সোমবার, ৫ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

ঘরেও ব্যস্ততা

লকডাউন শুরুর পর যেহেতু বাসা ফাঁকা হওয়ার সুযোগ নেই, এ জন্য ইঁদুর-তেলাপোকা তান্ডব চালানোর চান্স পায় না। মোটকথা, কোনো ধরনের ওষুধ বা কীটনাশক ছাড়াই বাসা এখন আমাদের দখলে...

ইকবাল খন্দকার

ঘরেও ব্যস্ততা

একটা প্রয়োজনে আমার এক ছোট ভাইকে ফোন করলাম। মূল প্রসঙ্গে যাওয়ার আগে তাকে জিজ্ঞাসা করলাম লকডাউনে ঘরে বসে থাকতে তার কেমন লাগছে। ছোট ভাই বলল, বেশ ভালো, বেশ ভালো। সে কথাটা এমনভাবে বলল, যেন তার খুশি আর ধরে না। আমি বললাম, মানুষ ঘরে থাকলে বিরক্ত হয়, তুই তো দেখছি মহাখুশি। কারণটা কী বল তো! ছোট ভাই বলল, ঘরে থাকলে যদি খরচ কমে, তাহলে খুশি হব না? আমি বললাম, তা অবশ্য ঠিক বলেছিস। আসলে বাইরে বের হলেই খরচ। রিকশা ভাড়ার পিছনে টাকা যায়, বন্ধু-বান্ধব নিয়ে চা খেতে বসলে টাকা যায়। অথচ বাসায় থাকলে এ টাকাটা হাতেই থেকে যায়। ছোট ভাই বলল, ভাই, আমি যা বলেছি, আপনি সেটা বুঝতে পারেননি। ঘরে থাকলে খরচ কমে অন্যভাবে। কীভাবে! বলছি, আমার বাসা ইঁদুর-তেলাপোকার আখড়া। ফাঁকা বাসায় রীতিমতো তান্ডব চালায়। সামনে যা পায়, তাই নষ্ট করে ফেলে। প্রতি মাসে ইঁদুরের ওষুধ কিনতে কিনতে ফতুর হওয়ার দশা। কিন্তু লকডাউন শুরু হওয়ার পর যেহেতু বাসা ফাঁকা হওয়ার সুযোগ পায় না, সারা দিনই আমি আর আমার বউ বাসায় থাকি, ক্ষেত্রবিশেষে ঝগড়াঝাঁটি করে পুরো বাসা মাথায় তুলে রাখি, এ জন্য ইঁদুর-তেলাপোকা তান্ডব চালানোর চান্স পায় না। মোটকথা, ওষুধ ছাড়াই বাসা এখন আমাদের দখলে। আরও কিছুদিন লকডাউনে চলতে থাকলে আর আমরা এভাবে চব্বিশ ঘণ্টা বাসায় থাকলে আশা করা যায় ইঁদুর-তেলাপোকা আমাদের বাসাটা ‘বসবাসের অযোগ্য’ ঘোষণা করে অন্য কোনো বাসায় চলে যাবে। আমার এক বন্ধু বলল, ভাগ্য ভালো, লকডাউনটা আজ থেকে বিশ বছর আগে হয়নি। যদি তাই হতো, তাহলে কীভাবে সময় কাটাতাম, চিন্তা করে কূল পাই না। আমি বললাম, বিশ বছর আগে আর বিশ বছর পরে বলে কথা নেই, লকডাউন সব সময়ই কষ্টের। বন্ধু বলল, আরে না, এখন কোনো কষ্টেরই না। কারণ, এখন মোবাইল আছে। আজ থেকে বিশ বছর আগে যখন আমার কাছে মোবাইল ছিল না, তখন লকডাউন হলে সোজা দম বন্ধ হয়ে মারা যেতাম। আমার আরেক বন্ধুর বক্তব্যও মোটামুটি একই রকম। তারও কথা, এখন ফেসবুক আছে বলে লকডাউনটাকে লকডাউনের মতো লাগে না। সময়টা দারুণ কেটে যায়। এবার পাশ থেকে একজন বলে উঠলেন, কথা ঠিক, আবার ঠিকও না। কেন ঠিক না- বলছি, আমি আছি গৃহবন্দী হয়ে। অথচ ফ্রেন্ডলিস্টের কেউ একজন পুরনো ফাইল ঘেঁটে ভ্রমণের ছবি দিল। যে ছবি দেখে আমার আর ঘরে থাকার ইচ্ছা হলো না, ইচ্ছা হলো ভ্রমণে চলে যাই, কক্সবাজার বা কুয়াকাটা। ফেসবুক না থাকলে কিন্তু এই কুন্ডইচ্ছাটা হতো না। ঠিক কি না? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, লকডাউনে নাকি দাম্পত্য কলহ বেড়েছে। কিন্তু আমি এ ব্যাপারে সহমত নই। আমি মনে করি লকডাউনে দাম্পত্য কলহ কমেছে। আরে ভাই, সবচেয়ে বেশি দাম্পত্য কলহ কী নিয়ে হয়? মশারি টানানো নিয়ে। লকডাউনে তো মশারি টানানোর ঝামেলাই নেই। তাহলে দাম্পত্য কলহটা হবে কী নিয়ে? প্রতিবেশীর কথায় আমি অবাক হয়ে বললাম, লকডাউনে মশারি টানানোর ঝামেলা নেই মানে? কী বলছেন আপনি এসব? প্রতিবেশী বললেন, আমি ঠিকই বলছি। এখন মানুষ সারা দিনই ঘুমায়। এ জন্য রোজ রোজ মশারি টানাতে হয় না। একবার টানালেই চলে যায় তিন-চার দিন। অতএব তিন-চার দিন কোনো কলহ নেই। ভালো না? আমার এক বড় ভাই বললেন, ইতিপূর্বে যতবার লকডাউন দিয়েছে, আমি নাখোশ হয়েছি। কিন্তু এবারের লকডাউনে আমি সেরকম খুশি। আশা করব, আগামীতে লকডাউন দিলে এভাবে দিন-তারিখ হিসাব করে যেন দেওয়া যায়। মাসের ১ থেকে ৭ তারিখ, বাহ কী চমৎকার টাইমিং! বড় ভাইয়ের কথা শুনে আমি তার দিকে তাজ্জব হয়ে তাকাতেই তিনি বললেন, আমার কথা বুঝতে পারছিস না, এই তো? বোঝাচ্ছি। আমার বাড়িওয়ালা একটু দূরে থাকে। অন্য এলাকায়। কিন্তু মাসের ৩ তারিখে ঠিকই চলে আসে ভাড়ার জন্য। এবার মাসের ১ থেকে ৭ তারিখ পর্যন্ত লকডাউন হওয়ায়, এখনো আসতে পারেনি।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর