সোমবার, ৯ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

জমজমাট শীত

ইকবাল খন্দকার

গতকাল আমার এক বড় ভাইকে ফোন করলাম। উদ্দেশ্য, কুশল বিনিময় করা। প্রথমেই জিজ্ঞাসা করলাম, আপনার এলাকায় শীত কেমন? বড় ভাই কী বললেন বুঝতে পারলাম না। কারণ, একটা আওয়াজ হচ্ছিল। আমি তাকে প্রশ্নটা আবার করলাম। এবারও একই সমস্যা। আওয়াজের জন্য কথা বুঝতে না পারা। আমি তাকে বললাম, ভাই মনে হয় কোনো একটা মেশিনের কাছে আছেন। যে মেশিন টকটক করে লাগাতার আওয়াজ করেই যাচ্ছে। এক কাজ করেন ভাই, একটু সরে দাঁড়ান। নইলে এই আওয়াজের জন্য কেউ কারও কথা শুনতে পারব না, বুঝতে পারব না। এবার হঠাৎ করেই গলার স্বর চেঞ্জ। ছিল পুরুষ কণ্ঠ, হয়ে গেল নারীকণ্ঠ। না না, এখানে কোনো জাদুটোনার ব্যাপার নেই। মূল ঘটনা হচ্ছে, ভাইয়ের হাত থেকে মোবাইল কেড়ে নিয়েছিলেন ভাবি। তিনি আমাকে জিজ্ঞাসা করলেন কেমন আছি। আমি ‘ভালো’ বলে জানতে চাইলাম ভাই এতক্ষণ কোথায় দাঁড়িয়ে কথা বলছিলেন, কেন এমন টকটক আওয়াজ শোনা যাচ্ছিল। ভাবি বললেন, আপনার ভাই বাসায়ই আছেন। আর এই যে বললেন উনি কোনো মেশিনের কাছে আছেন কি না, এটা ভুল ধারণা। উনি কোনো মেশিনের কাছে নেই। অতএব, টকটক আওয়াজটাও কোনো মেশিনের না। এটা তার মুখ থেকে বের হওয়া আওয়াজ। অতিরিক্ত শীতে তার দাঁতে দাঁত বাড়ি খাচ্ছিল তো! আমার এক ছোট ভাই বলল, নতুন বছরের প্রথমেই বাড়িওয়ালার সঙ্গে একটা কেওয়াজ বেধে গেল। কেওয়াজও এমন কেওয়াজ না; হাতাহাতিটা শুধু বাকি ছিল। কিন্তু কী করব বলেন, লোকটা এমন বদের বদ, কোনো যুক্তিই শুনতে চাচ্ছিল না। অথচ আমি অত্যন্ত যুক্তিযুক্ত একটা কথা বলেছিলাম। তার উচিত ছিল যুক্তিটা মেনে নেওয়া। আমি বললাম, মাঝখান থেকে কথা বললে তো হবে না। কী হয়েছে, কী নিয়ে কেওয়াজ বেধেছে, তুই কী বলেছিলি, সব বিস্তারিত বল। ছোট ভাই বলল, ঘটনা আসলে তেমন কিছু না। বাড়িওয়ালা ভাড়া নিতে এসেছিল। আমি বললাম এই মাসে ২০০ টাকা কম নেন। বাড়িওয়ালা চটে গেল। আমি বললাম, চটারই তো কথা। নতুন বছরের নতুন মাসে যেখানে তার বাড়তি ভাড়া পাওয়ার কথা ছিল, সেখানে তাকে তুই ২০০ টাকা কম দিচ্ছিস। এটা হলো কিছু? ছোট ভাই বলল, আপনিও দেখছি বাড়িওয়ালার সঙ্গেই সুর মিলিয়ে কথা বলছেন। আমার যুক্তিটা আগে শোনেন, তারপর বাড়িওয়ালার সঙ্গে সুর মেলান। আমি তাকে যুক্তিটা শোনাতে বললাম। ছোট ভাই বলল, বাড়িওয়ালা সবসময় বলে বিদ্যুতের দাম বেড়েছে, গ্যাসের দাম বেড়েছে, এইটার দাম বেড়েছে, সেইটার দাম বেড়েছে, এই জন্য ভাড়া বাড়াতে হবে। আর আমি যদি তার কোনো একটা জিনিস ব্যবহার না করি বা নামমাত্র ব্যবহার করি, তখন কি ২০০ টাকা কম দেওয়ার দাবি করতে পারি না? বললাম, তুই তার কোন জিনিস ব্যবহার করিসনি বা নামমাত্র ব্যবহার করেছিস? ছোট ভাই বলল, পানি। গত মাসের শেষদিক থেকে শুরু করে আজ পর্যন্ত যেখানে আমি শীতের জন্য এক দিনও গোসল করিনি, সেখানে পানি খরচ না করা বাবদ আমি কি ২০০ টাকা কম দিতে পারি না? আমি একজন জ্যোতিষীকে চিনি। দুই দিন আগে যখন তার সঙ্গে দেখা হলো, জিজ্ঞাসা করলাম বছরের প্রথম দিন আয়-রোজগার কেমন হলো। যেহেতু ‘বছরটা কেমন যাবে’ মর্মে সবাই এইদিন হাত দেখাতে আসে। জ্যোতিষী সাহেব গোমড়া মুখে বললেন, আর বলবেন না। প্রতিবারই কেন যে এই সময়টায় নতুন বছর শুরু হয়! নতুন বছর শুরু হওয়া দরকার ভাদ্র মাসের দিকে। যখন তালপাকা গরম থাকে। আমি জানতে চাইলাম কী হয়েছে, সমস্যা কী। জ্যোতিষী সাহেব বললেন, কী আর হবে বলেন! ইনকাম নেই বললেই চলে। আরে বাপুরে শীতের জন্য মানুষ যদি হাত থেকে হাতমোজা-ই না খোলে, তাহলে আমি হাতটা দেখব কীভাবে? আর হাত না দেখিয়ে মানুষ টাকা দেবে?

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর