শিরোনাম
শনিবার, ১৯ জুন, ২০২১ ০০:০০ টা
আন্তর্জাতিক অঙ্গনে চুয়েটের অর্জন

নদীভাঙন ঠেকাবে নির্মাণ ও শিল্পবর্জ্য

নিজস্ব প্রতিবেদক, চট্টগ্রাম

নদীভাঙন ঠেকাবে নির্মাণ ও শিল্পবর্জ্য

নদীমাতৃক দেশ বাংলাদেশ। বন্যা, জলোচ্ছ্ব স, ঘূর্ণিঝড়ে নদীভাঙন নিত্য ঘটনা। কিন্তু দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোতে এ প্রাকৃতিক দুর্যোগ সমস্যায় নেই কোনো সাশ্রয়ী, পরিবেশবান্ধব, স্থায়ী ও টেকসই সমাধান। পক্ষান্তরে নির্মাণ ও শিল্প কারখানার বর্জ্য সঠিক ব্যবস্থাপনায় নিষ্কাশনের ব্যবস্থাও অপ্রতুল। তবে চট্টগ্রাম প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (চুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থীর দল ‘চুয়েটএক্স’ নদীভাঙন সমস্যা রোধে নতুন পদ্ধতি উদ্ভাবন করেন। চুয়েটএক্স উপস্থাপন করে প্রচলিত স্যান্ডব্যাগ বালুর বস্তা এবং কংক্রিট ব্লকের পরিবর্তে নির্মাণ ও শিল্পবর্জ্য রিসাইকেলিং করে উৎপাদিত জিও পলিমার কংক্রিটের ব্লক ব্যবহারে স্থায়ী পরিবেশবান্ধব উপায়ে নদীভাঙন ঠেকানো সম্ভব।

আমেরিকান কংক্রিট ইনস্টিটিউট (এসিআই) আয়োজিত ‘কংক্রিট সলিউশনস’ শীর্ষক আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় নির্মাণ-শিল্পবর্জ্য রিসাইকেলিং করে পুনঃব্যবহারের ধারণাটি উপস্থাপন করে গ্লোবাল হায়েস্ট স্কোর ক্যাটাগরিতে তৃতীয় স্থান অর্জন করেছে বাংলাদেশের গর্বের প্রতিষ্ঠান চুয়েটের পুরকৌশল বিভাগের একঝাঁক তরুণ শিক্ষার্থীর দল ‘চুয়েটএক্স’। টিমের উপস্থাপিত বিষয় ছিল Recycled Geopolymer Concrete : A Shield Against Riverbank Erosion.    

গত ৩০ মার্চ বাংলাদেশ সময় রাত ১১টায় এসিআই স্প্রিং কনভেনশন-২০২১ এর ভার্চুয়াল প্ল্যাটফরমে এ ফলাফল ঘোষণা করা হয়। প্রতিযোগিতায় প্রথম স্থান অর্জন করে ইকুয়েডরের ইউনিভার্সিটি সানফ্রানসিস্কো দেকুইতো এবং দ্বিতীয় স্থান অর্জন করে ফিলিপাইনের বাতান পেনিনসুলা স্টেট ইউনিভার্সিটি। প্রতিযোগিতায় অংশ নেয় পৃথিবীর প্রায় ২৫০টি বিশ্ববিদ্যালয়। চুয়েট থেকে অংশগ্রহণকারী চুয়েটএক্স টিমের সদস্যরা হলেন- পুরকৌশল বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী লামইয়া ইসলাম ও আনিকা ফারজানা, তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী তাহসিন মাহমুদ, সাফকাত আর রুম্মান, ইসরাত জাহান ও মোসাদ্দেক হামিম, দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী মাহতাব ইশমাম ও মুমতাহিনা আলম। চুয়েটএক্স টিমের ফ্যাকাল্টি অ্যাডভাইজার ও মেন্টরের দায়িত্বে ছিলেন পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জি এম সাদিকুল ইসলাম। দলের সমন্বয়ক ছিলেন পুরকৌশলের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী শাহরিয়ার ইবনে বাশার।

পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. জি এম সাদিকুল ইসলাম বলেন, ‘স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে এটি বাংলাদেশের অন্যতম বড় অর্জন। বর্তমান বিশ্বে নির্মাণকাজে সর্বোচ্চ ব্যবহৃত উপাদান হলো কংক্রিট। কংক্রিট ব্যবহারে বাইন্ডিং  ম্যাটেরিয়াল হিসেবে সিমেন্টের অত্যধিক কার্বনডাই অক্সাইডের নিঃসরণ, জলবায়ুর নেতিবাচক পরিবর্তনের (বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাসের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ) অন্যতম প্রভাবক। পক্ষান্তরে কংক্রিটের ব্যবহার প্রাকৃতিক উপাদানসমূহের ক্রমবর্ধমান ঘাটতি সৃষ্টিতে দায়ী। চুয়েটএক্স টিমের উদ্ভাবিত পদ্ধতি ব্যবহার করে নির্মাণ ও শিল্প-কারখানার বর্জ্য পুনঃপ্রক্রিয়ার মাধ্যমে উৎপাদিত জিও পলিমার কংক্রিট ব্লকের ব্যবহার দেখিয়ে একটি স্থায়ী ও পরিবেশবান্ধব প্রস্তাবনা উপস্থাপন করে চুয়েটএক্স টিম।’

চুয়েটএক্স দল জানিয়েছে, প্রচলিত কংক্রিট ব্লক ও জিও পলিমার ব্লকের মূল পার্থক্য হলো- এর বাইন্ডিং ম্যাটেরিয়াল। জিও পলিমার ব্লকে ব্যবহার করা হয় সোডিয়াম হাইড্রোঅক্সাইড বা পটাশিয়াম হাইড্রোঅক্সাইড এবং সোডিয়াম সিলিকেট। এর সঙ্গে থাকে অ্যালুমিনিয়াম সিলিকার একটা উৎস, যেমন ফ্লাই অ্যাশ, স্ল্যাগের মতো শিল্পবর্জ্য ও নির্মাণবর্জ্য। সিমেন্টের তুলনায় এসব উপাদানের তেমন কোনো ক্ষতিকর দিক নেই।

সর্বশেষ খবর