শুক্রবার, ২১ জুন, ২০১৯ ০০:০০ টা

রবিনহুডের শহরে সাকিববন্দনা

যুক্তরাজ্যের প্রতিটি শহরই বৈচিত্র্যময়! আলাদা আলাদা বৈশিষ্ট্য। নটিংহ্যাম ঠিক টনটনের মফস্বল শহর নয়, আবার লন্ডনের বিশালও নয়। যুক্তরাজ্যের দুই মেঘাসিটি ম্যানচেস্টার ও বার্মিংহামের মাঝামাঝি অবস্থিত এই শহরটিকে অন্য শহর থেকে আলাদা করে দিয়েছে এর ইতিহাস, ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি।

২০১৫ সালের ১১ ডিসেম্বর ইউনেস্কো নটিংহ্যামকে ‘সাহিত্যের নগরী’ হিসেবে ঘোষণা দিয়েছে। এই শহরেই জন্ম বিশ্ববিখ্যাত কবি লর্ড বায়রণের। কবি ডি এইচ লরেন্সেরও মাতৃভূমি এটি। সাহিত্যিক অ্যালান সিলিটোর শহরও এটি। আধুনিক ইংলিশ সাহিত্যে অনেক বড় অবদান রেখেছে এই নটিংহ্যামের। এখানে রয়েছে অনেক বড় বড় পাবলিশিং কোম্পানি।

বিশ্বখ্যাত তিনটি বিশ্ববিদ্যালয় ‘নটিংহ্যাম ট্রেন্ট ইউনিভার্সিটি’, ‘ইউনিভার্সিটি অব নটিংহ্যাম’ ‘ইউনিভার্সিটি অব ল’ এই শহরকে আরও আলোকিত করেছে।

নটিংহ্যামকে বলা হয় ‘হোম অব ইংলিশ স্পোর্ট’! বিশ্বের সবচেয়ে পুরাতন ফুটবল ক্লাব ‘নটস কাউন্টি’ এখানে। রাগবি, আইস হকির জন্যও বিখ্যাত এই নটিংহ্যাম। ক্রিকেটে নটিংহ্যামের ইতিহাস তো বিশ্ব জোড়া।

ক্রীড়া, শিল্প, সাহিত্য, সংস্কৃতির এই আধুনিক নগরী বিশ্বে রবিনহুডের শহর নামেই পরিচিত। কিন্তু এখন এটি ক্রিকেটের নগরী। বিশ্বকাপ ক্রিকেট ঘিরে উন্মাদনায় উত্তাপ নটিংহ্যাম। আর বিশ্বকাপ মানেই তো এখন সাকিব আল হাসান!

গতকালকের এই ম্যাচের আগে তার ১২৮ গড়ে ছিল ৩৮৪ রান। চার ইনিংসের দুটি সেঞ্চুরি এবং দুটি হাফ সেঞ্চুরি। পাশাপাশি বল হাতেও নিয়েছেন ৫ উইকেট।

সাকিবের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স যে ইংল্যান্ডে বাংলাদেশের সমর্থকদের সংখ্যাও যেন বেড়ে গেছে! গতকাল মাঠে খেলা দেখতে আসা ইংলিশ নাগরিক ক্যারি গিলমোরের সঙ্গে কথা হয়! তিনি বলেন, ‘ইংল্যান্ড নেই তাই এই ম্যাচে আমি বাংলাদেশের সমর্থক! সাকিব কী দুর্দান্ত ব্যাটিং করছেন! আমার মনে হয় এমন একজন বিশ্বসেরা ক্রিকেটার থাকার পরও যদি এই দলটি সেমিফাইনাল খেলতে না পারে সেটা দুঃখজনক হবে।’

সাকিব বন্দনায় মেতেছে ইংলিশ মিডিয়াও। বিখ্যাত টেলিগ্রাফে সাকিবকে নিয়ে তো আলাদা কলামই লেখা হয়েছে। সেখানে লেখা হয়েছে, ‘এবারের বিশ্বকাপে অংশ নেওয়া ১৫০ জন ক্রিকেটারের মধ্যে সাকিব আল হাসান এমন একজন যিনি নিজের দেশের সেরা ব্যাটসম্যান এবং সেরা বোলার।’

যুক্তরাজ্যের যে শহরেই বাংলাদেশ খেলতে যাচ্ছে সেখানেই যেন স্বাগতিকের মর্যাদা পাচ্ছে! লাল-সবুজে উত্তাল থাকছে গ্যালারি। ট্রেন্ট ব্রীজ ক্রিকেট গ্রাউন্ডে তো অন্যরকম এক চিত্র দেখা যায়, গতকাল জাতীয় সংগীতের সময়।

লাউড স্পিকারের যখন ‘আমার সোনার বাংলা...’ বাজছে তখন পুরো গ্যালারি দাঁড়িয়ে সুর মেলাতে শুরু করে। কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার জাতীয় সংগীতের সময় ঠিক উল্টো চিত্র! গ্যালারিতে কোনো আওয়াজ নেই। এমনকি টিভি ক্যামেরাম্যান যেন দেখানোর জন্য দর্শকই খুঁজে পাচ্ছিলেন না।

গতকাল স্টেডিয়ামের বাইরেও দেখা যায়, বাংলাদেশের জার্সি পরে অনেকে ‘নিড আ টিকিট’ লেখা প্ল্যাকার্ড হাতে ঘুরতে দেখা যায়। আগের ম্যাচে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের ঐতিহাসিক জয় এবং সাকিবের দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দর্শকের আগ্রহ বাড়িয়ে দিয়েছে।

বিশ্বকাপের ধারাভাষ্যকর, বিশ্লেষক, দর্শক-সমর্থক সবার মুখে এখন সাকিবের নাম। সেখানেই বিশ্বকাপ নিয়ে আলোচনা সেখানেই সাকিব। বিশ্ব মিডিয়া এখন সাকিবের ছোটবেলা নিয়েও আগ্রহী হয়ে পড়েছে। গতকাল প্রেসবক্সে যেমন এক অস্ট্রেলিয়ার সাংবাদিক বন্ধু জিজ্ঞেস করলেন, সাকিবের গ্রামের নাম। তার বাবা-মা কি করেন। স্ত্রী-সন্তান সবার কথা জানতে চাইলেন। সাকিব নিয়ে এখন পুরো ক্রিকেট বিশ্বের আগ্রহের শেষ নেই। তাই মিডিয়াগুলোরও চাহিদা বেড়ে গেছে। গতকাল অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচে খেলা দেখতে আসা এক বাঙালি দর্শক হাতে অদ্ভুত এক প্ল্যাকার্ড, ‘এই রবিনহুডের নটিংহ্যামে তুমিই রাজা! সাকিব, তোমাকে আমরা কখনো ভুলবো না!’ শুধু নটিংহ্যাম কেন, সবখানেই তো চলছে এখন সাকিব-বন্দনা। সাকিব এখন পুরো ক্রিকেট বিশ্বেরই ‘হট কেক’! 

সর্বশেষ খবর