শনিবার, ২৪ আগস্ট, ২০১৯ ০০:০০ টা

বিশ্ব মাতালেন বাংলাদেশি দুই আয়রনম্যান

শনিবারের সকাল ডেস্ক

বিশ্ব মাতালেন বাংলাদেশি দুই  আয়রনম্যান

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে অনুষ্ঠিত আয়রনম্যান ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশি দুই প্রতিযোগী আরাফাত ও সুমিত সাঁতার, সাইক্লিং ও দৌড় এই তিন ধাপে মোট ২৩১ কিলোমিটারের দুঃসাহসিক যাত্রা সম্পন্ন করে দুজনই পেয়েছেন সনদ...

 

জার্মানির ফ্রাঙ্কফুর্টে অনুষ্ঠিত আয়রনম্যান ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশি দুই প্রতিযোগী আরাফাত ও সুমিত সাঁতার, সাইক্লিং ও দৌড়-  এই তিন ধাপে মোট ২৩১ কিলোমিটারের দুঃসাহসিক যাত্রা সম্পন্ন করে দুজনই পেয়েছেন সনদ। আয়রনম্যান ইউরোপীয় চ্যাম্পিয়নশিপের ইতিহাসটা অনেক পুরনো। ১৯৭৭ সালে এ প্রতিযোগিতা প্রথম শুরু হয়েছিল। ইউএস নেভির মধ্যে আলোচনা হচ্ছিলÑ সাঁতারু, সাইক্লিস্ট আর রানারের মধ্যে কে বেশি স্ট্রংগার। তারপর একটা রেসের প্রচলন হয়। তিনটিতেই যারা সফল হবে তারা আয়রনম্যান। এমনই একজন আয়রনম্যান এখন বাংলাদেশি আরাফাত। পাঁচবার বাংলা চ্যানেল পাড়ি দিয়েছেন তিনি। দৌড়েছেন টেকনাফ থেকে তেঁতুলিয়া। সম্প্রতি আয়রনম্যান ইউরোপিয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিয়ে সফল হয়েছেন। পুরো নাম মোহাম্মদ শামসুজ্জামান আরাফাত। আরাফাতের মতো আরও একজন জার্মানপ্রবাসী বাংলাদেশি অংশ নিয়েছিলেন। তিনি সুমিত পাল। ১৪ ঘণ্টা ৪৫ মিনিট সময় নিয়ে সুমিত পালও আয়রনম্যান সমাপ্তকারী হিসেবে পদক ও সনদ পান।

এর আগে আয়রনম্যান আরাফাত ২০১৭ সালে আয়রনম্যান হতে মালয়েশিয়া গিয়েছিলেন। দেশে আয়রনম্যান কেউ না থাকায় অভিজ্ঞতা জানার সুযোগ ছিল না। সাইক্লিস্ট আবদুল্লাহ তাহিদ চৌধুরী সাইকেল দিয়ে সহযোগিতা করলেন। কিন্তু বিমানে পরিবহনের সময় সাইকেলটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। পরে মালয়েশিয়ার এক বন্ধুর সাইকেল নিয়ে রেসে অংশ নেন। আয়রনম্যান মালয়েশিয়া শেষ করেন ১২ ঘণ্টা ৪৩ মিনিটে। এর মধ্যে ৩.৮ কিলোমিটার ছিল সাঁতার, সাইকেল চালাতে হয়েছে ১৮০ কিলোমিটার আর দৌড়াতে হয়েছে ৪২ কিলোমিটার। মালয়েশিয়া আয়রনম্যান সফলভাবে সম্পন্ন করতে পারায় তার আত্মবিশ্বাস ছিল তুঙ্গে।

আরাফাত গণমাধ্যমকে বলেন, ‘আয়রনম্যান প্রতিযোগিতার ধরনটা একদম ভিন্ন। তাই চ্যালেঞ্জিং হিসেবে এই আয়োজনকেই এগিয়ে রাখছি।’ তাই তো ছুটে গিয়েছিলেন জার্মানি। এই আয়োজনের অভিজ্ঞতা গণমাধ্যমকে বলতে গিয়ে আরাফাত বলেন, ‘সাঁতার শুরু হবে ফ্রাঙ্কফুর্টের ল্যাঙ্গার ওয়াল্ডসি হ্রদে। আগে থেকেই সে জায়গা আমাদের জানা। সাঁতার শেষে সেখান থেকেই আবার শুরু হবে সাইক্লিং। এ জন্য আগের দিন সেখানে সাইকেল রেখে আসি। কিন্তু বিপত্তি বাধল সেখানে যাওয়ার সময়টায়। সুমিত পালসহ আমি যাচ্ছিলাম। ট্রাফিক নিয়ন্ত্রণের কারণে পুলিশ আমাদের অন্য রাস্তা ব্যবহার করতে বলে। কিন্তু জার্মান ভাষা না বোঝার কারণে বিপত্তি বাধে। আরাফাত ও সঙ্গীরা গুগল ম্যাপে ভরসা করে অন্য পথে যান। আরাফাত বলেন, ‘ঘুরেফিরে আবার যখন আগের জায়গাতেই ফিরে আসি, তখন বুঝলাম পথ ভুল করেছি। প্রতিযোগিতা শুরুর প্রায় দেড় ঘণ্টা আগে আমরা বাসা থেকে বেরিয়েছিলাম। ভুল পথের কারণে ততক্ষণে অনেকটা সময় পেরিয়ে যায়।’

এর পরই পানিতে নামেন আরাফাত ও সুমিত। শুরু হয় ৩ দশমিক ৮ কিলোমিটার পেরোনোর চ্যালেঞ্জ। এভাবে ধাপে ধাপে ১৮৫ কিলোমিটার সাইকেল চালিয়ে এবং ৪২ দশমিক ২ কিলোমিটার দৌড়ে আয়রনম্যান খেতাব জিতে নেন দুজন। আয়রনম্যান প্রতিযোগিতার কথা প্রথম শুনেছিলেন ২০১৩ সালে। আরাফাত বলেন, ‘সে সময় পার্থ আমার সঙ্গী দৌড়বিদ। কক্সবাজারে হাফ ম্যারাথনের সময় বলেছিল সে আয়রনম্যান হতে চায়। তারপর ইউটিউবে খোঁজখবর নেই। জানলাম এখানে সাইক্লিং একটা বড় অংশ। কিন্তু আমি কখনো সাইক্লিং করিনি। তখন সাইকেলও ছিল না আমার। নিজে একটা সাইকেল কিনি। কিন্তু রেসে অংশ নেওয়ার উপযোগী সাইকেল ছিল না সেটা।’ সাধারণ মানের ভালো একটি রেসিং সাইকেলের দাম সাড়ে ছয় লাখ টাকা। এনআরবি কমার্শিয়াল ব্যাংককে সাইকেলের স্পন্সর হওয়ার আবেদন করেন। এ বছর ফেব্রুয়ারির ১৫ তারিখে সাইকেল পেলেন। ইউরোপিয়ান আয়রনম্যান চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য রেজিস্ট্রেশন করেছিলেন এর মধ্যেই। চার মাস অনুশীলন শেষে তাতে অংশ নেন জুনের ৩০ তারিখে। এখানে তিনি ১২ ঘণ্টা ১৪ মিনিট সময় নিয়ে সবই সম্পন্ন করেন। এখানে সাঁতরেছেন ৩.৮ কিলোমিটার, সাইকেল চালিয়েছেন ১৮৫ কিলোমিটার, দৌড়েছেন ৪২.২ কিলোমিটার। ফ্রাঙ্কফুর্টে অনুষ্ঠিত এ প্রতিযোগিতায় ৮১টি দেশের তিন হাজার ৩৬০ জন নাম লিখিয়েছিলেন। তবে শেষ পর্যন্ত অংশ নেন দুই হাজার ৭৪৮ জন। নির্ধারিত ১৫ ঘণ্টার মধ্যে সব রেস শেষ করতে পারেন দুই হাজার ৬৮ জন। আরাফাত বয়সভিত্তিক ক্যাটাগরিতে ৬০তম হন। দুই হাজার ৭৪৮ জনের মধ্যে ৮২১তম হন। অংশগ্রহণকারী ৯৬ জন এশীয়র মধ্যে পঞ্চম হন। সাইক্লিং, সাঁতার ও দৌড় একত্রে তিনটাতেই জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রেকর্ড গড়তে পারাই আয়রনম্যান হওয়ার যোগ্যতা। আরাফাত এ লাইনে ইতিমধ্যেই বেশ কয়টি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক রেকর্ড গড়েছেন।

ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা জানিয়েছেন আয়রনম্যান আরাফাত, ‘আয়রনম্যান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপে অংশ নিতে চাই। এতে অংশ নিতে ভালো প্রস্তুতি দরকার। আমার পরিকল্পনা, সময় লাগলেও আয়রনম্যান ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপের জন্য কোয়ালিফাই করা। বিশ্বের ৪৫টি দেশে আয়রনম্যান হয়। সেখান থেকে সেরা অ্যাথলেটদের বাছাই করে ইউএসের হাওয়াইতে ওয়ার্ল্ড চ্যাম্পিয়নশিপ হয়।’

সর্বশেষ খবর