গত নভেম্বরে প্যারিসে ভয়াবহ সন্ত্রাসী হামলায় নিহত হয়েছিল অনেকেই। এরপর থেকেই ফরাসিদের দিন কাটছে আতঙ্কে। এমনকি কয়েক মাস আগেও ফ্রান্সে ইউরো কাপের আয়োজন নিয়ে সংশয় প্রকাশ করেছেন নিরাপত্তা বিশ্লেষকরা। অথচ সেই ফ্রান্সেই কী প্রাণবন্ত এক ফুটবল টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হলো। আজ ইউরো কাপের ফাইনাল। স্বাগতিক ফ্রান্সের প্রতিপক্ষ ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর পর্তুগাল। ফাইনালের ভেন্যু সেন্ট ডেনিসের ফ্রান্স স্টেডিয়ামই কেবল নয়, রাজধানী প্যারিসসহ সারা দেশে বইছে উৎসবের আমেজ।
কেবল ফ্রান্সই নয়, ফুটবলীয় এ উৎসবে অংশীদার বাল্টিক অঞ্চল থেকে নিয়ে বলকান অঞ্চলের প্রায় সবগুলো দেশই। আইসল্যান্ডের ৩ লাখ ৩০ হাজার মানুষ তাদের জাতীয় বীরদের সংবর্ধনা দিয়েছে মহা আড়ম্বরে। ওয়েলসও ফুলের ঢালা সাজিয়ে বরণ করেছে গেরেথ বেলেদের। ইউরোপ জুড়েই চলছে এখন ফুটবল উৎসব। তবে ফ্রান্সের এ উৎসবে আছে ভিন্ন রং। প্যারিস হামলার ভয়াবহতা থেকে বেরিয়ে আসার স্বপ্ন। ফ্রান্সের অধিনায়ক হুগো লরিস বলেছেন, ‘ফ্রান্সে আমরা একটা দীর্ঘ খারাপ সময় কাটিয়েছি। এ বছরটা আমাদের ভালো কাটেনি। এ অবস্থা থেকে বেরিয়ে আসার জন্য ফ্রান্সের মানুষের একটা পথ প্রয়োজন। আমাদের শিরোপা জয়ই হবে এ পথ।’ ফরাসিদের জন্য কাজটা মোটেও কষ্টকর নয়। ইতিহাস তো তাদেরই সঙ্গে। ফ্রান্স-পর্তুগাল ফুটবলীয় লড়াই শুরু হয়েছিল ১৯২৬ সালের ১৮ এপ্রিল। সে লড়াইয়ে জিতেছিল ফরাসিরা। সেই থেকে ২৪ বার মুখোমুখি হয়েছে দুই দল। এর মধ্যে ১৮ বারই জিতেছে ফ্রান্স। ৫ বার জিতেছে পর্তুগাল। ড্র মাত্র একবার। তাছাড়া ১৯৭৮ সালের পর থেকে আর কখনোই ফরাসিদের হারাতে পারেনি পর্তুগিজরা। অতীত ইতিহাস দিয়ে কী আর বর্তমানকে বিচার করা যাবে!
রিয়াল মাদ্রিদের পর্তুগিজ তারকা ক্রিস্টিয়ানো রোনালদো কথা দিয়েছিলেন, দেশকে একটা ইউরো কাপ শিরোপা উপহার দিবেন। সেই কথায় এখনো তিনি অবিচল। এগিয়ে চলেছেন সব বাধা-বিপত্তি পেরিয়ে। কিন্তু একা রোনালদো কী ফরাসি বিপ্লবের সামনে সিনা টান করে দাঁড়াতে পারবেন! রোনালদো বলেছেন, ‘ফ্রান্সই আমাদের চেয়ে এগিয়ে আছে। তারাই ফেবারিট। তবে শেষটায় জিতব আমরাই।’ রোনালদোর মতো তারকা নিখাঁদ আত্মবিশ্বাস থেকে এমন মন্তব্য করতেই পারেন। কিন্তু জেগে উঠা ফ্রান্সের সামনে সত্যিই অসহায় হয়ে যেতে পারে পর্তুগাল। যেমনটা বলেছেন, ফরাসি অধিনায়ক লরিস। তার মতে, ফ্রান্স একটা সময় খুবই বাজে সময় পার করেছে ফুটবলে। র্যাঙ্কিংয়ে তারা অনেকটাই নিচে নেমে গিয়েছিল। কিন্তু দুরন্ত ফরাসিরা আবার জেগে উঠেছে। এ যেন একটা কিছু জয় করার দৃপ্ত শপথ নিয়ে পথচলা পথিকের দল!২০০৬ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ফ্রান্স-পর্তুগাল। সেবার ১-০ গোলে জিতেছিল ফ্রান্স। আশাহত হয়েছিলেন ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোরা। ইউরো কাপে সেই পরাজয়ের একটা মোক্ষম প্রতিশোধ নেওয়ার ইচ্ছে আছে পর্তুগিজদের। তবে ইউরো কাপের ইতিহাসও সঙ্গে থাকছে ফ্রান্সেরই। ১৯৮৪ সালে মিশেল প্লাতিনি এবং ২০০০ সালে জিনেদিন জিদান ফ্রান্সকে উপহার দিয়েছিলেন ইউরো কাপের শিরোপা। এবার অ্যান্টোনিও গ্রিজম্যানরা জিততে পারলেই স্পেন ও জার্মানির পাশে স্থান নিবে ফ্রান্স। স্পেন ও জার্মানি এরই মধ্যে তিনটা করে ইউরো কাপের শিরোপা জিতেছে।
এসব বিষয় ছাড়াও একটা বড় বিষয় সঙ্গে থাকবে ফরাসিদের। স্বাগতিকরা সেমিফাইনালে ২-০ গোলে একরকম উড়িয়েই দিয়েছে টুর্নামেন্টের অন্যতম ফেবারিট জার্মানিকে। কেবল জার্মানিই তো নয়, ফ্রান্সের সামনে পড়েছিল ইউরোপিয়ান ফুটবলের নতুন পাওয়ার হাউজ আইসল্যান্ডও। সবাইকেই ভাসিয়ে নিয়েছে ফুটবলের ফরাসি বিপ্লব। অন্যদিকে পর্তুগিজরা তুলনামূলক সহজ প্রতিপক্ষই পেয়েছে নকআউট পর্বে। প্রথমে ক্রোয়েশিয়া। তারপর পোল্যান্ড এবং ওয়েলস। সেমিফাইনালে রোনালদোরা ২-০ গোলে হারিয়েছেন গেরেথ বেলেদের। শক্ত প্রতিপক্ষদের কীভাবে সামলাতে হয়, এর একটা অনুশীলন ফরাসিরা এরই মধ্যে করে নিয়েছে। পর্তুগালের সেই অনুশীলনটা ঠিকভাবে হয়নি। তবে রোনালদোর মতো তারকাসমৃদ্ধ দলের জন্য অনেক সময়ই এসব অনুশীলনের খুব একটা প্রয়োজন হয় না। রোনালদো আলো ছড়ালে যে কোনো দলেরই তো সে আলোয় চোখ ঝলসে যাবে! আজ কী এ রিয়াল মাদ্রিদ তারকা সে আলো জ্বালাতে পারবেন! ২০০৪ সালের ফাইনালে গ্রিসের কাছে হারের দুঃখ কিংবা ২০০৬ বিশ্বকাপে সেমিফাইনালে ফ্রান্সের কাছে হারের প্রতিশোধ নিতে পারবেন রোনালদো! এসব প্রশ্নের উত্তর নিয়েই আজ রাতে হাজির হচ্ছে ইউরো কাপের ফাইনাল।
আজ ফাইনাল
হেড-টু-হেড
ফ্রান্স পর্তুগাল
জয় ১৮ ৫
পরাজয় ৫ ১৮
ড্র ১ ১
গোল ৪৯ ২৮