শিরোনাম
সোমবার, ২৯ জুলাই, ২০১৯ ০০:০০ টা

মশা কাহিনি

তানভীর আহমেদ

মশা কাহিনি

মশা নিয়ে আমাদের সময়টা খারাপ যাচ্ছে। এতটাই খারাপ যাচ্ছে, এখন মশার গান শোনায় তেমন আপত্তি নেই। আপত্তি কামড়ালে। এ পরিস্থিতির ভালো উদাহরণ হতে পারে ‘ছিনতাইকারী ও অনিক’ শিরোনামের একটি গল্প। গল্পটা চিকনে বলছি- একরাতে অনিক দুই কেজি আম কিনে রিকশায় করে বাসায় ফিরছিল। রিকশাওয়ালার বাড়ি চাঁপাইনবাবগঞ্জ। নবাবি ভাবসাব তার। রিকশায় ওঠার পর অনিক আর রিকশাওয়ালার কথোপকথন চলছে - রিকশাওয়ালা : মামা, আপনি কি সিঙ্গেল না বিয়া করছেন?

অনিক মুখ ভোঁতা করে বলল, সিঙ্গেল। উত্তর দিয়েই তার মনে হলো বাংলাদেশি ওপেনিং ব্যাটসম্যানের মতো সহজ ক্যাচ তুলে দিয়েছে। হলোও তাই। রিকশাওয়ালা বিয়ের চৌদ্দ গোষ্ঠী উদ্ধার করতে শুরু করল। পুরো কথোপকথন শোনার ধৈর্য ও সময়  নেই, তাই শেষ কথাটা বলছি। তিনি অনিককে বললেন, বিয়ে করা মানে, ধরেন, আপনি জীবনে হতাশা, অভিমান, ক্ষোভ নিয়ে ঠিক করলেন গলায় দড়ি দিয়ে আত্মহত্যা করবেন। এবার বাজারে গেলেন। দোকানদারকে বললেন, ভাই, আপনার দোকানের সবচেয়ে  সস্তা ও দুর্বল দড়ি কোনটা? যেটা সহজেই ছিঁড়ে যাবে, ওইটা দেন। দোকানদার সেটাই দিল। আপনি  সেই দড়ি কিনে আনলেন। সেটায় ফাঁস দিয়ে গলায় পরলেন। তারপর ক্ষেতে গেলেন। এবং পুঁইশাক গাছের মতো লকলকে, নরম কা- দেখে কচু গাছ খুঁজে বের করলেন। এবং কচু গাছে ঝুলে পড়লেন। আর আপনার কপাল এতটাই খারাপ যে কচু গাছেই ফাঁস লেগে মরে গেলেন।

রিকশাওয়ালার কাছে বিয়ে নিয়ে অত্যন্ত দার্শনিক উদাহরণ শুনে অনিক তখনো হজম করে উঠতে পারেনি। হঠাৎ একটা ছেলে গলির ভিতর থেকে উদয় হয়েই রিকশা আটকে দাঁড়াল। তার হাতে আম কাঁটার চাকু। চাকু দেখেই অনিকের মনে হলো, আম কেটে খাওয়া যাক! দুর্ভাগ্য তার। ছেলেটা অনিকের আমের ব্যাগে নজর না দিয়ে বলল, যা আছে বাইর কর! খুবই সাধারণ একটা ডায়ালগ। অনিক বলল, ছিনতাই করতে এসে তুই-তুকারি করছিস ক্যান? রিকশাওয়ালা বলল, মামা, আপনিও তো তুই-তুকারি করতেছেন? তাই তো! অনিক ছিনতাইকারীকে বলল, ওহ, সরি। তুই করে বলছেন কেন? ছিনতাইকারী ছেলেটা খুবই বেয়াদব। সে হুট করে অনিককে থাপ্পড় বসিয়ে বলল, যা আছে দে! অনিকের কাছে দুই কেজি আম ছিল, সেটা দিয়ে দিল। ছিনতাইকারী অনিকের পুরো বডি চেক করল। তার মনে হলো, এ ছেলেটা কোনো প্রতিষ্ঠানের গেটে সিকিউরিটি গার্ডের চাকরি পেলে লাইফে খুব শাইন করবে। পুরো বডি চেক করে সে বলল, নেক্সট টাইম টাকা-পয়সা ছাড়া রাতে বের হবেন না। রাতে কখন কোন বিপদে পড়েন... টাকা-পয়সার দরকার আছে। তারপর ছিনতাইকারী চলে গেল। সে চলে যেতেই রিকশাওয়ালা অনিককে বলল, মামা, আপনি যে রিকশা ভাড়া ছাড়াই রিকশায় উঠছেনÑ আপনার কলিজা আছে। অনিক বলল, মামা  চলেন, বাসায় গিয়ে ভাড়া ম্যানেজ করে দেব।

গল্পটা শেষ। এ গল্প থেকে মশার গানে ফেরত আসা যাক। এ দুইয়ের মিলটা কী? আসলে তেমন কোনো মিল নেই। মিল বলতে একটাই- আমাদের কলিজা আছে! আমাদের অবস্থা এমনই, মশা গান শোনাক, তবু যেন না কামড়ায়। কারণ আমাদের কলিজা ছাড়া আর কিছু নেই। থাকলে তো আমরা সবাই দেখতাম এতদিনে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর