২০১৪ সালের ঘটনা! সাবেক ইংলিশ ক্রিকেটার ইয়ান পন্ট তখন বিপিএলে ঢাকার কোচ। লিটন দাসও তখন ঢাকার অন্যতম সেরা পারফর্মার! ফেসবুকে পন্ট তার এক স্ট্যাটাসে লিখলেন, ‘খুব শিগগিরই বাংলাদেশ জাতীয় দল একজন সুপার স্টাইলিস্ট ব্যাটসম্যান পেতে যাচ্ছে! পুরাদস্তুর এক স্টক-মেকার লিটন দাস। তার ব্যাটিং দেখে আমি মুগ্ধ!’
একজন কোচ যখন তার শিষ্যকে নিয়ে এমন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে, ওই ক্রিকেটারের কাছে এর চেয়ে বড় প্রশংসা আর কী হতে পারে!
ঠিক পরের বছরই লিটন দাসের জন্য জাতীয় দলের দরজা খুলে যায়! পন্টের স্ট্যাটাস দেখে যে নির্বাচকরা উত্তরবঙ্গের দিনাজপুরের এই উইকেটরক্ষক ব্যাটসম্যানকে দলে জায়গা দিয়েছেন তা কিন্তু নয়! লিটন তার যোগ্য-বলেই টিম-টাইগার্সে যোগ দিয়েছেন!
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ার পর লিটন যেন ব্যাটিংই ভুলে গেলেন! একের পর এক ম্যাচ খেলছেন বড় ইনিংস নেই। নির্বাচকরা তাকে এক পর্যায়ে বাধ্য হয়ে বাদ দেন স্কোয়াড থেকে। আবার জাতীয় লিগে গিয়ে ঠিকই রানের বন্যা বইয়ে দেন। নিজের পারফর্ম দিয়েই আবার জাতীয় দলে নিতে নির্বাচকদের বাধ্য করেন।
এভাবে লুকোচুরি খেলতে খেলতে তিন বছর পর সত্যিকারের লিটনকে বাংলাদেশ দলের জার্সিতে দেখা যায় ২০১৮ সালের এশিয়া কাপের ফাইনালে ভারতের বিরুদ্ধে ফাইনালে। দুবাইয়ে ১২১ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। তিন বছরে আগের ১৭ ম্যাচে যিনি হাফ সেঞ্চুরিও করতে পারেননি, তিনিই কিনা আত্মপ্রকাশের জন্য প্রতিপক্ষ হিসেবে বেছে নিলেন তখনকার এক নম্বর দল ভারতকে, দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি!
তবে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে, লিটন রান খরায় ভুগলেও যতটুকু সময় ব্যাটিং করেছেন তা মাস্টার ক্লাস!
কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, লিটন দলে ফিরেছেন তো তামিমের ইনজুরির কারণে। ড্যাসিং ওপেনার ফিরলে আবারও লিটন দলে জায়গা হারিয়ে ফেলেন। কারণ তামিমের সঙ্গী হিসেবে সৌম্য সরকারও দারুন ফর্মে। তাই তৃতীয় ওপেনার হিসেবে তাকে বিশ্বকাপ মিশনে দলভুক্ত করা হয়।
একাদশে লিটনের সুযোগ কোথায়?
আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজে ফাইনালে গুরুত্বহীন এক ম্যাচে সৌম্যকে বিশ্রাম দিয়ে তাকে নেওয়া হয়। আর এই সুযোগটা কাজে লাগিয়ে খেললেন ৭৬ রানের ইনিংস। বিশ্বকাপের একমাত্র প্রস্তুতি ম্যাচে ভারতের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ব্যাটসম্যান যখন ধুঁকছেন তখনও ৭২ রানের আরেকটি ইনিংস খেলেন। তারপরও টিম কম্বিনেশনের দোহাই দিয়ে বসিয়ে রাখা হলো এমন এক তুখোড় ব্যাটসম্যানকে।
নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে ক্লোজ ম্যাচে হার, বৃষ্টির কারণে লঙ্কানদের বিরুদ্ধে ম্যাচ পরিত্যক্ত হওয়ায় বাংলাদেশ যখন ক্রমশও সেমিফাইনালে স্বপ্ন থেকে দূরে চলে যাচ্ছিল, সেই সঙ্গে ব্যাপক সমালোচনার মুখোমুখি হচ্ছিল টিম ম্যানেজমেন্ট তাই খানিকটা বাধ্য হয়েই এই টনটনে লিটনকে একাদশে সুযোগ দেওয়া হয়। তারপর কি করে দেখালেন তা দেখে গোটা বিশ্বই অবাক!
৬৯ বলে ৯৪ রানের কী অনবদ্য এক ইনিংস! স্টক ঝলমলে এক ইনিংস। কী চমৎকার এক একটি ড্রাইভ। গ্যাব্রিয়েলকে এক ওভারে যেভাবে টানা তিন বলে ৩ ছক্কা হাঁকালেন এর জন্য কোনো প্রশংসাই উপযুক্ত মনে হয় না! বিশ্বকাপে প্রথম ম্যাচ খেলা এক ব্যাটসম্যানের সামনে গ্যাব্রিয়েলের মতো পেসার বল করতেও দ্বিধাগ্রস্ত হয়ে পড়েছিলেন। পুরো ‘এন্টারটেইনিং’ শেষ পর্যন্ত ক্যারিবীয়রা তাকে আউটই করতে পারলেন না! ৩২ রানের টার্গেটটা বানিয়ে দিলেন একটা তুচ্ছ টার্গেট। এত বড় লক্ষ্য তাড়া করতে নেমেও ৫১ বল হাতে রেখে জয়। সত্যিই অবিশ্বাস্য!