শনিবার, ১৩ এপ্রিল, ২০১৯ ০০:০০ টা
বগুড়ার সাংবাদিক রবীন

শুদ্ধ জাতীয় সংগীত চর্চার ফেরিওয়ালা

আবদুর রহমান টুলু, বগুড়া

শুদ্ধ জাতীয় সংগীত চর্চার ফেরিওয়ালা

শিক্ষকতা, সাংবাদিকতা, সামাজিক কাজে অধিকাংশ সময় ব্যস্ত থাকার পরও তিনি সময় পেলেই ছুটে যান বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে। শিক্ষার্থীদের প্রতিদিনের অ্যাসেম্বলি (সমাবেশ) দেখেন, জাতীয় সংগীত শুদ্ধ করে শেখানোর চেষ্টা করেন। সঙ্গে করে নিয়ে যান তাঁর নিজের লেখা শুদ্ধ জাতীয় সংগীতের ওপর লেখা ফিচার। সেই ফিচার বিলি করেন শিক্ষার্থী ও শিক্ষকদের মাঝে। শিক্ষার্থীদের নিয়ে মুক্তিযুদ্ধের কুইজ প্রতিযোগিতা করেন। কখনো শিক্ষার্থীদের নিজস্ব অর্থায়নে পুরস্কার প্রদান করেন। গত এক দশক ধরে লিখে চলেছেন মুক্তিযুদ্ধসহ নানা বিষয়ের কলাম। দিনের পর দিন এভাবে রবীন শুদ্ধ জাতীয় সংগীতচর্চার ফেরিওয়ালা হয়ে উঠেছেন।

এই অবিরাম ছুটে চলা সৎ, অসম্ভব তেজস্বী ব্যক্তির নাম মো. রবিউল ইসলাম রবীন। শুদ্ধ সুরে জাতীয় সংগীত শেখানো এই শিক্ষক সাংবাদিকের স্বপ্ন ও নেশা। প্রাথমিক, উচ্চবিদ্যালয় ও মাদ্রাসায় সমাবেশ শুরু হতেই তিনি পৌঁছে যান কোনো কোনো দিন। শিক্ষার্থীদের সঠিক স্বরলিপি, সুর ও কথায় গেয়ে শেখান’ আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।’

প্রগতিশীল ভাবধারার পরিবারে জন্ম নেওয়া রবীনের প্রবল ইচ্ছা দেশের ১০ হাজার প্রতিষ্ঠানে গিয়ে শুদ্ধ সুরে জাতীয় সংগীত গাওয়ার তালিম দেওয়ার। কিন্তু নানা ব্যস্ততা আর নিজস্ব পরিবহন ব্যবস্থা না থাকায় পেরে উঠছেন না। এর পরও ৫৩ বছর ছুঁই ছুঁই এই ব্যতিক্রমধর্মী মানুষটি কখনো পায়ে হেঁটে, কখনো ভ্যানে চড়ে, কখনো বাসে চড়ে গত ১০ বছর ধরে এই মহৎ কাজটি করে চলেছেন। শুদ্ধ সংগীতের এই ফেরিওয়ালা এ পর্যন্ত টাঙ্গাইলের ভারতেশ্বরী হোমস, মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজ, উদয়ন স্কুল, টিএমএসএস স্কুল অ্যান্ড কলেজ, দেশসেরা শ্রেষ্ঠ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পুরস্কারপ্রাপ্ত দুপচাঁচিয়া মডেল সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নিজ উপজেলার প্রায় সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসহ ৭৯টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে গিয়ে নিয়মিত সমাবেশ দেখেছেন এবং শুদ্ধ সংগীত প্রচার করছেন। তার তালিম পেয়ে খুশি এলাকার শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অভিভাবকসহ অনেকেই।

গুণী এই মানুষটি সাহিত্য, সংগীতজগতে বিচরণ করেছেন দুই দশক ধরে। স্বনন, উদীচীসহ দেশের নামকরা কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে কাজ করার অভিজ্ঞতা আছে তার। কয়েকটি দৈনিক পত্রিকায় নিয়মিত কলাম লিখেন তিনি। এ পর্যন্ত দেড় শতাধিক ফিচার প্রকাশ হয়েছে তার এবং এই কাজের স্বীকৃতিস্বরূপ পুরস্কারও পেয়েছেন তিনি। বর্তমানে বগুড়ার একটি স্থানীয় দৈনিকে আদমদীঘি প্রতিনিধি হিসেবে সাংবাদিকতা করছেন। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বীরবিক্রম শহীদ লে. আহসানুল হক ডিগ্রি কলেজের সহকারী অধ্যাপক। সান্তাহার নাগরিক কমিটির যুগ্ম সম্পাদক এবং সান্তাহার প্রেস ক্লাবের সাহিত্য ও সংস্কৃতি সম্পাদক তিনি। এই সাংবাদিক আদমদীঘি উপজেলার প্রায় সব স্কুল-কলেজে মুক্তিযুদ্ধের কুইজ এবং ইন্টারনেট উৎসব করেছেন তার কিছু অনুসারী নিয়ে। দুই সন্তানের জনক এই সৎ, প্রতিবাদী মানুষটির স্ত্রী স্থানীয় একটি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক। উপজেলার সান্তাহার ইউনিয়নের দমদমা গ্রামের সন্তান তিনি।

সান্তাহার নাগরিক কমিটির সভাপতি সাবেক অধ্যক্ষ আলহাজ মোসলেম উদ্দীন বলেন, তিনি বহুমুখী প্রতিভার অধিকারী। শিক্ষকতা, সাংবাদিকতার পাশাপাশি তিনি যে শুদ্ধ জাতীয়সংগীত প্রচার করছেন, এক কথায় তা অসাধারণ। তার পথচলা সুন্দর হোক, সার্থক হোক এই কামনা করি।

সাংবাদিক রবিউল ইসলাম (রবীন) বলেন, ৩০ লাখ শহীদের রক্তের বিনিময়ে পাওয়া আমাদের জাতীয় সংগীত। যখন কোথাও অশুদ্ধভাবে জাতীয় সংগীত গাইতে দেখি, মনে কষ্ট পাই। তাই শুদ্ধভাবে জাতীয় সংগীত চর্চার কাজ করছি। মফস্বলে অনেক স্কুলে নানা অজুহাতে নিয়মিত জাতীয় সংগীত গাওয়া হয় না। এই বিষয়ে প্রশাসনিক মনিটরিং থাকা উচিত। বিশেষ করে প্রাথমিক বিদ্যালয়ে শিক্ষার্থীদের নিয়ে আমি বেশি কাজ করি। আমার স্বপ্ন ১০ হাজার স্কুলে গিয়ে আমি শুদ্ধভাবে জাতীয় সংগীতচর্চার তালিম দেব। আমি একে কর্তব্য মনে করে কাজ করছি।

সর্বশেষ খবর