মানুষকে বই পড়ার জন্য উৎসাহিত করতে এগিয়ে যাচ্ছে পাঠাগার আন্দোলন বাংলাদেশ। তরুণ ইমাম হোসেনের প্রচেষ্টায় এই আন্দোলন এখন সারা দেশে ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের বৃহত্তর মানব গোষ্ঠীর শিক্ষার সম্পূরক চাহিদা পূরণের লক্ষ্যে এগিয়ে চলছে এই আন্দোলন। ইমাম হোসেন বলেন, ‘পাঠাগারের এগিয়ে চলাকে সুসংগঠিত ও অব্যাহত রাখতে এই গঠনতন্ত্র প্রণয়ন করা হয়েছে। দেশের সর্বস্তরের মানুষ/পাঠকের পছন্দ ও রুচি অনুযায়ী শিক্ষার সম্পূরক চাহিদা মেটানোই হচ্ছে এই পাঠাগারের প্রথম ও পবিত্রতম দায়িত্ব। পাশাপাশি এই পাঠাগারের ফাউন্ডেশন সামাজিক বিভিন্ন কর্মকান্ডে অংশ গ্রহণ করছে।’
এটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। বাংলাদেশি জাতীয়তা ও ধর্মীয় মূল্যবোধ বজায় রেখে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে পাঠাগার ও পাঠাগার ফাউন্ডেশনের কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়ে থাকে। ইমাম হোসেন বলেন, ‘রুটি-মদ ফুরিয়ে যাবে প্রিয়ার কালো চোখ ঘোলাটে হয়ে যাবে; কিন্তু এক খানা বই অনন্ত যৌবনা যদি তেমন বই হয়- পারস্যের বিখ্যাত কবি ওমর খৈয়াম এই অসাধারণ উক্তিটি করেছিলেন। বই নিয়ে করা বহু উক্তি হতে এই উক্তিটি টেনে আনলাম- কারণ জীবনের নিত্যসঙ্গী রুটি ও প্রিয়া একদিন কালের গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে কিন্তু একটি বই মহাকালে স্মৃতিকে জীবিত করে রাখবে এই উপলব্ধি থেকে। বইয়ের আবদারকে আন্তরিকতার সহিত সশ্রদ্ধ স্বাগত জানিয়েছেন কালক্রমে এই ধরালয়ে এসেছেন বহু বই দরদি। তাদের সমগ্র দেমাগজুড়ে বইয়ের কদর ছিল দৃষ্টিনন্দিত।’
ইমাম হোসেন আরও বলেন, ‘বইয়ের প্রতি অপরিসীম দরদ ও ভালোবাসা জন্মে কৈশোরের সূচনালগ্নে। তখন পড়ি সপ্তম শ্রেণিতে। তখন থেকেই গলাধঃকরণ করতে থাকি বিশ্বখ্যাত বিজ্ঞানী, মনীষী, সাহিত্যিক ও সমাজসেবীদের জীবনী ও তাদের শ্রেষ্ঠ কর্ম। বিশেষ করে- বিদ্রোহী কবি নজরুল, কবিগুরু রবি ঠাকুর, জর্জ বার্নাডশ, প্রেসিডেন্ট আব্রাহাম লিংকন, টমাস আলভা এডিসন, পল পি হ্যারিস, শেখ সাদী, নওয়াব আবদুল লতিফ, বিদ্যাসাগর ও হাজী মুহসীনসহ আরও অনেকের। তখন থেকেই মনে-প্রাণে অভিপ্রায় জাগে আমাদের দেশের প্রতিটি মানুষ যদি তাদের মতো হতো। তারপর আত্মোপলব্ধি করি যে শিক্ষার বিকল্প কিছু নেই। ঠিক তখন প্রত্যাশা ও দৃঢ় প্রত্যয় করি এই বাংলার প্রতিটি মানুষের কাছে যাব বইয়ের আকুতি নিয়ে যা কালক্রমে ছড়িয়ে পড়বে পৃথিবীর পথে পথে। বুকভরা আশা, সাহস, ত্যাগ, ধৈর্য ও আত্মবিশ্বাস ঢেলে গড়ে তুলার চেষ্টা করছেন বইয়ের জনপদ। বর্তমান প্রায় ২০-২১ সহস্রাধিক বই নিয়ে এগিয়ে চলছে এই আন্দোলন। এই ইমাম হোসেন একসময় চায়ের দোকানের কাজ থেকে শুরু করে দিনমজুরির কাজ, মাটিকাটা, ম্যানহোলের কাজ, দারোয়ানি, বাসার কাজ, রাজজোগালি, কাঠমিস্ত্রি ও সয়েল টেস্ট ইঞ্জিনিয়ারিংসহ প্রায় সব রকমের কাজই করেছেন। ইমাম হোসেন বলেন, আমাকে অনেক অনেক বই কিনতে হবে এবং এদেশে প্রতিটি মানুষের কাছে বইয়ের কদর পৌঁছাতে হবে।
আর কাজের তাগিদে যেতে হয়েছে গ্রাম থেকে গ্রামান্তরে, শহর থেকে শহরান্তরে। কুমিল্লার অলি-গলি হতে শুরু করে চাঁদপুর, বি-বাড়িয়া, ফেনী, লক্ষ্মীপুর, নোয়াখালীসহ চট্টগ্রামের বহু স্থানে- নিউমার্কেট, কদমতলী, বদ্দারহাট, দুই নাম্বার, ষোলশহর, অলংকার, অক্সিজেন, রূপনগর, পাঁচলাইশ, টার্মিনাল ও জি ই সি মোড়সহ আরও অনেক স্থানে। আমার এসব কর্মের পেছনে উৎসাহের আঞ্জাম দিতেন আমার মা, বন্ধুমহল ও প্রিয় জহির স্যার, মিজান স্যার, আমির স্যার, জাকারিয়া স্যারসহ আরও অনেকেই। বই সংগ্রহের ক্ষেত্রে যিনি সবচেয়ে বেশি প্রেরণা জুগিয়েছেন তিনি হলেন আমার মাধ্যমিক পর্যায়ের ইংরেজি শিক্ষক শ্রদ্ধেয় মো. সিরাজুল ইসলাম স্যার ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের ধামতীর মো. মাহবুবুর রহমান চৌধুরী স্যার। তারা প্রচন্ড বই প্রেমে মগ্ন একজন মানুষ। যারা সবসময় আমাদের পাঠ্য বইয়ের পাশাপাশি অন্যান্য বই পড়তে বিশেষ গুরুত্ব দিতেন। একদিন হয়তো আমি থাকব না কিন্তু এই পাঠাগার আন্দোলন ছড়িয়ে যাবে বিশ্বের প্রতিটি প্রান্তরে আর বইয়ের আলোয় আলোকিত করবে প্রতিটি মানুষের অন্তরাত্মাকে আর তখনই মানুষ, মানুষ কে মানুষ হিসেবে মূল্যায়ন করবে আর স্রষ্টা খুঁজে পাবে তার সৃষ্টির উদ্দেশ্য।’
পাঠাগার আন্দোলন বাংলাদেশে শুরু হয়েছিল ২০০৫ সালে। প্রধান নির্বাহী হিসেবে কাজ করছেন শাকিলা সরকার। এর প্রধান কার্যালয় কুমিল্লার ধর্মসাগর উত্তরপাড়।