শনিবার, ২৯ ফেব্রুয়ারি, ২০২০ ০০:০০ টা
সফল

খুনের আসামি থেকে নোবেল জয়ী

খুনের আসামি থেকে নোবেল জয়ী

এম এ পড়ার সময়ে অভিজিৎ বামপন্থি রাজনীতিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং সেখানে বেশি তৎপর হওয়া শুরু করেন। অনেকের মতে এই বামপন্থি মেজাজ ও অর্থনৈতিক পান্ডিত্য তার বাবা ও মার কাছ থেকে পেয়েছিলেন। লিখেছেন খান মোহাম্মদ (সুজন)

 

২০১৯ সাল, বৈশ্বিক দরিদ্রতা দূরীকরণের ভূমিকা রাখায় এস্থের দুফ্লো এবং মাইকেল ক্রেমারের সঙ্গে অর্থনীতিতে যৌথভাবে নোবেল পুরস্কার বিজয়ী হন অভিজিৎ বিনায়ক  ব্যানার্জি। তবে এই যাত্রা এতটা সহজ ছিল না। এমনও হতে পারত এই নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ হয়তো বেঁচে নাও থাকতে পারতেন। হয়তো তার ফাঁসি হয়ে যেতে পারত নতুবা যাবজ্জীবন কারাদন্ডে দন্ডিত হয়ে আজীবন কাটাতে হতো কোনো এক অন্ধকার কারাগারে। তবে যার রক্তেই অর্থনীতি তাকে কোনো প্রকার চাপ নীতিই যে চাপিয়ে বা দমিয়ে রাখতে পারবে না তার আন্দাজ সবাই করতে পেরেছিল বটে। বাবা দীপক ব্যানার্জি কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজের অর্থনীতি বিভাগের প্রধান ও অধ্যাপক এবং মা নির্মলা ব্যানার্জি ছিলেন সেন্টার ফর স্টাডিজ ইন সোশ্যাল সাইন্স কলকাতা অর্থনীতি বিভাগের একজন অধ্যাপক। ১৯৬১ সালের ২১ ফেব্রুয়ারিতে ভারতের মুম্বাইয়ে জন্মগ্রহণ করেন অভিজিৎ বিনায়ক  ব্যানার্জি। পড়ালেখায় বরাবরই ভালো প্রতিভা দেখিয়েছেন অভিজিৎ। ১৯৮১ সালে বি এস ডিগ্রি অর্জন করেন কলকাতার প্রেসিডেন্সি কলেজ থেকে এবং ১৯৮৩ সালে অর্থনীতিতে এম এ ডিগ্রি অর্জন করেন দিল্লির জহরলাল বিশ্ববিদ্যালয় থেকে। নির্মল স্বভাবের একটি পড়ুয়া ছেলের ভিতরে যে প্রতিবাদের আগুন রয়েছে তা অভিজিতের প্রকাশ্যে অন্যায়ের সমালোচনা পর্যালোচনা করলেই বোঝা যায়। এম এ পড়াকালীন সময়ে অভিজিৎ বামপন্থি রাজনীতিতে আগ্রহ প্রকাশ করেন এবং সেখানে বেশি তৎপর হওয়া শুরু করেন। অনেকের মতে এই বামপন্থি মেজাজ ও অর্থনৈতিক পান্ডিত্য তার বাবা ও মার কাছ থেকে পেয়েছিলেন। অভিজিৎ তখন ফাইনাল ইয়ারে পড়ছিলেন আর সালটা ১৯৮৩, ক্ষমতায় ছিলেন ইন্দিরা গান্ধী এবং সব স্থানেই টানটান উত্তেজনা বিরাজ করছিল। ঠিক সেই সময় ছাত্র সংসদের প্রেসিডেন্টকে অবৈধভাবে বরখাস্ত করে। এই প্রতিবাদে তৎকালীন উপাচার্য পি এন শ্রীবাস্তবকে নিজ অফিসে আটক করে অনির্দিষ্টকালের জন্য অবরোধ ডাকে ছাত্ররা। পরবর্তীতে পুলিশের বেধরক মার, লাঠিচার্যের মাঝে মুক্ত করে নিতে শামিল হয়েছিল তৎকালীন ভিসিকে, পুলিশের মারে আহত হয়েছিল বর্তমান সময়ে অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী অভিজিৎ ব্যানার্জি। তখন তার বয়স মাত্র ২৩ বছর। সব আটক করা ছাত্রকে নিয়ে যাওয়া হয় পুনের তিহার জেলে এবং সেখানে শারীরিক সব প্রকার শাস্তি পেতে হয়েছিল আটকদের। এই শাস্তি থেকে বাদ পড়েনি অভিজিৎ ব্যানার্জিও। এমনকি রাষ্ট্র্রদোহী মামলা, খুনের চেষ্টার অভিযোগের মামলা দেওয়া হল যা ছিল একেবারেই বানোয়াট ও ভিত্তিহীন। এসব তথ্য ২০১৬ সালে অভিজিৎ ব্যানার্জি নিজেই বলেছিলেন যখন জে এন ইউ আবারও উত্তাল হয়েছিল এবং বিশিষ্ট কিছু ব্যক্তির বিরুদ্ধে রাষ্ট্রদ্রোহের মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছিল। বর্তমান সময়ের মোদি সরকারের যদি কোনো কড়া সমালোচক থাকেন তবে তিনি অভিজিৎ ব্যানার্জি। তাইতো ২০১৬ বক্তৃতা শেষে বলেছিলেন রাষ্ট্র তখনো যেমন অবিবেচক ছিল এখন ঠিক তেমনি আছে।

 

যদিও এতদিন ধরে তার পরিচয় ছিল এম.আই.টির অধ্যাপক এবং বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ হিসেবে। কিন্তু নোবেল জয় করে ফেলবেন এমনটা কেউ ভাবেনি। তিনি অমর্ত্য সেনের পর অর্থনীতিতে নোবেল পাওয়া দ্বিতীয় বাঙালি এবং নোবেল জয়ী চতুর্থ বাঙালি। এছাড়াও অভিজিৎ ও এস্তের দম্পতি হলো পঞ্চম নোবেল বিজয়ী দম্পতি। রক্তে যেহেতু বাংলা মিশে রয়েছে, তাই মাঝে মাঝেই এম.আই.টিতে বাংলায় বক্তৃতা দিয়ে থাকেন, আর অর্থনীতির কোনো জটের সমাধান দিতে মস্তিষ্কে জট পাকালেই গুনগুন করে শুরু করে দেন গান। এমনকি বাদ্যযন্ত্র নিয়েও বসে পড়েন এই ভারতীয় ক্লাসিক্যাল সংগীতের ভক্ত। এখন তার সাফল্যের পাহাড়ের নিচে চাপা পড়ে গেছে রাষ্ট্রদোহের অভিযোগ মাথায় নিয়ে দিনরাত কাটানো এবং খুনের মামলার আসামি হয়ে জেলখানায় সহ্য করা অমানবিক অত্যাচার।

সর্বশেষ খবর