গাজীপুরের কালীগঞ্জের বিনিরাইল গ্রামের মাঠে প্রতি বছরের মতো এবারও বসেছিল ২৫০ বছরের পুরনো মাছের মেলা। এটি মূলত মাছের মেলা হলেও সবাই একে জামাই মেলা বলেই জানেন। বিনিরাইল ও আশপাশের গ্রামের জামাইরা এ মেলার মূল ক্রেতা। জামাইরা যেমন বড় মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য মেলায় আসেন তেমনি শ্বশুররাও জামাইকে মেহমানদারি করার জন্য বড় মাছ কিনতে আসেন। মেলা যেন জামাই-শ্বশুরের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতার মাঠ। কালীগঞ্জের বিনিরাইল গ্রামে প্রতি বছর অগ্রহায়ণের ধান কাটা শেষে পৌষসংক্রান্তিতে অনুষ্ঠিত হয় এ মেলা। মেলা প্রাঙ্গণে সকাল থেকেই বসে সারি সারি মাছের দোকান। সামুদ্রিক বড় মাছের পাশাপাশি এখানে ছিল দেশীয় প্রজাতির নানা মাছের সমাহার। মাছের মেলায় ক্রেতাদের আকৃষ্ট করতে নানারকম অঙ্গভঙ্গি ও সুরে সুরে হাঁকডাক করেন দোকানিরা। বড় মাছ মাথার ওপরে তুলে জানান দিতে দেখা যায় যে মেলার বড় মাছটি তিনি এনেছেন। দোকানিদের এমন চটকদারিতে ক্রেতারাও ঝুঁকছেন স্টলগুলোতে। মেলায় তিন শতাধিক মাছের স্টল ছাড়াও ছিল আসবাবপত্র, খেলনা, মিষ্টি, নিমকি-মোরালি, হাওয়াই মিঠাই, বস্ত্র, হস্ত ও কুটিরশিল্পের নানা পণ্যেরও বাহার। কথিত আছে, সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা-অর্চনা ঘিরে পৌষসংক্রান্তি উপলক্ষে ১৮ শতকে মেলাটির প্রচলন হয়। মূলত ‘মাছ মেলা’ হিসেবে শুরু হলেও পরবর্তীতে এটি ‘জামাই মেলা’ নামে পরিচিতি পায়। প্রতি বছর মেলাকে কেন্দ্র করে বিনিরাইল ও আশপাশের কয়েক গ্রামের শ্বশুর তাদের মেয়ের জামাইকে বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানান। মেয়েরা তাদের স্বামীকে নিয়ে বাবার বাড়িতে বেড়াতে আসেন। জামাইরা মেলা থেকে মাছ কিনে শ্বশুরবাড়িতে নিয়ে যান। পরবর্তীতে এ মেলা ‘জামাই মেলা’ নামে পরিচিতি পায়। তবে এখন শ্বশুররাও মেলা থেকে বড় মাছ কিনে জামাইদের জন্য কিনে নিয়ে যান। কথা হয় মেলায় ঘুরতে আসা কয়েকজন দর্শনার্থীর সঙ্গে। তারা জানান, মেলা উপলক্ষে মেয়ে-জামাইকে দাওয়াত করে আনা এই এলাকার মানুষের রীতিতে পরিণত হয়েছে। প্রতি বছর এই মেলায় দল বেঁধে বন্ধুবান্ধব নিয়ে তারা ঘুরতে আসেন। কেউ কেউ জানান, তারা একেবারেই নতুন। এ মেলা সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেক বেশি ভাইরাল, তাই দেখতে আসেন। মেলাকে ঘিরে বিনিরাইলের পার্শ্ববর্তী গ্রামগুলোতেও বিরাজ করে উৎসবের আমেজ। মেলার মাছ ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছরই এই মেলায় তারা আসেন। অন্য বছর বেচাকেনা ভালো থাকলেও এবারের বেচাকেনা খুবই মন্দাভাব। তারা সকাল থেকে শুরু হয়ে সন্ধ্যা পর্যন্ত মাছ বিক্রি করেন। মেলায় কেনার চেয়ে দেখতে আসা মানুষের ভিড় বেশি। তবে বেচাকেনা যাই হোক স্থানীয় মানুষের সঙ্গে সম্পর্কের কারণে প্রতি বছরই আসেন বিক্রেতারা। এ অঞ্চলের জামাইরা তাদের শ্বশুরবাড়িতে নিমন্ত্রণ পেয়ে বেড়াতে এসে মাছ কিনে শ্বশুরবাড়ি যান। আবার শ্বশুররাও বড় মাছ কিনে জামাইদের সমাদর করেন। ব্যবসার পাশাপাশি জামাই-শ্বশুরের এই যুদ্ধ দেখতে বেশ ভালো লাগে বলেও জানান তারা। আয়োজকরা জানান, শুরুতে মেলা অনুষ্ঠিত হতো ক্ষুদ্র পরিসরে। মেলাটি এখন স্থানীয়দের কাছে ঐতিহ্যে রূপ নিয়েছে। এ মেলা গাজীপুর জেলার সবচেয়ে বড় মাছের মেলা হিসেবেও স্বীকৃত। কালীগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) তনিমা আফ্রাদ বলেন, ‘বিনিরাইলের মাছের মেলাটি স্থানীয় একটি ঐতিহ্য। এ ঐতিহ্য টিকিয়ে রাখতে গ্রামগঞ্জে এ ধরনের আয়োজন প্রশংসনীয়।’
শিরোনাম
- দাঁড়িয়ে থাকা বোয়িং বিমানে আঘাত করলো লাগেজ ট্রলি
- শরীরে ‘ইসলামিক’ ট্যাটু করা কি জায়েজ
- খেলাধুলার মানোন্নয়নে ক্রীড়া সাংবাদিকতার ভূমিকা
- পর্যটনের স্বপ্ন ফাইলেই বন্দি
- স্বস্তির জয়ে ক্লাব বিশ্বকাপের শেষ আটের মঞ্চে রিয়াল
- উড্ডয়নের ৭ মিনিট পরই বিধ্বস্ত বিমান, নিহত ৬
- ইসরায়েলকে লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা
- ভরপেট খেলেও মোটা হবেন না, জানুন কোন খাবারগুলো নিরাপদ
- দাম কমলো ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটের, আজ থেকেই কার্যকর নতুন প্যাকেজ
- টিএসসিতে রিকশার ভেতরেই মিলল চালকের মরদেহ
- চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের কমিশনার জাকির হোসেন বরখাস্ত
- ১৯৭৩ সালের পর ডলারের সবচেয়ে বড় পতন: সংকটে যুক্তরাষ্ট্র
- প্রেমে ব্যর্থ হলে বাথরুম পরিষ্কার করেন যে অভিনেতা
- কর্মকর্তা-কর্মচারীদের উদ্দেশে জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের নতুন নির্দেশনা
- ব্যাংক একীভূতকরণ প্রক্রিয়া শুরু
- মুস্তাফিজকে নিয়ে আলাদা পরিকল্পনা সাজাচ্ছে শ্রীলঙ্কা
- ইনসাফভিত্তিক মানবিক দেশ প্রতিষ্ঠার এখনই সময়: তারেক রহমান
- রেকর্ড রেমিট্যান্স প্রবাহে রিজার্ভ বেড়ে ৩১.৬৮ বিলিয়ন ডলার
- জাতিসংঘ নিরাপত্তা পরিষদের সভাপতির দায়িত্ব পেল পাকিস্তান
- কনটেইনার হ্যান্ডলিংয়ে ৪৮ বছরের রেকর্ড ভাঙল চট্টগ্রাম বন্দর
জামাই-শ্বশুরের বড় মাছ কেনার প্রতিযোগিতা
২৫০ বছরের পুরনো মাছের মেলা
খায়রুল ইসলাম, গাজীপুর
প্রিন্ট ভার্সন

টপিক
এই বিভাগের আরও খবর