিবাসী গ্রেফতারের এখতিয়ার নেই ইমিগ্রেশন পুলিশের

প্রতীকী ছবি

বাসায় হানা দিয়ে কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের গ্রেফতার করা যাবে না। এটা যুক্তরাষ্ট্রের সংবিধানে প্রদত্ত নাগরিক অধিকারের পরিপন্থী। এছাড়া কাগজপত্রহীনদের গুরুতর অপরাধী হিসেবেও চিহ্নিত করার সুযোগ নেই। তাদেরকে যুক্তরাষ্ট্র থেকে বহিষ্কারের যে আদেশ জারি হয় তা ফৌজদারি বিধি নয়, দেওয়ানি (সিভিল)। দেওয়ানি নির্দেশ কার্যকর করতে বাসায় গিয়ে দরজায় নক করার পর টার্গেটকে গ্রেফতারের এখতিয়ার ইমিগ্রেশন পুলিশের (আইস) থাকতে পারে না। এটা বেআইনি। এমন একটি রুলিং দিয়েছেন সেন্ট্রাল ডিস্ট্রিক্ট অব ক্যালিফোর্নিয়রি ফেডারেল কোর্টের জজ অটিস ডি রাইট। 

গত সপ্তাহে এ রায়কে নিরাপদ জীবনের সন্ধানে যুক্তরাষ্ট্রে পাড়ি জমানো কাগজপত্রহীন অভিবাসীদের জন্যে বিশাল একটি বিজয় বলে মনে করা হচ্ছে। জানা গেছে, প্রেসিডেন্ট বুশের নিয়োজিত এই জজ তার রুলিংয়ে উল্লেখ করেছেন যে, দরজায় কড়া নাড়ার পর টার্গেটকে চিহ্নিত করার এখতিয়ার নেই আইসের লোকজনের। এটি ফেডারেল ক্রিমিনালদের ধরার জন্যে প্রযোজ্য। কিন্তু ইমিগ্রেশনের আইন ভঙ্গকারিদের গুরুতর অপরাধী হিসেবে চিহ্নিত করার কোন সুযোগ নেই। 

রুলিংয়ে আরও উল্লেখ করা হয়েছে, বহিষ্কারের আদেশ জারি হওয়া অভিবাসীকে গ্রেফতারের জন্যে বাসার সীমানায় প্রবেশাধিকারও থাকতে পারে না আইসের সদস্যগণের। এটা সংবিধানের পরিপন্থী। 

উল্লেখ্য, হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের অধীন ইমিগ্রেশন পুলিশ বহুদিন ধরে বহিষ্কারের আদেশ জারি হওয়া অভিবাসীদের গ্রেফতারের জন্যে তাদের বাসার দরজায় নক করে এবং নানা কৌশলে নিশ্চিত হয় যে টার্গেটকে তারা পেয়ে গেছেন। ২০২২ সাল থেকে যত অভিবাসীকে বহিষ্কার করা হয়েছে তার ২৭% কেই বাসা থেকে ‘নক অ্যান্ড টক’ কৌশলে গ্রেফতার করা হয় বলে সরকারি সূত্রে জানা গেছে। এই প্রক্রিয়াকে চ্যালেঞ্জ করে উপরোক্ত ফেডারেল কোর্টে আবেদন জানানো হয়েছিল বেশ কয়েকটি মানবাধিকার সংস্থার পক্ষ থেকে। যুক্তরাষ্ট্র সুপ্রিম কোর্ট ইতিপূর্বের ব্যাখায় উল্লেখ করেছে যে, গুরুতর অপরাধে অভিযুক্ত (ফৌজদারি মামলায়) দেরকে গ্রেফতারের জন্যে ‘নক অ্যান্ড টক’ পলিসি অবলম্বনের অধিকার দিয়েছে সংবিধান। তবে আইসকে নয়। কারণ, অভিবাসনের আইন লংঘনের ঘটনাটিকে সিভিল অপরাধের পর্যায়ে বিবেচনা করা হয়ে আসছে। ক্রিমিনাল হিসেবে গ্রেফতারি পরোয়ানা ব্যতিত পুলিশ কারও বাড়ি/সম্পত্তির সীমানায় ঢুকতে পারে না, গ্রেফতার দূরের কথা। অথচ দীর্ঘদিন থেকেই আইসের সদস্যরা বেআইনি এ তৎপরতায় লিপ্ত ছিল। 

আদালতে আবেদন জানানো সংস্থার অন্যতম ‘দ্য কোয়ালিশন ফর হিউম্যান রাইটস’র এটর্নি জিয়োভ্যানি সারম্যান গঞ্জালেজ এ রুলিংকে আইনগত বিজয় বলে উল্লেখ করেছেন। ক্যালিফোর্নিয়ার দক্ষিণাঞ্চল তথা লস এঞ্জেলেস সিটি, ওরেঞ্জ, স্যান বারনারডিনো, রিভারসাইড, ভেঞ্চুরা, সান্টা বারবারা এবং স্যান লুইস ওবিসপোর জন্যে এ নির্দেশ প্রযোজ্য হলেও ক্রমান্বয়ে তার বিস্তৃতি ঘটবে সারা আমেরিকায়। 

প্রসঙ্গত, প্রেসিডেন্ট বাইডেনের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি মন্ত্রী আলেজান্দ্রো মেয়রকাস ইতিপূর্বে এক সার্কুলারে আইসকে নির্দেশ দিয়েছেন যে, স্কুল, কমিউনিটি সেন্টার, ক্লিনিক, বাস স্টপ থেকে কোন অভিবাসীকে গ্রেফতার করা যাবে না। লস এঞ্জেলেস, নিউইয়র্ক, ম্যাসেচুসেট্স, কানেকটিকাট, কলরাডো, ইলিনয়, নিউজার্সি, নিউ মেক্সিকো, ওরেগণ, ইউটাহ, ভারমন্ট এবং ওয়াশিংটন স্টেটের এলাকা স্যাঙ্কচুয়ারি সিটির আওতায়, সে সব স্থান থেকে কোন অভিবাসীকে গ্রেফতারের এখতিয়ার আইসের নেই। 

হোমল্যান্ড সিকিউরিটি ডিপার্টমেন্টের তথ্য অনুযায়ী গত অর্থ বছর আইস কর্তৃক গ্রেফতারের পর ১৪২৫৮০ অভিবাসীকে নিজ নিজ দেশে পাঠিয়ে দেয়া হয়। এর বাইরে আরও ৬২৫৪৫ জনকে বহিষ্কার করা হয়েছে করোনাকালীন ট্রাম্পের জারিকৃত ‘টাইটেল৪২’ অনুযায়ী। ১৭০ দেশের নাগরিক ছিলেন তারা।

 

বিডি প্রতিদিন/ ওয়াসিফ

এই বিভাগের আরও খবর

সর্বশেষ খবর