সোমবার, ৬ ফেব্রুয়ারি, ২০১৭ ০০:০০ টা

নিরপেক্ষতার প্রকারভেদ

ইকবাল খন্দকার

নিরপেক্ষতার প্রকারভেদ

কার্টুন : রবিউল ইসলাম সুমন আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ

এক প্রতিবেশী বললেন, নিরপেক্ষ অবশ্য আছে। তবে ‘নিরপেক্ষ’ খুঁজে বের করার জন্য যেসব পক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়ে থাকে, তারা যদি একটু ফরমালিনমুক্ত হন, তাহলে আর কোনো সমস্যা নেই...

 

আমার এক ভাগ্নেকে একবার জিজ্ঞেস করেছিলাম, বল তো পক্ষ কয় প্রকার? ভাগ্নে কিছুক্ষণ মাথা চুলকালো। তারপর ফট করে বলে বসল, পক্ষ তিন প্রকার। শুক্ল পক্ষ, কৃষ্ণ পক্ষ এবং কর্তৃপক্ষ। ভাগের কথা শুনে সেদিন খুব হাসলেও এখন মনে হচ্ছে তার কথা ঠিক। সত্যি সত্যি কর্তৃপক্ষ নামে বিশেষ একটা পক্ষ আছে। যে পক্ষটা সবচেয়ে বেশি শক্তিশালী। যত কাজ হয়, সব এই পক্ষের আন্ডারেই হয়। তবে আজকাল নিরপেক্ষতার বিষয়টা নিয়ে খুব কথা হচ্ছে। সার্চ কমিটি, এই কমিটি, সেই কমিটি সব জায়গায় নিরপেক্ষ লোক নিয়োগের একটা তত্পরতা আমরা লক্ষ করছি। কিন্তু হাস্যকর হলেও সত্য যে, এই নিরপেক্ষ লোক নিয়োগ দিতে গিয়ে সবাই কেবল নিজেদের ‘আপনা-লোক’র কথাই বলছে। নিজেদের লোক যদি দলে দলে ঢোকানো হয়, তাহলে বিষয়টা নিরপেক্ষ কীভাবে থাকে, আমাদের বোধগম্য নয়। হয়তো যারা এই কাজগুলো করছে, তাদেরও বোধগম্য নয়। অবশ্য এটাও ঠিক, নিরপেক্ষ শব্দটাকেও কেউ কেউ কোনো একটা পক্ষে নিয়ে যাওয়ার চেষ্টা সবসময়ই করে। একটা ঘটনা না বললেই নয়। একবার আমাদের গ্রামের এক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে নির্বাচন হলো। অভিভাবকদের নির্বাচন। একজন বলল, আমি নিরপেক্ষ। আমাকে সবাই এই নির্বাচনের প্রধান বানাতে পারেন। এলাকায় আর কোনো যোগ্য লোক পাওয়া না যাওয়ায় সবাই তার ওপর বিশ্বাস করল এবং তাকে প্রধান বানাল।

 

যেদিন নির্বাচন হলো, সেদিন এই স্বঘোষিত ‘নিরপেক্ষ’ ব্যক্তিটি দেখিয়ে দিল তার আসল খেইল। দেখা গেল নির্দিষ্ট এক প্রার্থীর হয়ে তিনি কাজ করছেন। এলাকার লোকজন তাকে পাকড়াও করল। সমস্বরে জিজ্ঞেস করল, তুমি না তখন জোর গলায় বলছিলা তুমি নাকি নিরপেক্ষ? এখন তুমি চেয়ারম্যানের ভাতিজার পক্ষ লইয়া কাজ করলা ক্যান? লোকটা বলল, আপনারা আমার কথা বুঝতে ভুল করেছেন। আমি নিজেকে নিরপেক্ষ দাবি করিনি। দাবি করেছিলাম ‘নিরুপক্ষ’। তাই আমি চেয়ারম্যানের ভাতিজা নিরু মিয়ার পক্ষ নিয়ে কাজ করেছি। আপনারা আমার কথা বুঝতে পারেননি, এই দোষ কি আমার?

 

না, এই ধরনের চালাকি যে করে, দোষ কিন্তু তার না। দোষ তাদের, যারা চালাকিটা বুঝতে বা ধরতে পারে না। তার মানে ঘুরিয়ে ফিরিয়ে দোষ কিন্তু পাবলিকেরই। এখন প্রশ্ন হচ্ছে, তাহলে নিরপেক্ষ বলতে কেউ নেই? এই প্রশ্নের জবাবে আমার এক প্রতিবেশী বললেন, নিরপেক্ষ অবশ্য আছে। তবে ‘নিরপেক্ষ’ খুঁজে বের করার জন্য যেসব পক্ষকে দায়িত্ব দেওয়া হয়ে থাকে, তারা যদি একটু ফরমালিনমুক্ত হন, তাহলে আর কোনো সমস্যা নেই। কিন্তু বিপদ হচ্ছে, সর্বত্র ফরমালিনে ভরে গেছে। ফরমালিন বলতে কবি এখানে কী বুঝিয়েছেন, সেটা আপনার কাছে যেমন পরিষ্কার, আমাদের কাছেও তেমন। সেই বানরের গল্প মনে আছে? যার কাছে পিঠা নিয়ে যাওয়া হয়েছিল সমান দুভাগে বিভক্ত করে দেওয়ার জন্য। কারণ বানরকে নিরপেক্ষ মনে করা হয়েছিল। অথচ পরে দেখা গেল পিঠার এই টুকরো থেকে এক কামড়, ওই টুকরো থেকে এক কামড়— এভাবে খেতে খেতে তথাকথিত নিরপেক্ষ বানর পুরো পিঠাই নিজের পেটে পুরে ফেলেছে। অতএব শেষ কথা এটাই, পক্ষ-বিপক্ষ থেকে তো সাবধান থাকতেই হবে, তথাকথিত ‘নিরপেক্ষ’ থেকেও সাবধান থাকতে হবে। কারণ, সাবধানের মার নেই।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর