পরস্পরের প্রতিপক্ষ হয়ে বহু ম্যাচ খেলেছেন দুজনে। একজন ছিলেন আক্রমণাত্মক মিডফিল্ডার এবং অন্যজন গোলরক্ষক। নব্বই দশকে বাংলাদেশের ফুটবলের দুই আলোচিত তারকা। জাতীয় দলের দুই নির্ভরযোগ্য ফুটবলারও ছিলেন দুজনে। ফুটবল ক্যারিয়ার শেষে মাহবুব হোসেন রক্সি এবং আতিকুর রহমান এখন দুজনই কোচ। রক্সি শিরোপা প্রত্যাশী শেখ জামাল ধানমন্ডি ক্লাবের এবং আতিক আরেক শিরোপা প্রত্যাশী ঢাকা আবাহনীর কোচ। ফুটবল ক্যারিয়ারের মতো কোচিংয়ে দুজনেই চলতি পেশাদার লিগে প্রবল প্রতিপক্ষ। আগামীকাল দুজনের দেখা হবে ডাগ আউটে। বাংলাদেশ প্রিমিয়ার ফুটবল লিগের শিরোপার আগাম উৎসব করতে সন্ধ্যা পৌনে ৭টায় বঙ্গবন্ধু জাতীয় স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হচ্ছে শেখ জামাল ও আবাহনী। এরপরও অবশ্য দুই দলের একটি করে ম্যাচ বাকি থাকবে। কিন্তু আগামীকালের জয়ী দলই শিরোপা উৎসবে মেতে উঠার ক্ষেত্র তৈরি করে নেবে। এমন সমীকরণের ম্যাচটি শুধু হেভিওয়েট লড়াই-ই নয়, ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচও বটে!
গত বছর শুরু হয় ১২ দলের লিগ। প্রথম পর্ব পর্যন্ত শিরোপা রেসে ছিল চার দল। দ্বিতীয় পর্বে তিন দল থেকে এখন দুই দলে পরিণত হয়েছে শিরোপা লড়াই। ২০ রাউন্ড শেষে পেশাদার লিগে সর্বোচ্চ পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ঢাকা আবাহনীর পয়েন্ট ৪৮। তিনবারের চ্যাম্পিয়ন শেখ জামালের পয়েন্ট ৪৭। পয়েন্ট ব্যবধান মাত্র এক। জামালকে যদি হারায় আবাহনী, তাহলে চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে শেষ ম্যাচটি পরিণত হবে আনুষ্ঠানিকতায়। তখন দুই দলের পয়েন্ট ব্যবধান হবে ৪। লিগে নিজেদের শেষ ম্যাচে ফরাশগঞ্জের বিপক্ষে জিতলেও তখন কোনো লাভ হবে না শেখ জামালের। তাই আবাহনীকে হারাতেই হবে শেখ জামালকে। জিতলে এগিয়ে যাবে ২ পয়েন্ট। তবে আবাহনীকে হারালেও শেষ ম্যাচেও হারাতে হবে ফরাশগঞ্জকে। এমন সমীকরণের ম্যাচ নিয়ে আশাবাদী জামালের কোচ রক্সি বলেন, ‘আমরা প্রস্তুত। জেতার জন্য দলের ফুটবলার থেকে শুরু করে কর্মকর্তা সবাই আত্মবিশ্বাসী।’ প্রথম পর্বে দুই দলের ম্যাচটি ড্র হয়েছিল ১-১ গোলে। তাই দুই দলের আত্মবিশ্বাসটাও সমান। অবশ্য আক্রমণভাগ শক্তিশালী শেখ জামালের। রাফায়েল ওডোইন ও সলোমন কিং রয়েছেন ফর্মের তুঙ্গে। দুজনে একত্রে গোল করেছেন ২৯টি (১৫+১৪)। আরেক বিদেশি মোমোদো বাহ চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচে মাথায় আঘাত পান। তিন দিন নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন থাকার পর গতকাল কেবিনে নেওয়া হয়েছে তাকে। লিগের শেষ দুটি ম্যাচ খেলতে পারবেন না তিনি। তারপরও শেখ জামালের কোচ রক্সি প্রস্তুত জয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে, ‘ম্যাচটি দুই দলের জন্যই জীবন-মরণ লড়াই। যে দল জিতবে শিরোপা প্রায় নিশ্চিত হয়ে যাবে তাদের। আমরা প্রস্তুত ম্যাচ জিতে মাঠ ছাড়তে। কারণ, আমাদের এ ছাড়া আর কোনো বিকল্প পথ নেই।’
প্রথম পর্বে একটু পিছিয়ে ছিল আবাহনী। দ্বিতীয় পর্বে টানা জয়ে দলটি এখন শিরোপার এক নম্বর দাবিদার। দলটির দুটি খেলা বাকি। দুটিই বড় ম্যাচ। তবে শেখ জামালের বিপক্ষে জিতলেই নিশ্চিত হয়ে যাবে শিরোপা। চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে লড়াইটি হয়ে যাবে শুধুই আনুষ্ঠানিকতার। ষষ্ঠ শিরোপা জয়ে তখন ওই ম্যাচটির কোনো গুরুত্ব থাকবে না। তাই কোচ আতিক চাইছেন শেখ জামালের বিপক্ষে ম্যাচ দিয়েই কাজের কাজটি সেরে ফেলতে, ‘গোটা দল প্রস্তুত শিরোপা জয়ের জন্য। দলের সবাই সুস্থ। আমরা জানি শেখ জামালের বিপক্ষে আমাদের ‘ডু অর ডাই’ ম্যাচ। জিতে মাঠ ছাড়তে চাই। আমরা চট্টগ্রাম আবাহনীর বিপক্ষে ম্যাচটির জন্য অপেক্ষা করতে রাজি নই।’
শেখ জামাল ও আবাহনী— দুটিই গতকাল অনুশীলন করেছে। তবে জামালের ফুটবলাররা অনেকটা সময় কাটিয়েছে ফুটবল সমর্থকদের সঙ্গে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের বিভিন্ন প্ল্যাটফর্ম ব্যবহার করে ভক্ত-সমর্থকদের সঙ্গে নিবিড় যোগাযোগ রেখেছে তিনবারের চ্যাম্পিয়ন দলটি। নিজেদের ফেসবুক পেজে ‘পেনাল্টি চ্যালেঞ্জ’ নামে ক্যাম্পেইন চালায় দলটি। নির্দিষ্ট কিছু কুইজের উত্তর দিয়ে ১০ সমর্থক সুযোগ পান শেখ জামালের গোলরক্ষক মিতুল হাসানকে পেনাল্টি চ্যালেঞ্জ জানানোর। আনন্দঘন পরিবেশে ছেলে-মেয়ে ফুটবল ভক্তরা পেনাল্টি মেরে মুখরিত করে রাখেন ক্লাব চত্বর। ফুটবলাররাও বিষয়টি উপভোগ করেছেন অনুশীলনের ফাঁকে। ক্লাবের পক্ষ থেকে ফুটবল সমর্থকদের দেওয়া হয় শুভেচ্ছা উপহার।