সোমবার, ১৬ জানুয়ারি, ২০২৩ ০০:০০ টা

সর্বত্র সেলফি

‘এই জন্য সহযোগী নিয়োগ দিলাম। সে তাৎক্ষণিকভাবে দেখিয়ে দেয় লুকটা কেমন হবে, কোথায় হবে। ব্যস, এখন আর একটা সেলফিও নষ্ট হচ্ছে না।’

 ইকবাল খন্দকার

সর্বত্র সেলফি

আইডিয়া ও ডায়ালগ : তানভীর আহমেদ  ► কার্টুন : কাওছার মাহমুদ

আমার এক ছোটভাই কথায় কথায় বলল, আসলে ভাই, টার্গেট নিয়ে কাজ না করলে হয় না। এই জন্য শুরু থেকেই টার্গেট রাখতে হয়। এতে হয় কী, টার্গেট পুরোপুরি পূরণ না হলেও অন্তত কাছাকাছি যাওয়া যায়। আমি ছোটভাইয়ের সঙ্গে সহমত পোষণ করে বললাম, হঠাৎ টার্গেটের বিষয়ে কথা বলছিস যে? নতুন কোনো টার্গেট হাতে নিয়েছিস নাকি? ছোটভাই বলল, জি, এইরকমই কিছু একটা। গত বছরটা আসলে ভালো যায়নি। বন্ধুদের থেকে অনেক পিছিয়ে ছিলাম। এবার সেটা হতে দেওয়া যাবে না। যে কোনোভাবে বন্ধুদের থেকে এগিয়ে থাকতে হবে। আমি বললাম, পড়াশোনা নিয়ে তোদের মধ্যে প্রতিযোগিতা চলে তাহলে? ভালো, খুব ভালো। একজন আরেকজনের চেয়ে পড়াশোনা কীভাবে বেশি করবি, যদি এই ধরনের টার্গেট বা প্রতিযোগিতা থাকে, সেটা নিজেদের ক্যারিয়ারের জন্য খুবই ভালো। ছোটভাই বলল, আপনি মনে হয় আসল বিষয়টা ধরতে পারেননি ভাই। আমি পড়াশোনার ব্যাপারে কথা বলিনি। কথা বলেছি সেলফির ব্যাপারে। আমার বন্ধুদের তুলনায় গত বছর আমি সেলফি একটু কম তুলেছিলাম। হিসাব করে দেখলাম, দশটার মতো কম। এ জন্য এই বছরের শুরু থেকেই আমি সিরিয়াস। এমনভাবে সেলফি খিঁচচ্ছি, আশা করছি গত বছরের ঘাটতি পূরণ করে আরও পাঁচ-দশটা বেশি তুলে ফেলতে পারব। আমার এক ভাবি বললেন, এবার যে এত শীত পড়বে, বুঝতে পারিনি। শীত পড়েছে, ভালো কথা। শীত জিনিসটা খারাপ না। তবে খারাপ লাগে, যখন সেলফি তুলতে সমস্যা হয়। আমি বললাম, শীতকালে মুখ-মাথা ঢাকা থাকে তো! এটা সেলফির জন্য ক্ষতিকারকই বটে। সেলফি একদমই ভালো হয় না। ভাবি বললেন, আপনি যা ভাবছেন, তা না। আপনার নিশ্চয়ই জানা আছে অথবা জানা থাকা উচিত, সেলফি তোলার সময় ঠোঁট বাঁকা করতে হয়। যা শীত আর যেভাবে ঠোঁট ফেটেছে, ঠোঁটটা কীভাবে বাঁকা করি বলেন তো! বেদনা অনুভূত হয় না? আমার এক প্রতিবেশী বললেন, ঢাকা শহরে বসবাস করে আসলে সেলফি তোলাটা কঠিন। সেলফির জন্য গ্রামই ভালো। কোনো ঝুঁকি নেই। যত খুশি তত সেলফি তোলো। আমি বললাম, অধিক সংখ্যক সেলফি তো শহরের মানুষই তোলে। আর শহরেই তোলে। আপনার কেন মনে হচ্ছে শহরে সেলফি তোলাটা কঠিন কিংবা ঝুঁকিপূর্ণ? প্রতিবেশী বললেন, অকারণে মনে হয় নাই রে ভাই, মনে হওয়ার পেছনে যথেষ্ট কারণ আছে। এই যে এত এত তার, কারেন্টের তার, টেলিফোনের তার, ইন্টারনেটের তার, এতসব তার কি গ্রামে আছে? সেলফি তুলতে হলে তো হাত উঁচু করতে হয়, নাকি? আপনি জানেন, একটু আগে সেলফি তুলতে গিয়ে আমি কারেন্টের শক খেয়েছি? না, এই তারতুরের শহর আর ভালো লাগে না। গ্রামেই চলে যাব। নিরাপদে সেলফি তুলব। আমার এক বড়ভাইয়ের সঙ্গে দেখা অনেক দিন পর। তার সঙ্গে কম বয়সী একটা ছেলেকে দেখে ছেলেটার পরিচয় জিজ্ঞেস করলাম। বড়ভাই বলল, সে আমার সহযোগী। আমি জানতে চাইলাম তিনি এমন কী বড় কাজ করেন বা বড় পদের কাজ করেন, যেটার জন্য সহযোগীর দরকার হয়। বড়ভাই বললেন, আসলে হয়েছে কী, গত কিছু দিনে যত সেলফি তুলেছি, সেগুলোর একটারও লুকিং ঠিক ছিল না। উল্টাপাল্টা লুক দিয়ে ফেলি আর আজেবাজে সেলফি ওঠে। যা ফেসবুকে দেওয়া সম্ভব হয় না। আর এটা আমার জন্য অপূরণীয় ক্ষতি। এ জন্য এই সহযোগী নিয়োগ দিলাম। সে তাৎক্ষণিকভাবে দেখিয়ে দেয় লুকটা কেমন হবে, কোথায় হবে। ব্যস, এখন আর একটা সেলফিও নষ্ট হচ্ছে না। আমি বেঁচে যাচ্ছি অপূরণীয় ক্ষতির হাত থেকে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর