সুপারি গাছের খোল গ্রামে খুবই সহজলভ্য। এটি সাধারণত জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এই খোল দিয়ে বিভিন্ন ধরনের ওয়ানটাইম তৈজসপত্র তৈরি করার বিষয়টি অনেকেরই অজানা। সুপারি গাছের খোল দিয়ে তৈজসপত্র তৈরি করে তাক লাগিয়ে দিয়েছেন ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার তিন তরুণ উদ্যোক্তা...
ভোলার চরফ্যাশন উপজেলার তিন তরুণ উদ্যোক্তা- চরফ্যাশন উপজেলার ওসমানগঞ্জ ইউনিয়নের ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক সেনাসদস্য সোয়েব মিয়া, সদর পৌরসভা ৭ নম্বর ওয়ার্ডের সিঙ্গাপুর প্রবাসী নূরে আরাফাত এবং ইঞ্জিনিয়ার রিফাত ভূঁইয়া। তাদের সুপারি খোলের তৈজসপত্রের ওয়ানটাইম থালা ও বাটি তৈরির কারখানা নজর কেড়েছে জেলাজুড়ে। তৈজসপত্রের এই কারখানা সুপারি গাছের ঝরে পড়া পাতাকে বরিশাল-ভোলার মানুষ খোল বলে থাকে। ঝরে পড়া খোল গ্রামগঞ্জে জ্বালানি হিসেবেই ব্যবহার করে। প্রধান উদ্যোক্তা আরাফাত ইউটিউবে ভিডিও দেখে উজ্জীবিত হয়ে সুপারির খোল দিয়ে নানা পরিবেশ বান্ধব তৈজসপত্র তৈরি করা শুরু করেন। এরপর চলতি বছরের জানুয়ারিতে জনতা বাজার প্রধান সড়কের পাশে ‘ইকো ড্রিম বিডি’ নামে কারখানা করেন। আটজন কর্মচারী ও প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি বসিয়ে স্থানীয়দের কাছ থেকে সুপারি পাতার খোল ক্রয় করে কারখানায় তৈরি করতে থাকেন এসব কুটিরশিল্প পণ্য। অনলাইন ও অফলাইনে অর্ডার নিয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে সরবরাহ করেন এসব তৈজসপত্র। চাহিদা বাড়লে বিদেশেও রপ্তানি করার পরিকল্পনা রয়েছে তাদের। সুপারিপাতার খোল দিয়ে বিভিন্ন তৈজসপত্র তৈরির জন্য চীন থেকে মেশিন কিনে উৎপাদন শুরু করেন। কুটির শিল্পের পরিবেশবান্ধব এই জিনিসপত্রের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কারখানায় উৎপাদনে ব্যস্ত সময় পার করছেন শ্রমিকরা। এই কারখানাটির মাধ্যমে গ্রামে বেকার তরুণ-তরুণীদের কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে। গ্রামে সুপারির খোল এখন বিক্রি হচ্ছে এবং গৃহিণীরা খোলপাতা বিক্রি করে সংসারে অর্থ জোগান দিচ্ছেন। প্রবাদ আছে- ধান, সুপারি, খাল এই তিন নিয়ে বরিশাল। এই বিভাগের মধ্যে সুপারির উৎপাদনে ভোলা বাংলাদেশে প্রথম। ইউটিউব চ্যানেলে সুপারির খোল থেকে পরিবেশবান্ধব প্লেট, পিরিচ, ট্রে, বাটি তৈরির ভিডিও আকৃষ্ট করেছে উদ্যোক্তা মো. সোহেবকে। কারখানাটি করতে পুঁজির প্রয়োজনে তিনি তার আরও দুই বন্ধুকে এই ব্যবসায় উদ্যোক্তা হিসেবে নেন। চীন থেকে মেশিন আমদানি করে কারখানায় তৈজসপত্র তৈরি শুরু করেন। উদ্যোক্তারা বাণিজ্যিকভাবে চরফ্যাশন জনতাবাজার এলাকায় এই কুটিরশিল্পের কাজ শুরু করেন। ঝরে যাওয়া খোল দিয়ে পরিবেশবান্ধব প্লেট, বাসন, ট্রে ও বাটিসহ নানারকম নান্দনিক ডিজাইনের তৈজসপত্র তৈরি ও বিক্রি করেন বিভিন্ন এলাকায়। প্রাথমিক পর্যায়ে ১৪টি আইটেমের তৈজসপত্র উৎপাদন করতে সক্ষম হয়েছেন তারা। ভোলা জেলার চরফ্যাশন জনতা বাজার এলাকায় এই প্রথম প্রকৃতিবান্ধব তৈজসপত্রের কারখানার খবর শুনে বিভিন্ন এলাকা থেকে ছুটে আসছেন আগ্রহীরা। এলাকাবাসী জানান, কারখানা চালু থাকলে এলাকার বেকাররা কর্মসংস্থানের মাধ্যমে আর্থিকভাবে স্বাবলম্বী হবেন। উদ্যোক্তা আরাফাত বলেন, এসব তৈজসপত্র শতভাগ পরিবেশবান্ধব। ব্যবসায়ী বা ক্রেতা চাইলে রংতুলি দিয়ে পেইন্টিং করে এসব পণ্য দেয়ালে সাজিয়ে রাখতে পারবেন। প্লাস্টিক পণ্যের মতো নয়, এসব পণ্য পচনশীল হওয়ায় সহজে মাটির সঙ্গে মিশে যায়। হাল্কা এবং আকর্ষণীয় ডিজাইনের কারণে কোনো অনুষ্ঠানে ওয়ানটাইম হিসেবে প্লাস্টিক প্লেটের বিকল্প হিসেবে ব্যবহার করা যায়। এই প্লেট প্লাস্টিকের মতো ভেঙে বা ছিঁড়ে যায় না। এটি তৈরিতে কোনো রং বা রাসায়নিক পদার্থ ব্যবহার করা হয় না। উপজেলা কৃষি অফিসার ওমর ফারুক বলেন, সুপারির খোল দিয়ে সুন্দর পণ্য তৈরি করা যায়। সুপারির খোল থেকে তৈরি এসব তৈজসপত্র প্রকৃতিবান্ধব। এক সময় প্লাস্টিকের বিকল্প হিসেবে এই পণ্য দেশের গন্ডি পেরিয়ে বিদেশে রপ্তানি করে বৈদেশিক মুদ্রার জোগান দিতে পারবে এই কুটিরশিল্প।