কয়েক বছর ধরে দেশের এসি বাজারে ব্যাপক প্রবৃদ্ধি ঘটছে। অসহনীয় গরম, দ্রুত বিকাশমান নগরায়ণ, মানুষের ক্রয়ক্ষমতা বৃদ্ধি, সাশ্রয়ী মূল্যে সর্বাধুনিক প্রযুক্তিসংবলিত এসির সহজলভ্যতাসহ নানান কারণে চাহিদা বাড়ছে। ফলে চলতি বছরে দেশে এসির চাহিদা ৭ লাখ ৫০ হাজারে পৌঁছাবে বলে ধারণা করছেন খাতসংশ্লিষ্টরা। চাহিদার ৮০ শতাংশের বেশি পূরণ করছে দেশি কোম্পানিগুলো। আগামীতেও বছরে ২০ শতাংশ হারে বাড়বে এসির বাজার। ২০২৪ সালে দেশে এসির চাহিদা ছিল ৬ লাখ ৫০ হাজার। গবেষণাপ্রতিষ্ঠান মার্কেটিং ওয়াচ বাংলাদেশের তথ্যানুসারে, বর্তমানে দেশে প্রতি বছর ৫ লাখ ৫০ হাজার থেকে ৬ লাখ ইউনিট এসি বিক্রি হয়। অফিস-আদালতে ৫ টনের এসি বেশি ব্যবহার হলেও বাসাবাড়িতে ১ থেকে ২ টনের এসি বেশি ব্যবহার হয়। বর্তমানে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী দেড় টন ক্ষমতার ইনভার্টার এসি বেশি ব্যবহার করছে মানুষ। মধ্যবিত্ত শ্রেণির উত্থান, মাথাপিছু আয় বৃদ্ধি ও শহুরে মানুষের ক্রমবর্ধমান সংখ্যার সঙ্গে কনজিউমার ইলেকট্রনিকস বাজারের প্রবৃদ্ধি নির্ভরশীল। গরমের কারণে রাজধানী ঢাকা ছাড়াও দেশের জেলা এবং উপজেলা শহরেও বেড়েছে এসির চাহিদা। বর্তমানে দেশে ওয়ালটন, ইলেক্ট্রো মার্ট, ট্রান্সকম, এসকোয়্যার, সিঙ্গার বাংলাদেশ, বাটারফ্লাই, র্যাংগস, ইলেকট্রা ইন্টারন্যাশনাল, মিনিস্টার, ভিশন, এলজিসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান এসি উৎপাদন ও বাজারজাত করছে। বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোও খরচ কমিয়ে বাজার ধরতে এ দেশে কারখানা স্থাপন করছে। গরমের কারণে ৩০ শতাংশ উৎপাদন বাড়িয়েছে দেশি কোম্পানিগুলো। এসব এসির ৭০ শতাংশই বিক্রি হবে আগামী জুনের মধ্যে। কোম্পানিগুলোর কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চাহিদা বাড়ায় ব্র্যান্ডভেদে প্রতিটি কোম্পানির এসির দাম বেড়েছে ৫০০ থেকে ২,০০০ টাকা পর্যন্ত। তবে অনেক কোম্পানি দাম বাড়ায়নি। এ বিষয়ে ওয়ালটন এয়ার কন্ডিশনারের চিফ বিজনেস অফিসার মো. তানভীর রহমান বলেন, ‘ক্রেতাদের জন্য চলতি বছর আমরা ছয়টি সিরিজের ৭৪টি মডেলের ব্যাপক বিদ্যুৎসাশ্রয়ী স্পিøট এসি বাজারে ছেড়েছি। এর মধ্যে ওয়ালটনের ১ টনের ইনভার্টার এসির দাম ৪৯,৯০০ থেকে শুরু হয়েছে। ১.৫ টন এসি পাওয়া যাচ্ছে ৬৫,৯০০ থেকে ৮১,৯০০ টাকার মধ্যে এবং গ্রাহক ২ টনের এসি ৭৯,৯০০ থেকে ৯৫,৯৯০ টাকায় পাচ্ছেন। স্পিøট এসি সাধারণত বাসাবাড়ি এবং ছোট প্রতিষ্ঠানে ব্যবহৃত হয়। মাঝারি এবং বড় স্থাপনায় লাইট কমার্শিয়াল এবং কমার্শিয়াল এসি ব্যবহৃত হয়। এসব স্থাপনার জন্য ওয়ালটনের রয়েছে ভিআরএফ এবং চিলার। তিনি আরও বলেন, প্রতি বছরই গরম এবং ঈদ উপলক্ষে এসির গ্রাহকের বিশেষ সুবিধা দিয়ে থাকে ওয়ালটন। কোরবানির ঈদ পর্যন্ত ওয়ালটন এসি কেনায় গ্রাহকের জন্য রয়েছে মিলিয়নিয়ার হওয়ার সুযোগ। এ ছাড়া বছরজুড়েই গ্রাহকের এসি এক্সচেঞ্জ সুবিধা দিচ্ছে ওয়ালটন। এর আওতায় যে কোনো ব্র্যান্ডের পুরোনো এসির বদলে সর্বোচ্চ ২৫ শতাংশ ডিসকাউন্টে গ্রাহক ওয়ালটনের নতুন এসি কিনতে পারছেন। পাশাপাশি ওয়ালটন এসিতে ফ্রি ইনস্টলেশন, জিরো ইন্টারেস্টে সহজ কিস্তি ও ইএমআই সুবিধা রয়েছে। সংশ্লিষ্ট সূত্র জানান, এক দশক আগেও দেশে এসির বাজার ছিল উচ্চবিত্তকেন্দ্রিক। এখন পরিস্থিতি পাল্টেছে। দেশে এয়ারকন্ডিশনারের (এসি) চাহিদার সঙ্গে বাড়ছে উৎপাদনও। দাম মধ্যবিত্তের নাগালে আসায় বড় হচ্ছে এসির বাজার। অধিকাংশ কোম্পানির এয়ারকন্ডিশনার দেশে উৎপাদিত হচ্ছে। বিদেশি প্রতিষ্ঠানগুলোও বাংলাদেশে এসি উৎপাদনের জন্য কারখানা স্থাপন করেছে। উৎপাদনকারী ও বাজারজাতকারী প্রতিষ্ঠানগুলো জানিয়েছে, বছরে ৫ থেকে ৬ লাখ (ইউনিট) এসি বিক্রি হয়। এসির বার্ষিক বাজার প্রায় ৬,০০০ কোটি টাকা। এসির বাজারের প্রবৃদ্ধি ২০ থেকে ৩০ শতাংশ। আগামী দুই থেকে তিন বছরে তা ১০,০০০ কোটি টাকা ছাড়াবে বলে প্রত্যাশা খাতসংশ্লিষ্টদের। সারা দেশে বিদ্যুৎ পৌঁছে গেছে, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী প্রযুক্তির ইনভার্টার এসি বাজারে এসেছে। ফলে এসি ব্যবহার করা এখন সাধ্যের মধ্যে। বাজার গবেষকদের মতে ডিজিটাল বাংলাদেশ লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য এর সহযোগী শিল্পের প্রাতিষ্ঠানিকভাবে বিভিন্ন উৎপাদন কর এবং শুল্কের সরকারি নীতি থেকে উপকৃত হওয়ার জন্য দেশি এবং বিদেশি ব্র্যান্ডগুলোর দ্বারা তাদের উৎপাদন ধীরে ধীরে স্থানীয়করণের মাধ্যমে আরও বিনিয়োগ বাড়াবে। ফলে অভ্যন্তরীণ বাজার বাড়ানোর পাশাপাশি রপ্তানির উদ্দেশ্য ও উৎপাদকদের বিনিয়োগ বাড়বে। সামগ্রিকভাবে বলতে গেলে টেলিভিশন, ফ্রিজ, এসি, ওয়াশিং মেশিন এবং অন্যান্য হোম অ্যাপ্লায়েন্সের বাজার চলতি বছরের মধ্যে বার্ষিক ১০ বিলিয়ন ডলারে পরিণত হবে। বোস্টন কনসালটিং গ্রুপের (বিসিজি) পরিসংখ্যান অনুসারে, ২০১৫ সালে বাংলাদেশে মধ্যবিত্ত শ্রেণির সংখ্যা ছিল ১ কোটি ২০ লাখ, যা ২০২৫ সালে গিয়ে ৩ কোটি ৪০ লাখে দাঁড়াবে। প্রতি বছর এ শ্রেণিতে গড়ে ১০ দশমিক ৫ শতাংশ মানুষ যোগ হচ্ছে, যা ইন্দোনেশিয়া, মিয়ানমার ও থাইল্যান্ডের চেয়ে বেশি। মূলত এ সম্ভাবনার বিষয়টি বিবেচনা করেই স্থানীয় বড় ব্যবসায়িক গ্রুপগুলো ইলেকট্রনিকস খাতে বড় অঙ্কের বিনিয়োগ করেছে। পাশাপাশি বাজার ধরে রাখতে বেশ কিছু বিদেশি ব্র্যান্ডও বাংলাদেশে তাদের কারখানা স্থাপন করেছে। কভিডের পর কনজিউমার ডিউরেবলসের প্রবৃদ্ধি কিছুটা থমকে গেলেও অর্থনৈতিক পুনরুদ্ধার কার্যক্রমে গতি ফিরে আসার সঙ্গে সঙ্গে এ খাতেও প্রবৃদ্ধি বাড়ছে বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। বিভিন্ন গবেষণাপ্রতিষ্ঠানের তথ্য বলছে, স্থানীয় প্রতিষ্ঠানগুলো এখন দেশের এসির চাহিদার ৮৫ শতাংশের বেশি পূরণ করছে। ২০২৪ সালে দেশে এসি বিক্রির পরিমাণ ৬ লাখ ছাড়িয়েছে। এর আগের বছর ২০২৩ সালে ৫ লাখ ৩০ হাজার এসি বিক্রি হয়েছিল। ২০২২ সালে বিক্রির পরিমাণ ছিল ৩ লাখ ৩০ হাজার। অর্থাৎ ২০২২ সালের তুলনায় ২০২৪ সালে সার্বিকভাবে প্রায় দ্বিগুণ বেড়েছে এসি বিক্রি। বিক্রয় সূচকে এ উল্লম্ফনের পেছনে দায়ী বৈশ্বিক উষ্ণায়ন, এসির সাশ্রয়ী দাম, দক্ষ শ্রম-প্রযুক্তি ও নতুন মধ্যবিত্ত শ্রেণির উদ্ভব। ২০২৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত হবে। ২০৩১ সালের মধ্যে উচ্চমধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার লক্ষ্যমাত্রা রয়েছে। মাথাপিছু আয় বাড়লে সেটি কনজিউমার ইলেকট্রনিকসের ভোগ বাড়াতে ভূমিকা রাখবে। এসি রপ্তানির জন্য সরকারি কিছু নীতিগত সুবিধার প্রয়োজন। তৈরি পোশাকশিল্পের মতো বন্ডেড ওয়্যারহাউসের সুবিধা, ব্যাক টু ব্যাক এলসির সুবিধা, কাঁচামালের জন্য শুল্কসুবিধা এ ধরনের বিষয়গুলো নিয়ে কাজ করতে হবে। রপ্তানির উপযোগী এসির পাশাপাশি উৎপাদকরা দেশের চাহিদা অনুসারে আরও উন্নতমানের এসি তৈরির দিকে গুরুত্ব দিচ্ছেন। বিশেষ করে বিদ্যুৎসাশ্রয়ী ইনভার্টার প্রযুক্তির এসির উৎপাদন বাড়ছে এখন। এ ধরনের এসির দাম তুলনামূলক বেশি। তবে বিদ্যুৎ সাশ্রয়ের দিক বিবেচনা করলে সার্বিক খরচ এতে কম। উৎপাদক প্রতিষ্ঠানগুলোর কর্মকর্তারা জানান, পাঁচ বছরের মধ্যে প্রায় শতভাগ এসি ইনভার্টার প্রযুক্তির আওতায় চলে আসবে। তারা চেষ্টা করছেন দামটা কমিয়ে সাধারণ ক্রেতাদের পক্ষে আরও সহজলভ্য করে তোলার জন্য। তার ফল দেখা যাচ্ছে বাজারে।
শিরোনাম
- বাংলাদেশের তারুণ্যের বিশ্বজয়
- সাম্য ছিল রাজপথের সাহসী সৈনিক: ছাত্রদল সভাপতি
- সিয়াম-মেহজাবীনের গিগাবাইট টাইটানস চ্যাম্পিয়ন
- ঢাবি শিক্ষার্থী খুনের ঘটনায় সন্দেহভাজন দুই হামলাকারী আটক
- আহত তটিনী, দুই দিনের বিশ্রামে ঢাকায়
- পাচারের অর্থ ফেরাতে বড় বাধা ‘লেয়ারিং’
- মিশরের সঙ্গে অন-অ্যারাইভাল ভিসা বিবেচনায়: স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা
- পলিথিনের বিকল্প পাট-কাপড়ের ব্যাগ সুলভে দিতে চায় সরকার: পরিবেশ উপদেষ্টা
- বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় ঢাবির শিক্ষার্থী খুন
- ফেসবুক লাইভেই গুলিতে নিহত মেয়র প্রার্থী
- নতুন ছবিতে একসাথে আমির-হিরানি
- স্ত্রীকে কুপিয়ে দুই মেয়েকে আছাড়, শেষে নিজেই নিজের গলা কাটেন মামুন
- ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর বাড়িতে আগুন, যুবক গ্রেফতার
- পুরো কাশ্মীরকেই নিজেদের ভূখণ্ড দাবি করল ভারত
- ভেজাল মদপানে ভারতে ২১ জনের প্রাণহানি
- সিরিয়ার ওপর থেকে নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহারের ঘোষণা ট্রাম্পের
- ইশরাকের গেজেট: রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করবে না ইসি
- সাংবাদিকদের কণ্ঠরোধে ৩২টি আইন থাকলেও সুরক্ষায় কোনো আইন নেই : কাদের গনি চৌধুরী
- গুগল এবং কোওরার সিইওদের মন্তব্যে সাড়া দিলেন ইলন মাস্ক
- তিন দফা দাবিতে বুধবার ‘লংমার্চ টু যমুনা’ জবি শিক্ষার্থীদের
চাহিদার ৮০ শতাংশ এসি উৎপাদন হচ্ছে দেশে
♦ দেশি প্রতিষ্ঠান ৭০ শতাংশ ♦ বিদেশি প্রতিষ্ঠান ৩০ শতাংশ ♦ চাহিদা ৭ থেকে ৭.৫০ লাখ ♦ প্রতি বছর চাহিদা বাড়ছে ২০-২৫ শতাংশ
শাহেদ আলী ইরশাদ
প্রিন্ট ভার্সন

টপিক
এই বিভাগের আরও খবর