সোমবার, ১১ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

গরমের খবরাখবর

ইকবাল খন্দকার

আমার এক বড়ভাই বললেন, কী দিনকাল এলো! গরমের জন্য মানুষের সঙ্গে কমিটমেন্ট রক্ষা করা কঠিন হয়ে যাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে তো কদিন পর মানুষ আর আমাকে দাম দেবে না। কী যে করি! এই গরম কবে যাবে? আমি বললাম, গরম বেশি পড়েছে, বুঝলাম এবং মানলাম। কিন্তু গরমের জন্য মানুষের সঙ্গে কমিটমেন্ট রক্ষা করা যাচ্ছে না, এ বিষয়টা ঠিক বুঝতে পারলাম না। বড়ভাই বললেন, এত বোঝানোর টাইম নেই। একটা ঘটনা বলি। ঘটনাটা শোন আর পুরো বিষয়টা বুঝে নে। বড়ভাই ছোট্ট একটা বিরতি নিলেন। বিজ্ঞাপন বিরতি না। কোনো কারণ ছাড়াই বিরতি। তারপর বললেন, আমার বাসার এসিটা নষ্ট হয়ে গেছে। আমি সঙ্গে সঙ্গে মিস্ত্রিকে ফোন করলাম মেরামত করার জন্য। মিস্ত্রি বলল, জরুরি কাজে ব্যস্ত আছে। একটা দিন পরে আসবে। হঠাৎ আমার চোখ গেল ক্যালেন্ডারের দিকে। দেখি অক্টোবর এসে গেছে। তার মানে কড়া গরমটা আর লাগবে না। এসি ছাড়াই ঘুমানো যাবে। আমি মিস্ত্রিকে ফোন করে বললাম, থাক, আসতে হবে না। কিন্তু রাত হতে না হতেই দেখি সেইরকম গরম। ঘামে বালিশ-টালিশ ভিজে একাকার। কী আর করা, সকালে মিস্ত্রিকে আবার ফোন করলাম, যেন জরুরি ভিত্তিতে আসে। মিস্ত্রি আমাকে দিল ঝাড়ি। ধুর মিয়া, একবার কন আইতে, আবার কন আইতে অইবো না, আবার কন আইতে; আপনের জবানের কোনো ঠিক নাই নাকি! মিস্ত্রিকে কীভাবে বোঝাই, আমার জবানের ঠিক থাকলেও গরমের মতিগতির কোনো ঠিক নেই। নইলে এই অক্টোবরেও গরম এত চ্যাতা কেন? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, কবে যে গরম যাবে! কাশির জ্বালায় আর বাঁচি না। আমি অবাক হয়ে বললাম, কী সব উল্টাপাল্টা কথা বলছেন? গরমে কাশি আপনাকে জ্বালাবে কেন? কাশি তো শীতকালীন রোগ। তার মানে গরমকাল যত লম্বা হবে, কাশি থেকে ততই বেঁচে থাকতে পারবেন। প্রতিবেশী বললেন, মুখস্থ কথা বলবেন না ভাই। পরিস্থিতিটা আগে বোঝেন, তারপর কথা বলেন। আমি বললাম, তাহলে একটু বোঝান। প্রতিবেশী বোঝানো শুরু করলেন, নিচতলায় বাসা। অতএব বুঝতেই পারছেন। বিস্তর ধুলোবালি। অতিরিক্ত গরমের কারণে যেহেতু ঘুমানোর সময় জানালা খুলে রাখতে হয়, তার মানে রাস্তার সব ধুলোবালি ঢুকে যায় ঘরে। ঘরে তো না, ঢোকে নাকে-মুখে। ব্যস, বিস্তর কাশি। গরমটা কমলে জানালা বন্ধ করে ঘুমাতে পারতাম আরকি। এবার বাকিটা মিলিয়ে নেন।

আমি প্রায়ই এসির রিমোট দিয়ে টিভি চালানোর চেষ্টা করি কি না।  আবার টিভির রিমোট দিয়ে এসি চালানোর চেষ্টাও নিতান্ত কম করি না...

আমার এক ভাবি বললেন, গরম বাড়লো অথচ তোমার ভাইয়ের গুরুত্ব কমলো। আমি বললাম, গরম বাড়ার সঙ্গে ভাইয়ের গুরুত্ব বাড়া-কমার সম্পর্ক কী? ভাবি বললেন, আছে, সম্পর্ক আছে। আগে তোমার ভাই বলতো, সংসারের জন্য খাটা-খাটুনি করতে করতে নাকি সে মাথার ঘাম পায়ে ফেলে। আমরা তার কথা শুনে তার প্রতি কৃতজ্ঞ থাকতাম এই জন্য, যেহেতু কম পরিশ্রমে মাথার ঘাম পায়ে পড়ে না। অর্থাৎ মানুষটা সংসারের জন্য ম্যালা পরিশ্রম করে। কিন্তু গরম বাড়ার পর দেখলাম, পরিশ্রম করতে হয় না। অতিরিক্ত গরমের কারণে এমনি এমনি যে কেউ প্রচুর ঘামে এবং সেই ঘাম কপাল থেকে যখন তখন পায়ে পড়ে। অতএব বুঝতেই পারছো, এখন আর তোমার ভাইয়ের কথার কেউ গুরুত্ব কেন দেয় না।

আমার এক বন্ধু বলল, মরার গরম কবে যে যাবে! রোজ এককথা শুনতে আর ভালো লাগে না। আমি বললাম, কী কথা? কার কথা? বন্ধু বললো, আমার বউয়ের কথা। গরম বেশি পড়ার কারণে এসি চালাতে হয়। আর এই ইস্যুতেই আমায় খালি খোঁটা দেয়, আমি নাকি বুড়া হয়ে গেছি। এই জন্য আমার সেন্স কাজ করছে না। আমি বললাম, বয়স তো হয়েছেই। তাই বলে সেন্স কাজ না করার মতো বয়স তো হয়নি। সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, এর সঙ্গে গরম বা এসির কী সম্পর্ক? বন্ধু বলল, না, মানে আমি প্রায়ই এসির রিমোট দিয়ে টিভি চালানোর চেষ্টা করি কি না। আবার টিভির রিমোট দিয়ে এসি চালানোর চেষ্টাও নিতান্ত কম করি না। গরমটা গেলে এসির রিমোটটা লুকিয়ে রাখতে পারতাম আরকি।

আমার এক বন্ধুর মন খারাপ। দেখা হতেই জিজ্ঞেস করলাম ঘটনা এক লাইনে বলে শেষ কর। সে বলল, গরমের কারণে প্রেমিকা হাত ছাড়া হয়ে গেল রে...। বললাম, মানে? সে বলল, কথা দিয়েছিলাম গরমটা গেলে বিয়ে করব। কিন্তু গরমের মাস যেভাবে বাড়ছে, গরম এই জীবনে যাবে কিনা জানি না। তবে এ মাসে বিয়ে করতে না পারলে প্রেমিকা আমাকে ছেড়ে চলে যাবে এটা শিউর!

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর