শুক্রবার, ৪ সেপ্টেম্বর, ২০২০ ০০:০০ টা

করোনা-ক্রান্তিতে শহর থেকে দূরে- খামারে

মঈনুস সুলতান

করোনা-ক্রান্তিতে শহর থেকে দূরে- খামারে

সাউথ কেরোলাইনাতে ঢুকার মুখে আমরা রোডসাইডে ঘাসের ওপর গাড়িটি পার্ক করি। লকডাউন উঠেছে বটে, তবে করোনার সংক্রমণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। তাই, আমি ও হলেন আমাদের মেয়ে কাজরিকে নিয়ে সাবধানে সাউথ কেরোলাইনা অঙ্গরাজ্যের একটি হর্স ফার্মে ছুটি কাটানোর ব্যবস্থা করেছি। অনেকক্ষণ ড্রাইভ করেছি। সুতরাং একটু হাত-পায়ের খিল ছোটানোর মওকা পেয়ে খুশি হই। সিগাল-ভাসা আকাশের তলায় উতল হাওয়া বয়ে আনছে নোনাজলের গন্ধ। দূরের জলাভূমিতে দীর্ঘ ঘাসের সায়রে পাথর ফেলে তৈরি করা হয়েছে খটখটে ডাঙ্গা। ওখানে আছে একটি রেস্তোরাঁ। যে হর্স ফার্মে আজকে আমরা যাচ্ছি, ওই খামারে আগেও বার কয়েক ভেকেশন কাটিয়েছি। আসা-যাওয়ার পথে বার কয়েক থেমেছি এ রেস্তোরাঁয়।

রেস্তোরাঁ থেকে ঝুলন্ত উডেন-ডেক চলে গেছে কাঁকড়ায় কিলবিলানো জলাভূমির ওপর। ওখানে বসে সারসদের মচ্ছব করে কাঁকড়ার খোল ভাঙার কসরতে চোখ রেখে গ্রিল করা মৎস্যভোজনের স্বাদ এখনো লেগে আছে ঠোঁটেমুখে। উডেন-ডেকের দেয়ালজুড়ে রাখা বিরাট একটি অ্যাকুরিয়াম। খানেওয়ালারা সচরাচর কাচের কৃত্রিম পুকুরে ভাসমান মাছ বা লবস্টারের দিকে ইশারা করে তাদের খাদ্যরুচির ব্যাপারটি জানান। শেফ মাছটিকে ন্যাট লাগানো বেলচায় পাকড়ে চোখের সামনে কেটে-ছেঁটে গ্রিলে চড়ান। ওই রেস্তোরাঁর উপরতলায় আছে ‘নো টেল রিটায়ারিং কেবিন।’ অর্থাৎ লং ডিসটেন্স ড্রাইভে যাত্রীরা চাইলে গলদা চিংড়ি ভোজে আপ্যায়িত হয়ে, অতঃপর রিটায়ারিং রুমে বিশ্রাম করতে পারেন। তবে বুঝদার যাত্রীরা ‘নো টেল’ শব্দবন্ধের মর্মার্থ জানেন। কোনো নারী বা পুরুষ চাইলে সহযাত্রীর সঙ্গে কেবিনে অন্তরঙ্গ হতে পারেন, এ ঘটনা যে সংগোপন থাকবে, রেস্তোরাঁর ম্যানেজমেন্ট ‘নো টেল’ ঘোষণার মাধ্যমে তার নিশ্চয়তা দিচ্ছেন।

রোডম্যাপ ঘেঁটে হলেন স্টিয়ারিং হুইলে হাল ধরে। কাজরি পেছনের সিটে বসে আইফোনে চোখ রাখে। রেস্তোরাঁর সামনের সড়ক দিয়ে ছুটে যাওয়ার সময় চোখে পড়ে বিরাট আকারের একটি ব্যানার, তাতে কার-ড্রাইভারদের ওয়েলকাম করে সরল জবানে বলা হচ্ছে, ঢুকে পড়ুন, কেউ আপনাদের মাস্ক পরা বা সামাজিক দূরত্ব বহাল রাখার কথা বলে বিরক্ত করবে না। ব্যানারটির কোনায় নো টেল রিটায়ারিং কেবিনের বিজ্ঞাপন।

গাড়িটি চলে আসে ত্রিপথের মোহনায়। রাইট-টার্ন নিতেই গাছপালায় সড়কটি ছায়াচ্ছন্ন হয়ে ওঠে। বুঝতে পারি, হলেন গ্রামাঞ্চলের ভিতর দিয়ে ড্রাইভ করছে। গাড়ির গতি নেমে আসে ঘণ্টায় ২৫ মাইলের মধ্যে। জংলা ভূখন্ডে কিছুদূর পর পর দেখা যায় কয়ারি করা ফুলবাগানসহ সাহেবসুবোদের বাংলো টাইপের বসতবাড়ি। কোনো কোনো বাড়ির আঙিনায় পড়ে আছে জংধরা ট্রাক্টর কিংবা ফর্টিজ মডেলের ফোর্ড মোটরকার। আরেকটি টার্ন নিয়ে আমরা ঢুকে পড়ি নুড়িপাথর ছিটানো মেঠোপথে। একটি বাংলো-বাড়ির প্রাঙ্গণে স্বয়ংক্রিয় সিঁড়ি বেয়ে ঔকগাছের মগডালে পৌঁছে গেছেন রোদপোড়া এক সাহেব। তিনি বৈদ্যুতিক করাত দিয়ে কাটছেন ডাল, তার কামড়ে ধরা পাইপ থেকে উড়ছে ধোঁয়া। এ দৃশ্যপট অতিক্রম করে যাওয়ার পথে পেল্লায় একটি শাখা হুড়মুড় করে ভেঙে পড়ে নিচে।

চলে আসি, ঘাসে-ঘাসালিতে সবুজ হয়ে ওঠা একটি প্রান্তরে। এখানে উড়ে বেড়ানো হাজার-বিজার প্রজাপতি তৈরি করছে ভিজুয়্যাল কনট্রাস্ট। গাড়ির গতি কমে গড়িয়ে গড়িয়ে চলছে। আকাশ এদিকে এতই প্রসারিত যে, চক্রাকারে ওড়ে বেড়ানো চিলে তৈরি হয়েছে চমৎকার বৃত্ত, চলমান ছায়াও পরফেক্টলি ফুটেছে ঘাসে। হঠাৎ করে মনে হয়, এনালজেসিক ট্যাবলেটের প্রভাবে জ্বর ছেড়ে যাওয়ার মতো শরীর থেকে উপে যাচ্ছে করোনাক্রান্ত স্ট্রেস। চোখের কোণ দিয়ে দেখি, মাঠের সীমান্তে পাথর জড়ো করে তৈরি করা হয়েছে একটি রকওয়াল। তার ওপারে চরছে শাদাটে-ছাই রঙের চিত্রাপাকরা একটি ঘোড়া।

এবার মেঠোপথটির বাঁ পাশে ফুটে ওঠে হলুদ রঙের বনফুল। সূর্যমুখীর মিনিয়েচার ভার্সনগুলোর কিনারজুড়ে সারি দিয়ে লাগানো হয়েছে ল্যাভেন্ডারের বেগুনি পুষ্পদল। থোকা থোকা হয়ে এখানে ওখানে ফুটেছে শুভ্র পাপড়িতে গোলাপি আভা ছড়ানো নাম না জানা কিছু ফুল। আমরা পেরিয়ে আসি পর পর কয়েকটি বাংলো-বাড়ি। একটি বাড়ির ছাদ সারাই করা হচ্ছে। মই বেয়ে উঠা-নামা করছে মানুষ। ছাদের ওপর হামাগুড়ি দিয়ে কেউ কেউ বদলাচ্ছে টাইলস। কাছেই জোর ভলিউমে বাজানো হচ্ছে স্টিরিও, বাতাসে উড়ে বেড়াচ্ছে মেক্সিকান লিরিকের জনপ্রিয় টিউন। সারাই-শ্রমিকদের বাদামি গাত্রবর্ণ দেখে আন্দাজ করি, এরা মেক্সিকো থেকে আগত গেস্ট ওয়ার্কার। এ গোত্রের মানুষদের অনেকেই আনডকুমেন্টেড, অর্থাৎ যুক্তরাষ্ট্রে ঘোরাফেরার প্রয়োজনীয় কাগজপত্র এদের নেই। মাঝেসাঝে স্থানীয় মিডিয়াতে চাউর হয় এ জনগোষ্ঠীর মধ্যে করোনা আউটব্রেকের সংবাদ। এসব নিউজের সচরাচর কোনো ফলোআপ থাকে না, তাই বোঝা মুশকিল, আনডকুমেন্টেডরা অসুস্থ হলে হাসপাতালে যায় কিনা? কিংবা মারা গেলে মৃতদের তালিকায় এ পরিসংখ্যানটি যুক্ত হয় কী?

কাজরি সেলফোনে রেডিও অন করে। নিউজকাস্টার বিরস জবানে সংবাদ পড়ে যান। স্কুল খোলার প্রতিবাদে রাজ্যের শত শত শিক্ষক দরখাস্ত পাঠিয়েছেন। সার্জন জেনারেলসহ নানা ধরনের হেলথ প্রফেশনালরা সংক্রমণ বৃদ্ধির মোকাবিলায় সমুদ্রসৈকত, পানশালা ও নাইটক্লাব প্রভৃতি বন্ধের আবেদন জানাচ্ছেন, কিন্তু রিপাবলিকান গভর্নর রাজ্যের তাবৎ স্থাপনা খোলা রাখার হার্ডলাইন থেকে সরছেন না। করোনা ক্রাইসিসের শুরু থেকে তিনি সাউথ কেরোলাইনাতে লকডাউনের বিরোধিতা করছেন, প্রচার চালাচ্ছেন যে, মাস্ক ব্যবহার বা সামাজিক দূরত্ব বহাল রাখার সঙ্গে সংক্রমণ হ্রাস পাওয়ার কোনো সম্পর্ক নেই। তার সাদাসাপটা বক্তব্য হচ্ছে, স্কুল খুললে কিছু ছেলেমেয়ে অবশ্যই শিকার হবে কভিডের, কিন্তু তাতে কী- ওরা তো চার-ছয় দিনের চিকিৎসায় ভালো হয়ে ওঠবে।

আমি রেডিও বন্ধ করে দেওয়ার ইশারা দিয়ে জানালার কাচ নামাই। খোলামেলা হওয়ায় সিগ্ধ হতে হতে দেখি, গাড়ি একটি পিচ ফার্মের পাশ দিয়ে মৃদু গতিতে আগাচ্ছে। মাঠজুড়ে গাছে গাছে ঝুলছে গুচ্ছ গুচ্ছ সিঁদুরে পিচফল। ফুলতোলা টপের সঙ্গে সার্কোল স্কার্ট পরা একটি মেয়ে হেঁটে হেঁটে পিচ পেড়ে রাখছে ঝুড়িতে। তার গন্ডদেশের লালিমা যেন সংক্রমিত হচ্ছে ঝুলন্ত সব পিচফলে। আমরা রোডসাইড স্ট্যান্ডের কাছে মিনিট দুয়েকের জন্য দাঁড়াই। চাকা লাগানো টংঘরে থরে থরে সাজিয়ে রাখা কাগজের ঝুড়িভর্তি তাজা পিচফল। দোকানে বিক্রেতা বলে কেউ নেই, কাজরি নেমে ক্যাশবাক্সে ১০ ডলারের নোট রেখে তুলে নেয় ছোট্ট এক ঝুড়ি ফল।

দৃশ্যপটের দিকে তন্ময় হয়ে তাকিয়ে ছিলাম। খেয়াল করি, আস্তে-ধীরে সড়ক পাড়ি দিচ্ছে তিনটি ছোট্ট ছানাপোনাসহ খোলে রঙিন নকশা আঁকা চিত্রিত কচ্ছপ। প্রচুর সময় নিয়ে তারা ঘাসের আবডালে অন্তর্হিত হলে, হলেন বোধ করি লস্ট টাইম কাভার করার জন্য এক্সেলেটরে চাপ দেয়। হুড়মুড়িয়ে পাথরের গ্রাবেল ছিটকে গাড়িটি এসে পড়ে আমাদের গন্তব্য হর্স-ফার্মের গেটে।

গাড়িতে বসেই কোড পাঞ্চ করে গেট খুলে ফেলা যায়। ভিতরে গাড়ি থামতেই আমরা নেমে পড়ি। খামারটির এক পাশে কাঠের ফেন্স দিয়ে করা ঘোড়া চরার ক্রাল। আমরা নিঃশ্বাস প্রশ্বাসে অনুভব করি বাতাসের ফ্রেশনেস। রোদের তেজ মরে যাচ্ছে, আর আকাশে ফুটে উঠছে বাঁকানো সেতুটির মতো বর্ণালী এক রঙধনু। আমাদের আগমনে বিরক্ত হয়ে দুটি হরিণ লাজুক মুখে সরে যায় ছায়াচ্ছন্ন ঝোপের কিনারে।

এ খামারে আমরা ছুটি কাটাতে এসেছি বেশ কয়েকবার। এখানে চরে বেড়ানো প্রতিটি ঘোড়াই আমাদের বেশ ভালো করে চেনা। তাই তাদের হ্যালো বলার আগ্রহ নিয়ে জুতা খুলে আমি ঘাসে পা চুবিয়ে আগ বাড়ি। প্রাঙ্গণের মাঝ বরাবর দুটি চেনা ঘোড়াকে লকেট করি। এদের একটির নাম জেসপার ও অন্যটি লেইসি। আমি কয়েক পা এগিয়ে যেতেই এরা ঘাড় তুলে আমাকে দেখে, কেশ ঝাঁকিয়ে যেন হ্যালোও বলে। তারপর বিশেষ পাত্তা না দিয়ে তারা ঘাস খুটতে ফিরে যায়। বুঝতে পারি, লেইসি ও জেসপার ক্ষুধার্থ, অথবা কোনো কারণে অতিথি সম্ভাষণের মুডে নেই। একটু খাজুল হয়ে আমি হর্স-ক্রালের কাঠের ফেন্সের দিকে হাঁটি। অন্য দুটি চেনা ঘোড়া- ট্রুপার ও রেনসাম আমাকে দেখতে পেয়ে ঘুরে দাঁড়ায়। আমি ফার্মে এসে পড়াতে ট্রুপার স্পষ্টত খুশি হয়েছে। সে চি হি হি হি আওয়াজ দিয়ে চলে আসে রেলিংয়ের পাশে, পেছন পেছন রেনসামও। আমি তাদের কাছে গিয়ে কব্জি নাকে ঘঁষে হ্যালো বলি।

ঘোড়াদের সঙ্গে দেখা-সাক্ষাতের পালা শেষ করে চলে আসি ফার্ম-হাউসের সামনে। লনে টেবিল পেতে তাতে রাখা এক জাগ লেমোনেড। আমরা চেয়ার টেনে বসি। দেখা হয় ফার্মের কর্মচারী এলার সঙ্গে। লেবুর তরতাজা সৌরভ ছড়ানো পানিতে ভাসছে পুদিনার সবুজ পাতা। রিফ্রেসিংয়ে ড্রিংকসটি সে তৈরি করে রেখেছে। অনেক দিন পর এলার সঙ্গে দেখা হলো। মেয়েটি আর্কিওলজিতে মাস্টার্স করার জন্য চলে গিয়েছিল স্কটল্যান্ডের গ্লাসগো শহরে। প্রায় বছর খানেক ওখানে বাস করার পর শুরু হয় পেনডেমিকের তোলপাড়। স্কটল্যান্ডে স্টাডি করতে আসা ছাত্রছাত্রীদের নিজ নিজ দেশে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু মাত্র দিন চারেক আগে প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প ইউরোপ থেকে আমেরিকায় আসার তাবৎ ফ্লাইট বাতিল করেছেন। তো অনেক ঝুটঝামেলা ঘাঁটিয়ে যুক্তরাষ্ট্রে ফিরে আসে এলা। যেখানে বসবাস করছেন তার বয়স্ক পিতা-মাতা- পৈতৃক ভিটায় তৎক্ষণাৎ সে যেতে চাচ্ছিল না। তার সে মুহূর্তে বরং প্রয়োজন ছিল কোনো নিরিবিলি জায়গায় গিয়ে কয়েক দিন বাস করে কোয়ারেন্টাইন পালন করা। ফার্মের চেনা মালিক ডাডলি তাকে খামারে আইসোলেশনে বসবাসের ব্যবস্থা করে দেন। মেয়েটি ভালোবাসে ছবি আঁকা, ঘোড়ার সঙ্গ সে পছন্দ করে, আগেও কাজ করেছে এ খামারে। বর্তমানে স্কটল্যান্ডে ফিরে যাওয়ার কোনো প্রয়োজন নেই, কারণ তার অবশিষ্ট কোর্সগুলো অনলাইন হয়ে গেছে। সুতরাং এখানে বসবাসের বিনিময়ে সে একটি কাজ জুটিয়ে নিয়েছে। দিনের অনেকটা সময় এলা কাটায় ঘোড়াঘরের চুনকাম করা দেয়ালে ফ্রেস্কো এঁকে। রাতে তার দায়িত্ব হচ্ছে, সিসি টিভির স্ক্রিনে আস্তাবলে ঘোড়ার স্বতন্ত্র খোপগুলোতে নজর রাখা।

লেমোনেড পান করতে করতে সচেতন হয়ে ওঠি যে, অনেকক্ষণ হয় আমরা চলমান ট্র্যাফিকের কোনো সাড়াশব্দ পাচ্ছি না। আমাদের অন্তঃস্থল ভরে ওঠে দৈনন্দিন জীবনের চাপ থেকে জাদুবলে নিস্তার পাওয়ার অনুভবে। লেমোনেডের গ্লাসটি শেষ করে উঠে পড়ে এলার সঙ্গে হেঁটে যাই ঘোড়াঘরের চুনকাম করা দেয়ালের কাছে। ফ্রেক্সোতে ছবিগুলো এখনো ফোটেনি। তবে পেন্সিলের আঁক দিয়ে সে ছয়টি ভিন্ন ভিন্ন ফ্রেমে কী আঁকবে তার অস্পষ্ট নকশা করে রেখেছে। এক জামানায় এ অঞ্চলের পুরোটাই ছিল আমেরিকার আদিবাসীদের গ্রাম। তাদের উৎখাত করে শ্বেতাঙ্গ সেটেলাররা আফ্রিকার কৃষ্ণাঙ্গ ক্রীতদাসদের দিয়ে এ অঞ্চলে শুরু করেছিল ধানচাষ। এখনো নাকি বনাঞ্চলে খোঁজাখুঁজি করলে পাওয়া যায় আদিবাসীদের তীরের অগ্রভাগ। এলার ফ্রেস্কোটির দুটি ফ্রেমে থাকবে আদিবাসীদের দিনযাপন ও ক্রীতদাসদের মেহনতে গড়ে ওঠা ধান খামারের কাল্পনিক চিত্র।

আমরা অতঃপর খামারের প্রান্তিকের দিকে হাঁটি। এলা একটি টবের সামনে দাঁড়িয়ে পড়ে। গাছটির কান্ড থেকে উঁকি দিচ্ছে বড়সড় ফুল। আমি ইতিপূর্বে কখনো ফিলাডেনড্রনকে পুষ্পিত হতে দেখিনি। জানতে পারি, গাছটি ফার্মে এসেছে ডাডলির প্রথম স্ত্রী শ্যারোলের কাছ থেকে। তাদের মধ্যে ডিভোর্স হয়েছিল অনেক বছর আগে, তবে নিঃসন্তান শ্যারোলের নাকি মাঝসাঝে দেখভাল করতেন ডাডলি। কভিডে মহিলা প্রয়াত হওয়ার পর ডাডলি ফেসবুকে একটি পোস্টিং দেন। তা থেকে জানা যায়, হাসপাতালে তার অবস্থা ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠলে তিনি প্রাক্তন স্বামীকে ফেস টাইমে অনুরোধ করেন, তার প্রিয় উদ্ভিদ ফিলাডেনড্রনটিকে যেন তিনি দেখভাল করেন। গাছটি নাকি তার অ্যাপার্টমেন্টের বারান্দায় বাস করেছে প্রায় সাড়ে পনেরো বছর। সচরাচর ফিলাডেনড্রনে ফুল ফোটে ১৬ বছর পরপর। উদ্ভিদটির দিকে তাকিয়ে আমি শ্যারোলের কথা ভাবি। যে ভুবনে গিয়েছেন তিনি, ওখানে ফুল ফোটার সংবাদ পাঠানোরও কোনো উপায় থাকেনি! আমার মন ভরে ওঠে কিছু একটা হারানোর বিধুর আবহে।

সর্বশেষ খবর