মঙ্গলবার, ২২ জানুয়ারি, ২০১৯ ০০:০০ টা

সব হারিয়ে ফুটবলই আমার সব

সৈয়দ নোমান, ময়মনসিংহ

সব হারিয়ে ফুটবলই আমার সব

ফুটবলার সোহেল রানা

‘প্রতিটা ম্যাচ শুরুর আগে ছেলে আবদুল্লাহ আল আফনান আমাকে একটি পাপ্পা (চুমু) দিত। আমিও দিতাম। আজও মনে মনে দিয়েছি, আফনানও দিয়েছে।’ শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের মাঝমাঠের দাপুটে ফুটবলার সোহেল রানা যখন কথাগুলো বলছিলেন, তখন তার চোখের জল গড়িয়ে পড়ছিল। অশ্রুসিক্ত নয়নগুলো তখনো খুঁজে বেড়াচ্ছিল স্ত্রী-সন্তানকে। রবিবার ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া স্টেডিয়ামে আরামবাগের বিপক্ষে ম্যাচ শেষে ড্রেসিং রুমের সামনে কথা হয় ছোট্ট জীবন আর ছোট্ট ক্যারিয়ারে বড় ঝড় বয়ে যাওয়া সোহেলের সঙ্গে। ভাগ্যের নির্মম পরিহাসের শিকার এই ফুটবলার শত কষ্টের মধ্যেও তৃপ্তি ঢেকুর তুলেছেন। বলেছেন, ‘টিম জিতেছে, আমি খেলতে পেরেছি, শুরু করতে পেরেছি। শুকরিয়া আল্লাহর কাছে। ভালো লেগেছে। সবকিছু হারিয়ে ফুটবলই এখন সব। ফুটবলেই বেঁচে থাকতে চাই।’ সোহেল রানা বলেন, ‘বিভীষিকাময় সেই দিনটির পর আরামবাগের বিপক্ষেই প্রথম মাঠে নামি। জোহরের নামাজের পরই অবচেতন মনে কথা হয় ছেলে আফনানের সঙ্গে। খুব মনে পড়ে স্ত্রীকে। খেলা শুরু হওয়ার আগমুহূর্তে ছেলেকে পাপ্পা দিই। ছেলেও পাপ্পা দিয়েছে আমাকে। চলে যাওয়া দুটি মানুষের কথা কোনোভাবেই ভুলতে পারছিলাম না। তবু মাঠে নামার আগে সব ভুলে গিয়ে দলের জন্য খেলতে নেমেছি। পেছন থেকে সাহস জুগিয়েছে গোটা টিম ম্যানেজমেন্ট।’

কান্না বুকে চেপে দুরন্ত এই ফুটবলার জানালেন, যাপিত জীবনের বাকিটা পথ ফুটবলকে আঁকড়ে ধরেই বাঁচতে চান তিনি। খেলতে চান দেশের জন্য। নিজের সেরাটাই দিয়ে যেতে চান সব সময়। স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে জাতীয় ফুটবল দলের এই মিডফিল্ডার বলেন, ‘শেষ ফেডারেশন কাপে ছেলেটা বলেছিল, বাবা, দুই গোল দিবা। আমরা দুই গোলই দিয়েছিলাম। ও জন্মের পর থেকে প্রতিটা লিগই ভালো খেলেছি। ওরা আমার জন্য লাকি ছিল।’

বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগে এবারের মৌসুম শেখ রাসেল শুরু করে ময়মনসিংহের রফিক উদ্দিন ভুঁইয়া স্টেডিয়ামে। রবিবার অনুষ্ঠিত ওই ম্যাচে সবচেয়ে বড় আকর্ষণ ছিল দ্বিতীয়ার্ধের ৭০ মিনিট। অ্যালেক্সের বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মধ্য মাঠের খেলোয়াড় সোহেল রানা। তিনি যখন মাঠে প্রবেশ করছিলেন তখন সতীর্থ থেকে শুরু করে সবাই উৎসাহ দিচ্ছিলেন। মিডিয়া বক্সেও ছিল রানাকে নিয়ে বেশ আলোচনা। মাঠেও দেখা মেলে তার স্বভাবসুলভ খেলা। ২৪ নভেম্বর দুপুরে সাভারের নয়ারহাটে পরিবারসহ এক সড়ক দুর্ঘটনার শিকার হন শেখ রাসেল ক্রীড়া চক্রের ফুটবলার সোহেল রানা। ঘটনাস্থলেই তিনি হারান স্ত্রী ঝুমা খাতুন ও তিন বছরের একমাত্র ছেলে আফনানকে। আশঙ্কাজনক অবস্থায় সোহেল রানাকেও ভর্তি করা হয় সাভার গণস্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে।

এই রকম আরও টপিক

সর্বশেষ খবর