মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

অচেনা ইভান্সের সেঞ্চুরি

রান : ১০৪*, বল : ৬২, ছক্কা : ৬, চার : ৯

মেজবাহ্-উল-হক

অচেনা ইভান্সের সেঞ্চুরি

ক্রিস গেইল, ডেভিড ওয়ার্নার, রিলি রুশোরা যা পারেননি, সেটাই করেছেন লরি জন ইভান্স। ৩১ বছর বয়স্ক ইংলিশ ক্রিকেটার রাজশাহী কিংসের হয়ে বিপিএলের চলতি আসরে তিন অঙ্কের জাদুকরী ইনিংস খেলে নাম লিখেছেন ইতিহাসের পাতায়। রাজশাহীর এ ওপেনারের টি-২০ ক্যারিয়ারে এটিই একমাত্র সেঞ্চুরি - রোহেত রাজীব

বিপিএলে এবার তারকার মেলা! ক্রিস গেইল, এবি ডি ভিলিয়ার্স,  ডেভিড ওয়ার্নার, স্টিভেন স্মিথ, কাইরন পাওয়েল, আন্দ্রে রাসেল, কার্লোস ব্রাথওয়েট, শহীদ আফ্রিদির মতো মারকাটারি ব্যাটসম্যানরা যুক্ত এই আসরে। এ ছাড়াও বাংলাদেশের জাতীয় দলের তারকারা তো রয়েছেনই। কিন্তু এদের কেউ-ই এই আসরে সেঞ্চুরি করতে পারেননি। তবে কাল বিপিএলের ষষ্ঠ আসরে প্রথম সেঞ্চুরিটি করে ফেললেন এক ‘অচেনা’ ব্যাটসম্যান লরি জন ইভান্স।

৩১ বছর বয়সী এই ব্যাটসম্যানের জন্ম যুক্তরাজ্যের রাজধানী লন্ডনে। জাতীয় দলে খেলার সুযোগ হয়নি। তবে ইংল্যান্ড অ্যান্ড ওয়েলস ক্রিকেট বোর্ডের ডেভেলপমেন্ট একাদশের হয়ে খেলেছেন। ছয় ফুট উচ্চতার এই ব্যাটসম্যান ইংলিশ কাউন্টি দল সারের হয়ে খেলেছেন। তবে টি-২০-তে তার আহামরি কোনো রেকর্ড নেই। ঘরোয়া টি-২০-এর ১০৭ ম্যাচে তার গড় মাত্র ৩১। কোনো সেঞ্চুরিও নেই। হাফ সেঞ্চুরি মাত্র ১৬টি।

রাজশাহী কিংসের এই ব্যাটসম্যান বিপিএলেও অপাঙ্তেয় হয়ে উঠেছিলেন। কালকের ম্যাচের আগে ৫ ইনিংসে তার মোট রান ১৩। ইনিংস পাঁচটি হচ্ছে- ১০, ১*, ০, ২, ০। অথচ অচেনা এই ইভান্সই কিনা কাল করলেন বাজিমাত। খেললেন ৬২ বলে ১০৪ রানের হার না মানা এক ইনিংস। ছয় ছক্কার সঙ্গে ৯ বাউন্ডারি। স্ট্রাইক রেট ১৬৭.৭৪। ওপেনিংয়ে নেমে শেষ পর্যন্ত ব্যাট করেছেন। অচেনা এক ব্যাটসম্যানের সেঞ্চুরিতে বিপিএল যেন আরও উজ্জীবিত হলো।

কাল কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্সের বিরুদ্ধে ২৮ রানেই তিন উইকেট হারিয়ে বিপাকে পড়েছিল রাজশাহী কিংস। পাওয়ার প্লেতে ওভারপ্রতি গড় ছিল মাত্র ৪.৬৭। প্রথম ১০ ওভারে তাদের স্কোর ৫০/৩। এমন ভয়াবহ অবস্থা থেকে রাজশাহীকে এনে দেন ১৭৬ রানের লড়াকু স্কোর।

এই ম্যাচে লরি ইভান্স নায়ক হলেও পার্শ্ব নায়ক হিসেবে রায়ান টেন ডেসকাটের ভূমিকাও ছিল অসাধারণ। ডাচ তারকা মাত্র ৪১ বলে খেলেছেন ৫৯ রানের দুর্দান্ত ইনিংস। তিন ছক্কার সঙ্গে দুটি বাউন্ডারি। চতুর্থ উইকেট জুটিতে ইভান্সের সঙ্গে ডেসকাটের জুটিটি ছিল ১৪৮ রানের।

ইভান্সের ঝড়টা সবচেয়ে গেছে ভিক্টোরিয়ান্সের বোলার ওয়াহাব রিয়াজের মাথার ওপর দিয়ে। পাকিস্তানি এই পেসার চার ওভারে দিয়েছেন ৪৪ রান। তার শেষ ওভার থেকে ২১ রান নিয়েছেন ইভান্স ও ডেসকাট মিলে। কিংসের দুই তারকার হাত থেকে রক্ষা পাননি থিসারা পেরেরাও। লঙ্কান এই পেসারের এক ওভার থেকেও তারা নিয়েছেন ২১ রান। পেরেরা মাত্র তিন ওভারেই দিয়েছেন ৪৩ রান (ওভারপ্রতি ১৪.৩৩ রান)। 

এই ম্যাচে নায়ক হতে পারতেন বাংলাদেশের দুই পেসার মুস্তাফিজুর রহমান কিংবা কামরুল ইসলাম রাব্বি- যে কেউ! ব্যাটিং স্বর্গে কাটার মাস্টার মাত্র ৩.২ ওভার বোলিং করে দিয়েছেন ৮ রান। একটি উইকেটও নিয়েছেন। ২০ বল করে ১৪টিই ডট দিয়েছেন ফিজ।

আর রাব্বি তিন ওভারে মাত্র ১০ রান দিয়ে নিয়েছেন ৪ উইকেট। ভিক্টোরিয়ান্সের ব্যাটিং লাইনআপের মেরুদ  ভেঙে দিয়েছেন তো তিনিই। ড্যাসিং ওপেনার তামিম ইকবালের মহামূল্যবান উইকেট নিয়ে শুরু- তারপর একে একে তুলে নেন ভিক্টোরিয়ান্সের ইংলিশ তারকা লিয়াম ডশন, পাকিস্তানি ব্যাটসম্যান ‘বুমবুম’ আফ্রিদি ও বাংলাদেশ জাতীয় দলের তারকা মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনের উইকেট। রাব্বির শেষ ওভারটি ছিল অসাধারণ। মাত্র ৩ রান দিয়ে ৩ উইকেট। টানা দুই বলে ডশন ও সাইফুদ্দিনকে আউট করে হ্যাটট্রিকের সম্ভাবনাও জাগিয়ে তুলেছিলেন।

মুস্তাফিজের বোলিং বৈচিত্র্য ছিল দেখার মতো। আফ্রিদির মতো ব্যাটসম্যানও তার সামনে দাঁড়িয়ে যেন কাঁপছিলেন। পাকিস্তানি এই তারকা কাটার মাস্টারের বল যেন ব্যাটের সঙ্গে লাগাতেই পারছিলেন না।

কাল ভিক্টোরিয়ান্সের ব্যাটিং লাইনআপের ওপর সবচেয়ে বেশি চাপ প্রয়োগ করেছেন ফিজ। আর টপাটপ উইকেট তুলে নিয়েছেন রাব্বি। মুস্তাফিজের ওভারে তৈরি হওয়া চাপ থেকে মুক্তি পেতে রাব্বির ওভারে মারতে চেয়েছিলেন কুমিল্লার ব্যাটসম্যানরা। আর সেখানেই বিপত্তি।

ফিজ-রাব্বি দুই পেসারই ধসিয়ে দিয়েছেন ভিক্টোরিয়ান্সকে। তবে এই দুই বোলার ছাড়া রাজশাহীর বাকি বোলারদের ঠিকই মার হজম করতে হয়েছে। কায়েস আহমেদ দুই উইকেট শিকার করলেও তার চার ওভারে দিয়েছেন ৪৬ রান। কিংসের কিপটে স্পিনার আরাফাত সানিও কাল তিন ওভারে দিয়েছেন ২৮ রান। ক্যাপ্টেন মিরাজের তিন ওভার থেকেও কুমিল্লার ব্যাটসম্যানরা ২৭ রান নিয়েছেন। তাই রাজশাহী প্রথমে ব্যাট করে কুমিল্লাকে ১৭৭ রানের বড় টার্গেট দিলেও জয়টা তাদের জন্য সহজ ছিল না মোটেও। যদি না মুস্তাফিজ ও রাব্বি এমন অসাধারণ বোলিং না করতেন।

বিপিএলে এখন রান বন্যা চলছে। আগের ম্যাচেই তো ঘরের মাঠে সিলেট সিক্সার্সের দেওয়া ১৯৫ রানের টার্গেট টপকে জিতেছে রংপুর রাইডার্স। তবে ফিজ-রাব্বির তা বে বোলিংয়ে কাল কুমিল্লা নিতে পারেনি রাজশাহীর চ্যালেঞ্জ। ১৩৮ রানেই গুটিয়ে যায় ভিক্টোরিয়ান্সের ইনিংস। ৩৮ রানে জয় পায় রাজশাহী কিংস।

তবে মুস্তাফিজ ও রাব্বির ভয়ঙ্কর বোলিংয়ের পরও শেষ পর্যন্ত ম্যাচটি কিন্তু লরি ইভান্সেরই। কেননা বিপিএলে প্রথম সেঞ্চুরি বলে কথা!

সর্বশেষ খবর