মঙ্গলবার, ২৩ মার্চ, ২০২১ ০০:০০ টা

আতঙ্কের শহরে জয়ের প্রত্যয়

মেজবাহ্-উল-হক

আতঙ্কের শহরে জয়ের প্রত্যয়

ডানেডিনের দুঃস্মৃতি ভুলতে আজ ক্রাইস্টচার্চে সিরিজের দ্বিতীয় ওয়ানডেতে নিউজিল্যান্ডের মুখোমুখি হচ্ছে বাংলাদেশ দল। হারলেই সিরিজ শেষ। ‘ডু অর ডাই’ মনে করেই খেলতে নামছেন টাইগাররা।

ক্রাইস্টচার্চ হচ্ছে নিউজিল্যান্ডের আতঙ্কের শহর। ভূমিকম্পের শহর। ২০১১ সালের ২২ ফেব্রুয়ারি বেলা ১২টা ৫১ মিনিট। ভয়াবহ ভূমিকম্পে ১৮৫ জন মানুষ মারা যায়। হাজারো বাড়িঘর মাটির সঙ্গে মিশে গিয়েছিল। দেশটির ইতিহাসে সবচেয়ে বড় পাঁচটি দুর্যোগের মধ্যে একটি।

ওই ভূমিকম্পের মাস ছয়েক আগেও একবার পুরো ক্রাইস্টচার্চ কেঁপে উঠেছিল। তবে তখনো সেভাবে আতঙ্ক ছড়ায়নি। ২০১১ সালের ফেব্রুয়ারির কথা কিউইরা কেউই ভুলতে পারেননি। এরপর ২০১৩ সালেও আরেকবার আঘাত হানে শক্তিশালী ভূমিকম্প।

ঘন ঘন ভূমিকম্পের কারণে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় বৃহত্তর শহর ক্রাইস্টচার্চ ছাড়তে শুরু করে তরুণ প্রজন্ম। বাবা-মায়েরা তাদের সন্তানদের জন্য আর ততটা নিরাপদ মনে করেন না শহরটিকে। 

তবে ভূমিকম্পের আতঙ্ক কাটতে না কাটতেই সামনে এসে হাজির হয় ২০১৯ সালের নারকীয় সেই ঘটনা। এক শুক্রবারে আল নূর মসজিদে ঢুকে নির্বিচারে গুলি চালিয়ে হত্যা করা হয় ৫১ জন মানুষকে। যা শান্তির দেশ নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসে ‘কালো দিন’ বলে আখ্যায়িত করা হয়। সেই হামলা থেকে একটুর জন্য প্রাণে বেঁচে যান বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের সদস্যরা। সেবার সিরিজ অসমাপ্ত রেখেই আতঙ্ক নিয়ে দেশে ফিরেছিলেন টাইগাররা।

সেই আতঙ্কের শহরেই আজ অন্য আরেক আতঙ্ক নিয়ে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। এটা ক্রিকেটীয় আতঙ্ক। প্রথম ওয়ানডেতে ডানেডিনে রীতিমতো কিউইদের তোপের মুখে পড়েছিলেন টাইগাররা। প্রথমে ব্যাট করে মাত্র ১৩১ রানেই শেষ বাংলাদেশ। যে ব্যাটিং লাইনআপ নিয়ে তামিমদের গর্ব সেখানেই ছন্নছাড়া।

ডানেডিনের দুঃস্মৃতির কথা মনে রাখতে চায় না বাংলাদেশ। ওই ম্যাচে সদাহাস্যোজ্জ্বল কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্টের খুনে মেজাজের কয়েকটি স্পেলেই ধসে পড়ে লাল-সবুজরা। শুধু তো বোল্ট একা নন, তাদের দারুণভাবে সহযোগিতা করেছেন ম্যাট হেনরি, কাইল জেমিসন ও জিমি নিশাম। কোনো বোলারের বিরুদ্ধে দাপট দেখাতে পারেননি সফরকারী দলের ব্যাটসম্যানরা।

মাত্র ১৩২ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমেও ব্যাটিংয়ে মার্টিন গাপটিল ও হেনরি নিকলস যে তা-ব চালিয়েছেন বাইশগজে তাতে টাইগার বোলাররাও আতঙ্কের মধ্যে রয়েছেন।

তবে ফরম্যাটটা ওয়ানডে বলেই আশায় বুক বাঁধছে বাংলাদেশ। নিজেদের প্রিয় ফরম্যাটে বিশ্বের যে কোনো দলকে হারানোর সামর্থ্য আছে। আর এ জন্য দায়িত্ব নিতে হবে সিনিয়রদের। তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদুল্লাহ রিয়াদদের সে সক্ষমতাও আছে। আগে ব্যাটিংয়ের সুযোগ পেলে ব্যাটসম্যানরা যদি বড় স্কোর এনে দিতে পারেন তখন বোলারদের আত্মবিশ্বাসটাও বেড়ে যায়।

বোলিং আক্রমণে মুস্তাফিজের সঙ্গে থাকছেন তাসকিন আহমেদ। তবে এ ম্যাচে তরুণ হাসান মাহমুদের জায়গায় দেখা যেতে পারে মোহাম্মদ সাইফুদ্দিনকেও।

নিউজিল্যান্ড চাচ্ছে ক্রাইস্টচার্চেই সিরিজ নিশ্চিত করতে। বোল্ট যদি ডানেডিনের মতো আবারও কয়েকটি ভয়ংকর স্পেল করেন তাহলেও আশা শেষ বাংলাদেশের।

তবে আশার কথা হচ্ছে, ডানেডিনে লিটন দাসের ছোট্ট ইনিংসও আশার বাতিঘর হতে পারে। ইনিংসটা ছোট্ট হলেও দারুণ কয়েকটি শট খেলে দেখিয়ে দিয়েছেন উইকেটে কোনো জু জু ছিল না। অন্য ব্যাটসম্যানরাও হয়তো নিজেদের ভুল বুঝতে পেরেছেন। সেভাবে নিজেদের প্রস্তুতিও নিয়েছেন।

আজকের ম্যাচটি ডে-নাইট। খেলা হবে কিউইদের প্রিয় হ্যাগলে ওভালে, যে মাঠে তারা ১০ ম্যাচের ৯টিতেই জিতেছে। তবে মাঠে ভালো পারফরম্যান্স দেখাতে পারলে পরিসংখ্যান কিংবা রেকর্ড কোনো ফ্যাক্টর নয়। রেকর্ড তৈরিই হয় ভাঙার জন্য।

আজ জিততে হলে মাঠে এবং মাঠের বাইরের দুই আতঙ্কই মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলতে হবে টাইগারদের। শরীরী ভাষায় থাকতে হবে আত্মবিশ্বাসের দ্যুতি। যদিও নিউজিল্যান্ডের মাটিতে নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে এখনো কোনো জয় পায়নি বাংলাদেশ, তবে বহু আকাক্সিক্ষত ‘প্রথম’ জয়টি যদি এই আতঙ্কের শহরেই আসে মন্দ কী!

সর্বশেষ খবর