সোমবার, ২৬ জুলাই, ২০২১ ০০:০০ টা

২৪ ঘণ্টা মোবাইলে

ইকবাল খন্দকার

২৪ ঘণ্টা মোবাইলে

ডাটা বলতে শুধু ডাঁটাশাককে বুঝায় না

আমার এক বন্ধু বলল, একটা কথা কিন্তু মানতেই হবে, করোনা এখন না এসে যদি আরও ১০ বছর আগে আসত, তাহলে খবরই ছিল। কেন জানিস? আমি বললাম, জানব না কেন? অবশ্যই জানি। কারণ, তখন মোবাইল ছিল না। মানুষ টাইম পাস করতে পারত না। বন্ধু বলল, বেআক্কেলের মতো কথা বলছিস কেন? এই দেশে মোবাইল কি ১০ বছর আগে এসেছে? কম করে ২০ বছর তো হবেই। আমি এবার দাঁতে জিভ কাটলাম। বন্ধু বলল, শোন, ১০ বছর আগেও এ দেশে মোবাইল ছিল। তবে স্মার্টফোন ছিল না। তখন যেসব মোবাইল সেট ছিল, সেগুলো এত শক্ত ছিল যে, এসব সেট দিয়ে ঢিল ছুড়ে আম পেড়ে খাওয়া যেত। আমি বললাম, কথা সত্য। কিন্তু কী বলতে চাচ্ছিস, ঠিক বুঝতে পারছি না। একটু বুঝিয়ে বলবি? বন্ধু বলল, আজ থেকে ১০ বছর আগে যখন মানুষের হাতে স্মার্টফোনের মতো নাজুক ফোন ছিল না, বরং মোবাইল দিয়ে ঢিল ছুড়ে আম পেড়ে খাওয়ার মতো শক্ত শক্ত সেট ছিল। তখন যদি দেশে করোনা আসত, তাহলে সারা দিন ঘরে শুয়ে-বসে থাকার অপরাধে গোবেচারা অনেক স্বামীকেই আহত হতে হতো। কারণ, স্বামীদের আরাম দেখে সহ্য করতে না পেরে বউরা এখন এটা-সেটা ছুড়ে মারতে চাইলেও হাতের কাছে উপযুক্ত উপকরণ পায় না বলে ছুড়তে পারে না। কিন্তু ওই মজবুত সেটগুলো থাকলে? কী হতো চিন্তা কর। আমি চিন্তা করতে পারলাম না। কারণ, বেশি ভয় পেলে মানুষ চিন্তা করার ক্ষমতা হারিয়ে ফেলে। তো আমি যখন ভয় কাটানোর চেষ্টা করছিলাম। এমন সময় আমার এক বড় ভাইয়ের ফোন। বললেন বাসায় নাকি তুলকালাম অবস্থা। আমি জানতে চাইলাম কী হয়েছে? বড় ভাই বললেন, তুই তো জানিস, তোর ভাবির সঙ্গে আমার বয়সের বড় একটা ফারাক আছে। তো এই বয়সের ফারাকের কারণে হোক আর মন-মানসিকতার কারণেই হোক, তার তুলনায় আমি রীতিমতো ‘খ্যাত’। আমি বললাম, আপনি যে খ্যাত, সেটা আমি কেন, এলাকার সবাই জানে। অতএব, এটা নতুন করে জানার কিছু নেই। বরং নতুন করে কী হয়েছে, সেটা বলেন। বড় ভাই বললেন, তোর ভাবি আমাকে বলল একটা তরকারি কিনে আনার জন্য। আমি আনলাম। আর সেটা দেখে সে এতটাই ক্ষেপে গেল যে, রীতিমতো ভাঙচুর শুরু করে দিল। আমি বললাম, তরকারির কথা বলার পর তরকারি এনেছেন, এর জন্য তো ভাঙচুর হতে পারে না। নিশ্চয়ই অন্য কোনো ঘটনা আছে। বড় ভাই বললেন, আসলে হয়েছে কী, সে

বলেছিল ডাটার কথা। আমি ভেবেছিলাম ডাঁটা তরকারি বুঝি। আনলামও। এখন শুনি কিসের নাকি মোবাইলের ডাটা। আচ্ছা, এই ডাটা কী জিনিস? আমি বললাম, এই ডাটা এমন ডাটা, ভাত দিয়ে মেখে খেলে চলে না। মোবাইলের সিম দিয়ে মেখে খেতে হয়। বোঝা গেল? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, বাচ্চারা সারা দিন মোবাইলে গেম খেলে। এভাবে আর কত? আমি বললাম, এক কাজ করতে পারেন। ওদের ছাদে নিয়ে যেতে পারেন। ছাদে একটু খেলাধুলা করলে মোবাইলে গেম খেলার আসক্তি কমবে। প্রতিবেশী বললেন, ছাদে নিয়ে গেলে আরেক বিপদ হবে। কারণ, ছা৭৮৭দের দরজার মুখে বসে বাড়িওয়ালা মোবাইলে ফেসবুকিং করে। বউয়ের যন্ত্রণায় ঘরে বসে ফেসবুকিং করতে পারে না তো! আমার আরেক প্রতিবেশী বললেন, ঘরে বসে মোবাইল দেখার মধ্যেও আজকাল আর শান্তি নাইরে ভাই! কারণ, মোবাইল দেখতে দেখতে এমন কিছু করার ইচ্ছা হয়, যা করতে গেলে পুলিশের হাতে ধোলাই খাওয়ার সম্ভাবনা আছে। আমি বললাম, কী করতে ইচ্ছা হয় বলেন তো! প্রতিবেশী বললেন, না মানে, মোবাইলে একটা জিনিস আছে না? ইনস্টাগ্রাম? আমি বললাম, জি, আছে। তো? প্রতিবেশী বললেন, আসলে ‘ইনস্টাগ্রাম’ দেখলেই ‘গ্রাম’-এর কথা মনে হয়। খালি গ্রামে যাইতে মন চায়। কিন্তু এখন লকডাউনে গ্রামে রওনা হলে তো পথে ধরা। আমি তাকে থামিয়ে দিয়ে বললাম, তাও ভালো, আপনি টিকটক দেখেন না।  আমার পরিচিত একজন তো টিকটক দেখলেই চারপাশে তাকাতে থাকে। কারণ, টিকটক শুনলেই তার নাকি টিকটিকির কথা মনে হয়।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর