শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র চট্টগ্রাম। সরকারি উদ্যোগে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের ঠিকানা। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতায় বঞ্চিত শিশুরা সৃজনশীলতা থেকে বঞ্চিতই থেকে যাচ্ছে। শিশুদের চিত্তবিনোদন, একটু খেলার সুযোগ, শিশুদের মাতৃপরশ দেওয়ার মতো সৃজনশীল কাজ করার ইচ্ছা ও চেষ্টা থাকে কেন্দ্রটির। কিন্তু ‘সাধ থাকলেও সাধ্য নেই’ প্রবাদটি পিছে পিছে চলছিল প্রতিষ্ঠানটির। নানা সীমাবদ্ধতায় শিশুদের মানসিক বিকাশের মতো অনেক কিছুই অপূর্ণ থেকে যায়।
কিন্তু এমন অপূর্ণতার মধ্যে এগিয়ে এলেন হাটহাজারী উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার মোহাম্মাদ রুহুল আমিন। কেন্দ্রে যুক্ত করা হয় শিশুদের বিনোদনের প্রয়োজনীয় নান্দনিক নানা অনুষঙ্গ। বঞ্চিত শিশুদের কাছে গেল বর্ণিল-সৃজনশীল নানা অনুষঙ্গ। তাঁর ব্যক্তিগত উদ্যোগে বাচ্চাদের খেলাধুলার জন্য তৈরি করা হয় ‘শিশুরাজ্য-৩’ নামে একটি শিশুপার্ক, সংস্কার করে খেলাধুলার উপযোগী করে গড়ে তোলা হয় মাঠ, শীতকালে ব্যাডমিন্টন খেলার জন্য প্রস্তুত করে দেওয়া হয় সুপরিসরের চমৎকার একটি ‘ব্যাডমিন্টন কোর্ট’, সংস্কার করে দেওয়া হয় কেন্দ্রের অভ্যন্তরের কিছু সড়ক এবং সীমানা দেয়াল। উদ্ধার করা হয় অবৈধ দখলে থাকা কেন্দ্রের কিছু জমি।
মোহাম্মাদ রুহুল আমিন বলেন, ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে হাটহাজারীতে যোগদান করি। এরপর থেকে নিয়মিত এই কেন্দ্রের উন্নয়নে মনোযোগ দিয়েছি। কেন্দ্রের শিশুদের শিক্ষা, স্বাস্থ্যসহ নানা বিষয়ে উদ্যোগ নিয়েছি। করোনা মহামারির কারণে কর্মযজ্ঞ কিছুদিন বন্ধ ছিল। তবে বদলির কয়েক মাস আগে এ কেন্দ্রে সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের বিনোদনের জন্য স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যক্তিদের সঙ্গে নিয়ে এক গুচ্ছ উদ্যোগ গ্রহণ করি। পরে বদলি হলেও কাজ চলাকালে পুরোদমে তত্ত্বাবধান করি। এখন শিশুদের জন্য এসব নানা অনুষঙ্গ উন্মুক্ত যোগ করা হয়।
শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রের উপ-পরিচালক জেসমিন আকতার বলেন, কেন্দ্রের শিশুদের মানসিকতা বিকাশ ও খেলাধুলার কিছু অনুষঙ্গের ঘাটতি ছিল। হাটহাজারী উপজেলার সাবেক নির্বাহী অফিসার নিজ উদ্যোগে ব্যাপক উন্নয়ন কাজ সম্পন্ন করে দিয়েছেন। বিশেষ করে খেলার মাঠ, ব্যাডমিন্টন কোর্ট ও বিনোদনের নানা উপকরণগুলো পেয়ে শিশুরা যারপরনাই খুশি হয়েছে। তিনি বলেন, নিয়মানুযায়ী তিনি অন্যত্র বদলি হলেও চলমান কাজের নিয়মিত খোঁজ রাখতেন। কেন্দ্রের কর্তাদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ রাখেন। উন্নয়ন কাজ সরেজমিন দেখতেও আসেন। সংস্কারকৃত মাঠে শিশুদের খেলাধুলা করতে দেখে সবাই অনেক খুশি।
জানা যায়, ঝুঁকিতে থাকা পথ শিশুদের সমাজের মূল ধারাতে অন্তর্ভুক্তকরণ ও শিশু অধিকার নিশ্চিতকল্পে কাজ করে শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্র। চট্টগ্রাম জেলার হাটহাজারী উপজেলার ফরহাদাবাদ ইউনিয়নে ২০১২ সালের আগস্ট মাসে কেন্দ্রটি প্রতিষ্ঠা হয়। সরকারের চলমান এই শিশুবান্ধব কার্যক্রমের অংশ হিসেবে দেশের ১৩টি জেলায় এ কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা হয়। বর্তমানে এই কেন্দ্রে ১০৪ জন ছেলেশিশু এবং ১০২ জন মেয়েশিশু আছে। ছয় বছর থেকে অনূর্ধ্ব ১৮ বছরের পথশিশু, শিশু শ্রমিক, মাতা-পিতা বা অভিভাবকের স্নেহবঞ্চিত শিশু, গৃহকর্মে নিয়োজিত শিশু, পাচার থেকে উদ্ধারকৃত শিশু, হারিয়ে যাওয়া শিশু, নির্যাতনের শিকার হয়ে ঝুঁকিতে থাকা শিশু, বাল্যবিয়ের শিকার শিশুসহ মোট ১৩ ধরনের সুবিধাবঞ্চিত শিশুদের পুনর্বাসনের জন্য কাজ করে যাচ্ছে সরকারি এ প্রতিষ্ঠানটি। চট্টগ্রামের শেখ রাসেল শিশু প্রশিক্ষণ ও পুনর্বাসন কেন্দ্রটির শিশুবান্ধব সেবা কার্যক্রম ইতোমধ্যে নানা শ্রেণির মানুষের মাঝে ব্যাপক সচেতনতা সৃষ্টি করেছে।