রবিবার, ২১ জুন, ২০২০ ০০:০০ টা

মানবতার ফেরিওয়ালা তামিম

আসিফ ইকবাল

মানবতার ফেরিওয়ালা তামিম

চাচা আকরাম খান, বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দলের সাবেক অধিনায়ক। ভাই নাফিস ইকবাল খান জাতীয় দলের সাবেক ওপেনার। বাবা ইকবাল খান একজন নামকরা ফুটবলার। আরেক চাচা আফজাল খানও ক্রিকেট খেলতেন। বাংলাদেশের ক্রীড়াঙ্গনের সুপরিচিত নাম ‘খান’ পরিবার। ক্রীড়াবান্ধব পরিবারের সবচেয়ে ছোটজন তামিম ইকবাল খান। শুধু পরিবার নয়, দেশের অন্যতম সফল ক্রিকেটারও। যিনি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে ভাঙা হাতে ব্যাটিং করে নিজেকে প্রমাণ করেছেন সিংহ হৃদয়ের ক্রিকেটার হিসেবে। ক্রিকেটার তামিম একজন মানবসেবীও। প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে বিপর্যস্ত অসহায় মানুষকে সহায়তা করে দেশসেরা ওপেনার এখন ‘মানবতার ফেরিওয়ালা’।

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে গোটা পৃথিবী অচল। বিপর্যস্ত জনজীবন। স্থবির হয়ে আছে ক্রীড়াঙ্গন। বাংলাদেশও বাইরে নয় কভিড-১৯-এর মরণ ছোবল থেকে। হু হু করে বাড়ছে করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা। পাল্লা দিয়ে বাড়ছে মৃতের সংখ্যাও। এমন জটিল পরিস্থিতিতে ক্রিকেট বন্ধ বলে ঘরবন্দী ক্রিকেটাররা। ঘরে থেকেই ফিটনেস ট্রেনিং করছেন। ৬০ টেস্টে ৪৪০৫ রান, ২০৭ ওয়ানডেতে ৭২০২ রান এবং ৭৮ টি-২০ ম্যাচে ১৭৫৮ রান হাঁকানো তামিমও সবার মতো ফিটনেস ট্রেনিং করছেন। প্রতিদ্বন্দ্বিতামূলক ক্রিকেট খেলার জন্য প্রস্তুত করে নিচ্ছেন নিজেকে। কিন্তু মানবসেবা যার রক্তে,

তিনি কীভাবে বসে থাকেন প্রাণঘাতী করোনাভাইরাসে এ সময় অসহায় মানুষের জন্য কিছু না করে?

শুরুতে জাতীয় দলের সতীর্থদের নিয়ে বেতনের ৫০ শতাংশ প্রায় কোটি টাকা সংগ্রহ করে অনুদান দেন। এরপর সামীউল নামে একজন অ্যাথলেটকে আর্থিক সহায়তা দেন দেশসেরা ওপেনার। অন্যান্য খেলার প্রায় দেড়শ ক্রীড়াবিদকেও সহায়তা করেন। সবশেষ চট্টগ্রামে ৫০ কোচকে আর্থিক প্রণোদনা দেন। দুর্যোগের সময় ক্রীড়াবিদদের আর্থিক সহায়তা করে দৃষ্টান্ত স্থাপন করেন তামিম। অবশ্য বাঁ-হাতি ওপেনার একা নন, মুশফিকুর রহিম, সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মর্তুজা, মাহমুদুল্লাহ রিয়াদরাও সহায়তা করেছেন অসহায়দের। এমন দুর্যোগে অসহায়দের পাশে দাঁড়ানোকে কর্তব্য মনে করেছেন। তবে সেলেব্রেটি বলে সহায়তা করছেন না বলেন ওয়ানডে অধিনায়ক, ‘আমি সেলেব্রেটি বলে মানুষকে সহায়তা করছি না। সবার আগে আমি মানুষ। সেই ভাবনা থেকে বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছি। এটাও ঠিক আমাদের দেশে বহু মানুষ আছেন, যারা সহায়তা করছেন অগোচরে থেকে। প্রচার নয়, মানুষের পাশে দাঁড়ানোকেই আমি কর্তব্য মনে করি।’

ঘূর্ণিঝড় আম্ফানে সাতক্ষীরায় ব্যাপক ক্ষতিগ্রস্ত হয়। জলোচ্ছ্বাসে এক বাচ্চা ছেলের কাছে রক্ষিত তামিমের জার্সি ও ব্যাট ভেসে যায়। এতে ভীষণ কষ্ট পায় বাচ্চাটি। আম্ফানে ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের যাতে খাবার পানির সংকট না হয়, সেজন্য জাতীয় দলের ক্রিকেটাররা পানির ট্যাংকি পাঠায় সেখানে। তখনই মানবসেবী তামিম শুনতে পান বাচ্চাটির কষ্টের কথা। তিনি তাকে তার স্বাক্ষরখচিত একটি জার্সি, ব্যাট পাঠানো ছাড়াও আর্থিক সহায়তা করেন। এমন মানবসেবার ইচ্ছা ছোটবেলা থেকেই তামিমের। ছোটবেলায় দেখেছেন বাবা ইকবাল খানকে অসহায় মানুষদের সহায়তা করতে। তখন থেকেই ইচ্ছা বিপদগ্রস্ত মানুষের পাশে দাঁড়ানোর, ‘আমার মনে হয় মানুষকে সহায়তা করার বিষয়টা আমার বাবার কাছ থেকে শিখেছি। ছোটবেলায় দেখতাম বাবা নানা সময়ে মানুষকে সহায়তা করছেন। একজন মানুষের সামর্থ্য থাকলে অবশ্যই সহায়তা করা উচিত। আমি ক্রিকেট খেলছি বলে আল্লাহ আমাকে সামর্থ্য দিয়েছেন সহায়তা করার। তাই চেষ্টা করছি।’ জাতীয় দলের সতীর্থদের অনেকেই চ্যারিটি ফাউন্ডেশন গড়েছেন। সেখান থেকে অসহায়দের সহায়তা করছেন। তামিমের এই মুুহূর্তে ইচ্ছা নেই ফাউন্ডেশন গড়ার, ‘সত্য বলতে এখনই ফাউন্ডেশন গড়তে চাইছি না। তার মানে এই নয়, ফাউন্ডেশন করা ভালো না। ফাউন্ডেশন অবশ্যই ভালো। আমার ইচ্ছা হচ্ছে, ব্যক্তিগতভাবে যতদিন সম্ভব মানুষকে সহায়তা করা, আমি করব। এরপর যখন পারব না, তখন চিন্তা করব ফাউন্ডেশন গড়ার।’

সর্বশেষ খবর