শিরোনাম
শনিবার, ১০ ডিসেম্বর, ২০১৬ ০০:০০ টা
ঢাকা ডায়নামাইটস চ্যাম্পিয়ন

সাকিবের ঢাকা চ্যাম্পিয়ন

ক্রীড়া প্রতিবেদক

সাকিবের ঢাকা চ্যাম্পিয়ন

বিপিএলের চতুর্থ আসরের শিরোপা জিতল ঢাকা ডায়নামাইটস। ট্রফি নিয়ে এমন উচ্ছ্বাস তো তাদেরই সাজে —রোহেত রাজীব

ছোট্ট মেয়েকে কোলে নিয়েই পুরস্কার বিতরণী মঞ্চে উঠলেন সাকিব আল হাসান। সঞ্চালক মজা করে মাইক্রোফোন ধরলেন সাকিবের মেয়ের মুখে। এমন দৃশ্য দেখে বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার হেসেই কুটি কুটি। তারপরে বাম হাতে মেয়ে আঁকড়ে ধরলেন আর ডান হাতে নিলেন চ্যাম্পিয়ন ট্রফি ও চেক। গর্বে যেন বুকটা ফুলে গেল তার! সাকিবের হাত ধরে শিরোপার স্বাদ পেল ডায়নামাইটস।

তবে বিপিএলের এবারের ফাইনালটা ঠিক ফাইনালের মতো হলো না। ম্যাচে ছিল না কোনো উত্তেজনা। যেন এক তরফাভাবে রাজশাহীকে ৫৬ রানে হারিয়ে শিরোপা জিতে নিল ঢাকা। ডায়নামাইটসের ১৫৯ রানের জবাবে রাজশাহীর ১০৩ রান। দুই ইনিংস মিলে ছক্কা মাত্র তিনটি। তবুও তো ফাইনাল। তাই সেলিব্রেশন হলো, দর্শকরাও চিৎকার করে প্রিয় দলকে সমর্থন করলেন। কিন্তু তারপরেও কোথায় যেন একটা অপূর্ণতা থেকেই গেল।

ফাইনাল ম্যাচ বলে দুই দলই ছিল ভীষণ টেনশনে। তাই কিনা একের পর এক ফিল্ডিং মিস হলো। তবে সবচেয়ে বেশি মিস করেছে রাজশাহী কিংস। ক্রিকেটে একটি ক্যাচই যেখানে সৌভাগ্যের দরজা বন্ধ করে দেওয়ার জন্য যথেষ্ট সেখানে একে চারটি ক্যাচ ফেলে দিলেন রাজশাহীর ফিল্ডাররা। ক্যাচ ফেলার উৎসবের দিনই কিনা বিপিএলের সবচেয়ে সুন্দর ক্যাচটি লুফে নিলেন রাজশাহীর সহঅধিনায়ক ফরহাদ রেজা। প্রথম দফায় বলটি তালুবন্দী করেও শরীরের ভারসাম্য রাখতে না পেরে বাউন্ডারি সীমানার বাইরে পড়ে যান। তবে পড়ে যাওয়ার আগেই শূন্যে বল ছুঁড়ে মারেন ফরহাদ। পরে দ্রুত উঠে ক্যাচটি লুফে নেন। চার মিসের বিপরীতে অসাধারণ এক ক্যাচে যেন কিছুটা ভারসাম্য আসে। সত্যিই কি ক্রিকেটে এভাবে ভারসাম্য আসে কখনো? ফরহাদের ক্যাচে ক্যারিবীয় ভয়ঙ্কর ব্যাটসম্যান অ্যান্ড্র রাসেলকে মাত্র ৮ আটকে দেওয়া গেলেও শেষ পর্যন্ত ঠিকই ১৫৯ রানের চ্যালেঞ্জিং স্কোর করে ঢাকা।

মজার বিষয় হচ্ছে, ঢাকার ইনিংসে এককভাবে বড় স্কোর নেই। সর্বোচ্চ ৪৫ রান এভিন লুইসের। ৩৬ করেছেন কুমার সাঙ্গাকারার। এছাড়া ব্রাভো ১৩, সাকিব ১২, সানজামুল ১২। ঢাকার শেষ ব্যাটসম্যান আবু জায়েদ ছাড়া বাকি সবাই রান পেয়েছেন। সম্মিলিত প্রয়াসেই বড় স্কোর গড়ে ডায়নামাইটস। কিন্তু রাজশাহীর ইনিংসে এই দৃশ্যও দেখা যায়নি। দুর্ভাগ্যের শিকার হয়ে ২৬ রানে ফিরতে হয়েছে কিংসের সেরা ব্যাটসম্যান সাব্বির রহমানকে। সামিত প্যাটেল ১৭ রান করে অ্যান্ড্রু রাসেলের অসাধারণ এক ক্যাচে ড্রেসিংরুমের পথ ধরেন। ইনিংসের সর্বোচ্চ ২৭ রান এসেছে মুমিনুল হকের ব্যাট থেকে। আর কোনো ব্যাটসম্যান দুই অঙ্কের কোটাই ছুঁতে পারেননি। ১৭.৪ ওভারে মাত্র ১০৩ রানেই গুটিয়ে যায় রাজশাহীর ইনিংস।

৫৬ রানের বিশাল ব্যবধানে হেরে যাওয়ায় হয়ত রাজশাহী কিংসের আফসোসের জায়গাটুকুও নেই। কিন্তু ম্যাচের ব্যবচ্ছেদ করতে গেলে বেশকিছু নেতিবাচক বিষয় সামনে চলে আসে। ম্যাচে সবচেয়ে দৃষ্টিকটু ছিল কিংসের ক্রিকেটার মুমিনুল হকের আউটের দৃশ্যটি। সাকিবের করা বল অফ-স্ট্যাম্পের বাইরে দিয়ে চলে যাওয়ার সময় মুমিনুলের পায়ে লাগে। কিন্তু আম্পায়ার আউট দিয়ে দিলেন। তা না হয়ত এমনও হতে পারত মুমিনুলই রাজশাহীকে জয়ের বন্দরে পৌঁছে দিতে পারতেন। কেননা কাল খুবই সতর্কভাবে খেলছিলেন তিনি। কিন্তু আম্পায়ারের এক সিদ্ধান্তেই সব শেষ।

শেষ দিকে ডায়নামাইটসের বোলার ব্রাভো যেভাবে থ্রো করে কিংসের ব্যাটসম্যান উইলিয়ামসকে আহত করে ড্রেসিং রুমে পাঠিয়ে দিলেন সেটা ছিল খুবই দৃষ্টিকটু! যদিও সেটা হয়ত ব্রাভোর ইচ্ছাকৃত ছিল না! তাছাড়া তখন রাজশাহীর জয়ের সম্ভাবনাও ছিল এমন নয়। তারপরেও গতকাল দুটি ঘটনাই কিংসের বিপক্ষে চলে যায়। তবে সব কিছুর পরও দুর্দান্ত খেলেছে ঢাকা ডায়নামাইটস। বিশেষ করে, ফিল্ডিং ও বোলিং তারা দেখিয়েছে ক্যারিশম্যাটিক পারফরম্যান্স। সে কারণেই শেষ হাসিটাও ঢাকাই হাসল।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

ঢাকা ডায়নামাইটস : ১৫৯/৯, ২০ ওভার (লুইস ৪৫, সাঙ্গাকারা ৩৬,

ব্রাভো ১৩, সাকিব ১২, সানজামুল ১২; ফরহাদ ৩/২৮)

রাজশাহী কিংস : ১০৩/১০, ১৭.৪ ওভার (মমিনুল ২৭, সাব্বির ২৬,

প্যাটেল ১৭; জায়েদ ২/১২, সানজামুল ২/১৫, সাকিব ২/৩০)

ফল : ঢাকা ডায়নামাইটস ৫৬ রানে জয়ী। ম্যাচ সেরা : সাঙ্গাকারা।

সর্বশেষ খবর