শনিবার, ২৫ মে, ২০১৯ ০০:০০ টা

পেশা শিক্ষকতা নেশা গাছ লাগানো

রেজাউল করিম মানিক, রংপুর

পেশা শিক্ষকতা নেশা গাছ লাগানো

রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৩৩ হাজার গাছ রোপণ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ। ক্লাস নেওয়ার পর  প্রতিদিন তিনি ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে গাছের খোঁজখবর নেন...

পেশা শিক্ষকতা হলেও পরিবেশের ভারসাম্য রক্ষার জন্য গাছ লাগানোই যেন তার নেশা। উত্তরের শ্রেষ্ঠ বিদ্যাপীঠ বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন জায়গায় নিজ উদ্যোগে গাছ লাগিয়ে সর্বস্তরের মানুষের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছেন শিক্ষক ড. তুহিন ওয়াদুদ। রংপুর শহরের উপকণ্ঠে ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠা করা হয় বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়। কারমাইকেল কলেজের বিস্তীর্ণ ৭৫ একর জমি ছিল শুধু চাষাবাদের জন্য। যখন এখানে বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা হয়, তখন ক্যাম্পাসে ছিল না কোনো গাছ। সেই সময়ই বিশ্ববিদ্যালয়কে সবুজের লীলাভূমি করতে গাছ লাগানোর উদ্যেগ নেন রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক তুহিন ওয়াদুদ। শিক্ষকতার পাশাপাশি সাংস্কৃতিক সংগঠন ‘রণন’ প্রতিষ্ঠা করেছেন। নদী নিয়ে কাজ করেন। রিভারাইন পিপলের পরিচালক। রংপুরের সামাজিক অনেক কাজেই তাকে দেখা যায়। এত কাজ করার পরও তিনি বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে ৩৩ হাজার গাছ রোপণ করে সবাইকে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন। ক্লাস নেওয়ার পর প্রতিদিন তিনি ক্যাম্পাস ঘুরে ঘুরে গাছের খোঁজখবর নেন।

রংপুর শহর থেকে ক্যাম্পাসের দিকে এলে প্রথম গেটটি উপাচার্যের বাসা সংলগ্ন। ওই গেট দিয়ে ঢোকার সময় প্রধান সড়কের পাশে সারিবদ্ধ জারুল গাছ। উপাচার্যের বাসার সামনে বিভিন্ন প্রজাতির গাছ। উপাচার্যের বাংলোর ভিতরে অনেক গাছ। সামনেই শেখ ফজিলাতুন নেছা মুজিব হল। হলের ভিতরে প্রায় দুইশ আম গাছ আছে। উপাচার্যের বাসার সামনে দিয়ে যে সড়ক চলে গেছে একাডেমিক ভবনের দিকে সেই সড়কটি এখন দৃষ্টিনন্দন সড়ক। দুই ধারে সবুজের দোল। ছিমছাম চেহারা পেয়েছে এই সড়ক শুধুই গাছের ছায়ায়। কিছুদূর গেলেই ডানে মসজিদ। মসজিদের সামনে সবুজের ভিড়। বাঁ দিকে আছে শিক্ষক কর্মকর্তাদের ডরমেটরি। এই ডরমেটরির সামনে কয়েকশ আম গাছ। মসজিদের পশ্চিমেও আছে সহস্রাধিক আম গাছ। আর একটু এগিয়ে ক্যাফেটেরিয়ার চারদিকে আছে ঘন সবুজ। পাশেই গ্রন্থাগার। এই গ্রন্থাগার যেন ডুবে আছে সবুজের সমুদ্রে। ছাত্রদের জন্য দুটি হল। এই হলের পূর্বদিকে সবুজ অরণ্য। হাজার হাজার গাছের এক বনাঞ্চল। হল দুটির পশ্চিমে সীমানা ঘেঁষে উঁচু সবুজ দেখা যায়। সেই সবুজের সামনেই দেড় সহস্রাধিক মেহগনির বাগান। চারটি একাডেমিক ভবন। খুব কাছাকাছি এগুলোর অবস্থান হলেও ঘন সবুজের কারণে মনে হয় যেন অনেক দূরে একেকটি ভবন। স্বাধীনতা স্মারকের পাশেই একটি জারুল বাগান। বিজয় সড়কের পাশে গগন শিরিষ, আর লম্বু গাছের সারি। প্রশাসনিক ভবনের চারদিকে দেবদারু গাছ বেড়ে উঠছে। এই যে ক্যাম্পাসজুড়ে সবুজের গল্প- এর নেপথ্যেও প্রধান মানুষটির নাম ড. তুহিন ওয়াদুদ।

তিনি শতাধিক প্রজাতির গাছ তিনি লাগিয়েছেন। কীভাবে এত গাছ লাগানো সম্ভব হলো এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, সমবায় পদ্ধতিতে এ গাছগুলো লাগানো সম্ভব হয়েছে। সবুজের পথে সংগঠনের সভাপতি শাহ ফরিদ এবং কয়েকজন সংগঠক। যে সংগঠন পাশে থেকে সবচেয়ে বেশ সহায়তা করেছে তার নাম রণন। যে কজন মানুষ বৃক্ষ লাগানের কাজে বেশি সহায়তা করেছে তারা হলেন বাবুর্চি প্রদীপ, নিরাপত্তাকর্মী বুলবুল, নুরুন্নবী, আবদুর রহিম, মালি শফিকুল ইসলাম, খালেদুল, চতুর্থ শ্রেণির কর্মচারী শাহজাহান। এরা প্রত্যেকে নিজেদের কাজ করার পর অবসর সময়ে এ কাজে সহায়তা করেছে।

তুহিন ওয়াদুদ জানান, তিনি নিজে পকেট থেকে কয়েক লাখ টাকা ব্যয় করেছেন এ গাছগুলো লাগানোর কাজে। অনেকভাবে নিজের টাকা বাঁচিয়ে তিনি একক চেষ্টায় গাছগুলোর পরিচর্যা করে যাচ্ছেন। তিনি জানান, গাছ রোপণ করে বড় করে তোলা খুব কঠিন কাজ। সব সময় সার্বিক তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে তিনি গাছগুলোকে বড় করে তুলেছেন।

সর্বশেষ খবর