১২ মে, ২০২০ ১০:১৯

শ্রমিকের প্রতি সদয় হওয়ার শিক্ষা দেয় রমজান

যুবায়ের আহমাদ

শ্রমিকের প্রতি সদয় হওয়ার শিক্ষা দেয় রমজান

রোজা একটি দৈহিক ইবাদত। রোজা ফরজ হওয়ার জন্য ইমানের পাশাপাশি কেবল দৈহিক যোগ্যতারই প্রয়োজন হয়। সম্পদ থাকা-না থাকার কোনো প্রশ্ন নেই। একজন খেটে খাওয়া মানুষের ওপর যেমন রোজা ফরজ, তেমন একজন বিত্তশালীর ওপরও রোজা ফরজ। এতে ধনী-গরিব সমান। নিজের ঘরে অনেক খাবার মজুদ থাকার পরও একজন বিত্তশালীকে রোজা রাখতে হয়। তার মানে বাধ্যতামূলকভাবে তাকে ক্ষুধার্ত থেকে অভাবী মানুষ খাবার না খেয়ে কী কষ্ট করে তা বাস্তবে অনুধাবনের সুযোগ করে দেয় রমজান। এভাবে রোজার অন্তর্নিহিত সারমর্মের একটি অংশ হলো অভাবী মানুষের ক্ষুধার কষ্ট অনুধাবন করা। এ কষ্ট অনুধাবন করে শ্রমজীবী মানুষের প্রতি যেন আমরা সদয় হই, সে নির্দেশ দিয়েছেন রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম। রমজানে শ্রমিকের কাজের বোঝা হালকা করার নির্দেশ দিয়েছেন তিনি। শুধু তাই নয়, রমজানে শ্রমিকের বোঝা হালকা করে দেওয়াকে আল্লাহর পক্ষ থেকে ক্ষমাপ্রাপ্তির অসিলা হিসেবেও উল্লেখ করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘এ মাসে (রমজানে) যারা শ্রমজীবী মানুষের প্রতি সদয় ব্যবহার করে তাদের কাজের বোঝা হালকা করে দেয়, আল্লাহ দয়াপরবশ হয়ে তাদের গুনাহ ক্ষমা করে দিয়ে তাদের জাহান্নামের আগুন থেকে রক্ষা করেন।’ ইবনে খুজাইমা।

রমজান শ্রমিকের প্রতি বিশেষভাবে সদয় হওয়ার মাস। তাদের কাজের বোঝা হালকা করে দেওয়ার মাস। তাদের প্রাপ্য মজুরির সঙ্গে একটু বাড়িয়ে দিয়ে তাদের প্রতি ইহসান করার মাস। এ শিক্ষাই রমজান আমাদের দেয়। তাদের কাজের বোঝা হালকা করে দেওয়া মানে কিন্তু তাদের অন্যায়ভাবে ছাঁটাই করে তাদের মজুরি পাওয়ার পথ বন্ধ করে দেওয়া নয়, বরং তাদের কাজের চাপ, কর্মঘণ্টা একটু কমিয়ে দিয়ে তাদের পূর্ণ মজুরি প্রদান। রমজান পাস পেরিয়েই হাজির হয় ঈদুল ফিতর। মুসলমানরা রমজানেই ঈদুল ফিতরের প্রস্তুতি নেয়। অত্যন্ত দুঃখজনক হলো, ঈদের প্রস্তুতি নিতে সবাই যখন কেনাকাটায় ব্যস্ত থাকে তখনই আমাদের দেশে কিছু পোশাক কারখানার শ্রমিকসহ বিভিন্ন খাতের শ্রমজীবীকে ন্যায্য পাওনাটুকু পাওয়ার জন্য আন্দোলন করতে হয়। বিষয়টি কতটা অমানবিক! শ্রমিকের কাছ থেকে কাজ আদায় করে নিয়ে তার প্রাপ্য মজুরি নিয়ে টালবাহানা করা ইসলামের দৃষ্টিতে মারাত্মক অন্যায়। এসব মালিক হাশরের ময়দানে আল্লাহর বিচারের কাঠগড়ায় দাঁড়াবেন নিশ্চিতভাবে। কোনো কৌশল তাদের বাঁচাতে পারবে না। কারণ হাশরের ময়দানে আল্লাহ নিজে তাদের প্রতিপক্ষ হয়ে দাঁড়াবেন। রসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম বলেন, ‘আল্লাহ বলেছেন আমি কিয়ামতের দিন তিন শ্রেণির মানুষের প্রতিপক্ষ। আর আমি যার প্রতিপক্ষ তাকে পরাজিত করবই। তার মধ্যে এক শ্রেণি হলো যে কোনো শ্রমিক নিয়োগ করে অতঃপর তার থেকে পুরো কাজ আদায় করে নেয় কিন্তু তার পারিশ্রমিক প্রদান করে না।’ বুখারি।

লেখক : খতিব, বাইতুশ শফীক মসজিদ ও পরিচালক, বাইতুল হিকমাহ একাডেমি, গাজীপুর।

সর্বশেষ খবর