খন্দকার কবীর হোসেনের নার্সারির ‘আশ্চর্য ফল’ আলোড়ন সৃষ্টি করেছে দেশজুড়ে। যশোর সেনানিবাস-লাগোয়া গ্রাম ছাতিয়ানতলা; সেখানেই তার নার্সারিতে ফলছে বেশ কয়েকটি মরণব্যাধির প্রতিকারক ফল ‘ননী’। খেয়ে বহু রোগের উপকার পেয়েছে বলেই লোকমুখে এটা ‘আশ্চর্য ফল’ নামে পরিচিতি পেয়েছে। খন্দকর কবীর হোসেন ২০০৮ সালে জাতিসংঘ শান্তিবাহিনীর সদস্য হিসেবে আফ্রিকার কঙ্গোয় ছিলেন। তিনি বলেন, কঙ্গোতে তিনি ননী ফলের ভালো একটি জাতের সন্ধান পান। দুই প্যাকেট বিস্কুটের বিনিময়ে কঙ্গোর এক ব্যক্তির কাছ থেকে তিনি ৫টি ননী ফল সংগ্রহ করেন। শান্তি মিশনে কর্তব্য পালন শেষে দেশে ফিরে এসে যশোর সদর উপজেলার ছাতিয়ানতলা এলাকায় নিজের বাড়িতে ওই ফলের বীজ থেকে চারা তৈরি করেন।
ননী ফলের বৈজ্ঞানিক নাম ‘গ্রেভিওলা’। তিনি বলেন, ক্রান্তীয় অঞ্চল তথা ভারত উপমহাদেশের বিভিন্ন স্থানে প্রাকৃতিকভাবেই গুল্মজাতীয় এ গাছটির একটি বুনো জাত জন্মায়। ননী গাছের শেকড়, বাকল, পাতা, ফল প্রাচীনকাল থেকেই আয়ুর্বেদ শাস্ত্রে ব্যবহৃত হয়ে আসছে। দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার দেশগুলোতে সর্দি-কাশি, লিভারের সমস্যা, ম্যালেরিয়া প্রতিরোধে ননী ফলের রস ব্যবহার করা হয়। তবে আধুনিক গবেষণায় এই ফলের নানা গুণের কথা বেরিয়ে আসায় তা মানুষের মধ্যে আগ্রহের সৃষ্টি করেছে। ক্যান্সার এবং বিভিন্ন সংক্রমণজনিত রোগ, আথ্রাইটিস, ডায়াবেটিস, হাঁপানি, উচ্চ রক্তচাপ, শরীরে যে কোনো ধরনের ব্যথা নিরাময়ের উপাদান আছে এতে। ননী ফলে ক্যান্সার ফাইটিং নিউট্রিয়েন্ট ও টিউমার ফাইটিং উপাদান রয়েছে। বিশেষ করে ব্রেস্ট ক্যান্সারের ক্ষেত্রে এটি ভালো ফল দিচ্ছে বলে মানুষ জানাচ্ছেন। ননী ফলের রস রক্ত পরিষ্কার করে ও শরীর থেকে দূষিত পদার্থ বের করে দেয়। এর রস অ্যান্টি ফাঙ্গাস ও অ্যান্টি ব্যাকটেরিয়াল গুণ থাকায় পেটের সমস্যা, চর্মরোগ, মাথার ঠুলির বিভিন্ন অস্বস্তি, চুলকানি, খুশকি কমাতে সাহায্য করে। ননী গাছে ছয় মাস বয়স থেকেই ফল আসতে শুরু করে। সারা বছরই এতে ফল ধরে। এই ফলে প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন বি-১, বি-২, বি-৩, বি-১২, ভিটামিন-সি, ক্যালসিয়াম, পটাশিয়াম, ম্যাগনেসিয়াম, আয়রন, ফসফরাসসহ নানা উপাদান থাকে।
খন্দকার কবীর হোসেন বলেন, ছয় মাসের মধ্যেই এসব গাছে ফল ধরতে শুরু করে। প্রথম দিকে এই ফল সম্পর্কে স্থানীয় লোকজন কিছু জানত না। পরে ইউটিউব, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমে এই ফলের গুনাগুণ ছড়িয়ে পড়লে ব্যাপক আগ্রহের সৃষ্টি হয়। কবীর জানান, যশোরে এক বিঘা জমি এবং গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় ৫ বিঘা জমিতে তিনি ননী ফলের চাষ করছেন। কবীর হোসেন বলেন, ননী ফলের চারা ছোট-বড় অনুযায়ী ১ হাজার থেকে ৩ হাজার টাকায় বিক্রি করছেন তিনি। এ ছাড়া ননী ফল বিক্রি করছেন প্রতি কেজি ৩ হাজার টাকায়। তবে অসহায় দরিদ্র মানুষ রোগ-শোকের কারণে তার কাছে ননী ফল চাইলে তিনি তা বিনামূল্যেই দিয়ে থাকেন। ঝিনাইদহের মহেশপুর উপজেলার আজমপুর গ্রামের নাজমুল বলেন, ‘আমার খালুর ক্যান্সার, কিডনিতেও সমস্যা। সারা শরীরে ব্যথা। এই ফলের জুস খাওয়ার দুই-তিন দিনের মধ্যেই খালুর শরীরের সব ধরনের ব্যথা চলে যায়। ক্যান্সারের ক্ষেত্রেও বেশ উপকার পাওয়া যাচ্ছে। তাই চার মাস ধরে খালু এই জুস খেয়ে যাচ্ছেন।