সোমবার, ২৭ সেপ্টেম্বর, ২০২১ ০০:০০ টা

চাঁদের জমি

ইকবাল খন্দকার

চাঁদের জমি

আমার এক বন্ধু বলল, যা হয় ভালোর জন্যই হয়। অথচ কী মেজাজটাই না খারাপ হতো ছোটবেলায়। তখন যদি চাঁদ ওই বেয়াদবিটা না করত, তাহলে আজকে উপায় ছিল না। কাতলা মাছের মতো অবস্থা হয়ে যেত। বন্ধুর কথা শুনে আমি কিছুক্ষণ ঝিম ধরে বসে থাকলাম। বোঝার চেষ্টা করলাম সে কী বলছে বা বলতে চাচ্ছে। কিন্তু না, কিছুই বুঝতে পারলাম না। তাই তাকে অনুরোধ করলাম বুঝিয়ে বলার জন্য। বন্ধু আমার অনুরোধ রাখল। বলল, ছোটবেলায় আমাদের মায়েরা কী বলত? বলত, আয় আয় চাঁদ মামা। কিন্তু চাঁদ আসত না। আমার তো খুব মেজাজ খারাপ হতো। কারণ, একজন মুরুব্বির কথা অগ্রাহ্য করা খুবই বেয়াদবি। কিন্তু এখন যেভাবে চাঁদের জমি কেনাবেচা হচ্ছে, তাতে মনে হচ্ছে, ‘আয় আয়’ বলার পরও চাঁদ যে আসেনি, এটা খুব ভালো একটা কাজ হয়েছে। যদি আসত, তাহলে আস্ত চাঁদটাকেই মানুষ বিক্রি করে ফেলার পাঁয়তারা করত। তবে বাজারে বড় মাছ এলে যেমন মানুষ একা কিনতে পারে না, ভাগ-বাটোয়ারা করে কেনে, চাঁদটাও হয়তো একা কিনতে পারত না। ওই যে কাতলা মাছের কথা বললাম, চাঁদটাকে কাতলা মাছের মতো করে কেটে চটের ব্যাগে একেকজন বাড়ি নিয়ে যেত।

আমার এক ছোটভাই বলল, যখন আমি কেনাবেচার খবরটা জানতে পারলাম, তখন বিশ্বাস করতে পারছিলাম না। যাচাই করার জন্য এক দৌড়ে গেলাম বাড়িওয়ালার কাছে। জিজ্ঞেস করলাম, কেন তিনি এই কাজ করছেন। খুব টাকা-পয়সার অভাবে পড়ে গেছেন কি না। বাড়িওয়ালা আমার কথা ঠিক বুঝতে পারল বলে মনে হলো না। তাই তাকে আমি ভালোভাবে বুঝিয়ে বললাম। এবার সে দিল আমাকে রামঝাড়ি। বলল, আরে গর্দভ, তুমি যা শুনেছ, ভুল শুনেছ। চাঁদে জমি বিক্রি হচ্ছে। বুঝেছ? চাঁদে, চাঁদে। অথচ তুমি ধরে নিয়েছ ‘ছাদে’। আর আমাকে জিজ্ঞেস করছ ছাদ কেন আমি বিক্রি করছি, টাকা-পয়সার অভাবে পড়েছি কি না। গাধা কোথাকার!

আমার এক প্রতিবেশী বললেন, চাঁদে জমি কেনার ইচ্ছা আমারও আছে। তবে সেটা আপাতত মাটিচাপা দিয়েছি। বললাম, কেন? ভাবি বাধা দিচ্ছে নাকি? সে বলল, বাধা আসলে তলে তলে আমিই দিচ্ছি। আপনার ভাবি আলটিমেটাম দিয়েছে যে, চাঁদে জমি কিনে দিতে হবে। ভেবে দেখলাম চাঁদে জমি কিনলে সেখানে বাড়ি বানাব। তখন আপনার ভাবি রাগ করে আর মুগদায় তার বাপের যাবে না। সোজা চলে যাবে চাঁদে। ওখান থেকে তাকে আনা-নেওয়া তো একটু ঝামেলা হয়ে যায়।

আমার এক বড়ভাই বললেন, তোর হবু ভাবি মানে আমার নতুন প্রেমিকাকে নিয়ে আর পারছি না। অন্য অনেকের মতো সেও বায়না ধরেছে চাঁদে জমি কিনে দেওয়ার জন্য। এইটা ঠিক আছে। কিন্তু তার যে দেখেশুনে কেনার অভ্যাস, এই অভ্যাস মতো তো কাজ করা যাচ্ছে না। সে চাচ্ছে চাঁদে জমি কেনার আগে ঘুরবে, দেখবে, বার্গার টার্গার খাবে। এখন চাঁদে বার্গার কোথায় পাই। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, সে যে দেখতে যাবে, রিকশা তো যাচ্ছে না। সিএনজিকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, রাজি হয়নি। কী একটা বিপদ বলত দেখি!  আমার এক বন্ধু বলল, আমি এখনই চাঁদে জমি কিনছি না। আগে সেখানে বিদ্যুৎ যাক, তারপর কিনব। কারণ, আমি খোঁজখবর নিয়ে জানতে পেরেছি, চাঁদের নিজস্ব কোনো আলো নেই। অতএব, বিদ্যুৎটা দরকার। ওখানে মোমবাতি বা হারিকেন পাব কোথায়? চাঁদের নিজস্ব আলোই যেখানে নেই, সেখানে মোম কেনার মতো মুদি দোকান থাকবে কোত্থেকে?

সেদিন আমার এক ফেসবুক বন্ধু লিখল, চাঁদে পাঁচ কাঠা জমি কিনে ফেললাম। গতকাল হঠাৎ তার সঙ্গে দেখা। দেখলাম তার মুখে চাঁদে জমি কেনার আনন্দটা নেই। কেমন যেন গোমড়া মুখ। ঘটনা কী জানতে চাইলাম। বন্ধুটি বলল, আসলে চাঁদে জমি কিনে খুব আর্থিক টানাটানির মধ্যে আছি। আমি বললাম, অনেক বেশি খরচ হয়ে গেছে নাকি? বন্ধুটি বলল,  আরে না। একেবারে সস্তায় পেয়েছি। কিন্তু সমস্যা হলো চাঁদের যে জমিটা আমি কিনেছি সেটা আমার প্রেমিকার একদম পছন্দ হয়নি। এখন জমিটা ফেরত দিয়ে টাকা রিফান্ড করার চেষ্টা করছি। সমস্যা হলো, চাঁদে জমি কিনে সেটা ফেরত দেওয়ার কোনো সিস্টেম নেই। বললাম, তাহলে এখন উপায়? সে বলল, আপাতত উপায় একটাই দোস্ত, দুইশ টাকা ধার  দিতে পারবি?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর