শনিবার, ২৭ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা
নির্মাণশৈলী দেখতে দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীসহ পর্যটকের ভিড় বাড়ছে

প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থাপত্যে অনন্য ‘মেটি স্কুল’ ও ‘আনন্দালয়’

দিনাজপুর প্রতিনিধি

প্রত্যন্ত অঞ্চলে স্থাপত্যে অনন্য ‘মেটি স্কুল’ ও ‘আনন্দালয়’

২৩ বছর আগেও এ এলাকায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ছিল না। শিক্ষার্থীরা চার-পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে অন্য কোনো গ্রামে লেখাপড়ার  জন্য যেত। অবহেলিত ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ইচ্ছা অনেকের থাকলেও আর্থিক সংকট এবং উদ্যোগের অভাবে তা সফল হয়নি

 

দিনাজপুরের প্রত্যন্ত গ্রামে প্রকৃতিবান্ধব, ভিন্নধর্মী নির্মাণশৈলী দিয়ে নির্মিত ‘মেটি স্কুল’টির এখন বিশ্বজোড়া খ্যাতি। স্কুলটি ভিন্নধর্মী স্থাপত্যশিল্পের জন্য পেয়েছে ২০০৭ সালে আগা খান আর্কিটেকচার অ্যাওয়ার্ড। প্রত্যন্ত গ্রাম হলেও স্কুলটির কল্যাণে দেশ-বিদেশের মানুষের কাছে এখন পরিচিত এ গ্রামটি। পরে প্রতিবন্ধীদের জন্য গড়ে তোলা আনন্দালয়টিও আন্তর্জাতিক অবেল অ্যাওয়ার্ড পেয়েছে।

মেটি স্কুল ও আনন্দালয়টির নির্মাণশৈলী দেখতে দিন দিন বাড়ছে দেশি-বিদেশি শিক্ষার্থীসহ পর্যটকের ভিড়। প্রতি মাসে  বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার পাঁচ শতাধিক মানুষ দেখার জন্য সেখানে যায়।

শিক্ষার পাশাপাশি স্থাপত্যে অনন্য মেটি স্কুল। দ্বিতল এ স্কুলের বৈশিষ্ট্য হলো- কক্ষে শিক্ষার্থীরা গরম বা শীতের অনুভূতি তীব্রভাবে অনুভব করে না। আলো-বাতাসের আগমনে স্বাস্থ্য ভালো থাকে। ঘরগুলোও পরিবেশবান্ধব। একই চত্বরে মেটি স্কুলের পাশে ২০১৯ সালে প্রতিবন্ধীদের শিক্ষা ব্যবস্থা, ব্যায়াম করার ব্যবস্থাসহ বিভিন্ন প্রশিক্ষণের পাশাপাশি মানসিক বিকাশে কাজ করতে পরিবেশবান্ধব বিশেষভাবে তৈরি দৃষ্টিনন্দন আরেকটি ‘আনন্দালয়’ গড়ে তোলা হয়। দ্বিতল এ স্কুলের বৈশিষ্ট্য হলো-এতে প্রতিবন্ধীদের চলাচলের সুবিধায় বিশেষ ব্যবস্থা রয়েছে।

দিনাজপুরের বিরল উপজেলার প্রত্যন্ত অঞ্চলের মঙ্গলপুর ইউপির রুদ্রপুর গ্রামে এই ‘মেটি স্কুল’ ও ‘আনন্দালয়টি গড়ে তোলে একটি স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘দীপশিখা’।

২৩ বছর আগেও এই এলাকায় কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের নামই ছিল না। শিক্ষার্থীরা চার/পাঁচ কিলোমিটার পথ হেঁটে অন্য কোনো গ্রামে লেখাপড়ার জন্য যেত। অবহেলিত ও প্রত্যন্ত অঞ্চলে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার ইচ্ছা অনেকের থাকলেও আর্থিক সংকট এবং উদ্যোগের অভাবে তা সফল হয়নি। তবে আর সেই রুদ্রপুর নেই। বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থার এই মেটি স্কুলই জ্বালিয়েছে সেই শিক্ষার আলো। প্রত্যন্ত গ্রামে লেখাপড়ার আলো ছড়িয়ে দিতে ১৯৯৯ সালের ১ সেপ্টেম্বর তৎকালীন দীপশিখার নির্বাহী পরিচালক ‘পৌল চারোয়া তিগ্যা’ ছোট্ট পরিসরে ‘মেটি স্কুল’ শুরু করেন। ‘মেটি’ একটি সংগঠনের নাম। যার পুরো নাম মডার্ন এডুকেশন অ্যান্ড ট্রেনিং ইনস্টিটিউট (মেটি)। কম খরচে এবং হাতের নাগালের উপকরণ ব্যবহার করে মানুষের সার্বিক উন্নয়নে কাজ করে মেটি। আনন্দের মাধ্যমে শিক্ষাদান, শিক্ষার প্রতি স্থায়ী ও ইতিবাচক মনোভাব সৃষ্টি, যুক্তিযুক্ত চিন্তার বিকাশ ও দলীয়ভাবে শিক্ষা গ্রহণ- এসব উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে মেটি স্কুলের যাত্রা। ১৯৯৯ সালে স্কুলটির যাত্রা শুরু হলেও ২০০৫ সালে বিরল উপজেলার রুদ্রপুর গ্রামে মেটির স্থাপত্য মাটির স্কুলঘর নির্মাণ শুরু হয়, জার্মানির ‘শান্তি’ দাতাসংস্থার অনুদানে। জার্মান ও অস্ট্রিয়ার ১০ জন ছাত্র ও বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত স্থানীয় ১৯ জন শ্রমিক স্কুল নির্মাণে অবদান রাখেন। সহযোগিতা করেন দীপশিখা প্রকল্পের কর্মীরা। জার্মান আর্কিটেক্ট আন্না হেরিঙ্গার ও আইকে রোওয়ার্গ এর তত্ত্বাবধান করেন।

জানা যায়, মেটি স্কুল ও আনন্দালয়টি নির্মাণে ব্যবহার করা হয়েছে মাটি, খড়, বালু ও বাঁশ, দড়ি, কাঠ, টিন, রড, ইট ও সিমেন্ট। মাটি ও খড় মেশানো কাদা দিয়ে তৈরি করা হয়েছে এর দেয়াল। দেয়ালের ভিতের ওপর দেওয়া হয়েছে আর্দ্রতারোধক। দেয়ালের প্লাস্টারে ব্যবহার করা হয়েছে মাটি ও বালু। মেঝের প্লাস্টারে পামওয়েল ও সাবানের পেস্ট ব্যবহার করা হয়েছে, যা সাধারণভাবে ওয়াটারপ্রুফ।

সর্বশেষ খবর