শনিবার, ২৪ এপ্রিল, ২০২১ ০০:০০ টা

ব্যাটসম্যানদের অন্যরকম রেকর্ড

প্রথম ছয়জনের মধ্যে পাঁচজনেরই পঞ্চাশোর্ধ্ব রান

আসিফ ইকবাল

ব্যাটসম্যানদের অন্যরকম রেকর্ড

এবারই প্রথম নয়। রেকর্ড বই বলছে, এর আগে আরও দুবার টাইগারদের দলীয় ইনিংসে পাঁচটি করে পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস ছিল। বড় স্কোর গড়েও ম্যাচ দুটির ফল ছিল লজ্জার। হেরেছিল টাইগাররা। পাল্লেকেলেতে তৃতীয় দিন শেষে টেস্টের যে চিত্র, তাতে লড়াইয়ে খুব পিছিয়ে নেই মুমিনুলরা। বাংলাদেশের ৭ উইকেটে ৫৪১ রানের জবাবে তৃতীয় দিন শেষে স্বাগতিক শ্রীলঙ্কার সংগ্রহ ৩ উইকেটে ২২৯ রান।

সা¤প্রতিক সময়ে বাংলাদেশের টেস্ট পারফরম্যান্স আহামরি নয়। ৯ টেস্টে জয় একটি এবং আইসিসি টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপের পাঁচ ম্যাচে হার সবগুলোতে। এমন পারফরম্যান্স নিয়ে মুমিনুলরা এখন পাল্লেকেলেতে খেলছেন টেস্ট চ্যাম্পিয়নশিপ। ঢাকা ছাড়ার আগে টেস্ট জয়ের স্বপ্নের কথা বলেছিলেন। টেস্ট শুরুর আগেও একই কথা বলেন টাইগার অধিনায়ক। অধিনায়কের স্বপ্নপূরণে সতীর্থরা পাল্লেকেলেতে ব্যাটিং করেন আত্মবিশ্বাস নিয়ে। লেখেন রেকর্ডের ঢালি।

গতকাল ইনিংস ঘোষণার আগে প্রথম ৬ ব্যাটসম্যানের পাঁচজন্যই খেলেন পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস। যা ১২২ টেস্ট ইতিহাসে প্রথম। পাল্লেকেলেতে প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের মধ্যে শুধু স্কোর করতে ব্যর্থ হয়েছেন সাইফ হাসান। ইনিংসের দ্বিতীয় ওভারের শেষ বলে রানের খাতা খোলার আগেই ফিরে যান সাজঘরে। ওপেনার সাইফ ব্যর্থ হলেও পরের পাঁচ ব্যাটসম্যানের দুজন নাজমুল হোসেন শান্ত ও অধিনায়ক মুমিনুল হক সেঞ্চুরি করেন। হাফসেঞ্চুরির ইনিংস খেলেন তামিম ইকবাল, মুশফিকুর রহিম ও লিটন দাস। টেস্টের প্রথম দিন ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি করেন নাজমুল শান্ত। দ্বিতীয় দিন সেটা থেমে যায় ১৬৩ রানে। টাইগার অধিনায়ক মুমিনুল ক্যারিয়ারের ১১ নম্বর সেঞ্চুরি করেন। কিন্তু তার ১২৭ রানের ইনিংসটির মাহাত্ম্য আবার আলাদা। দেশের বাইরে এটাই তার প্রথম সেঞ্চুরি। দুর্দান্ত খেলতে থাকা তামিম আউট হয়েছেন ৯০ রানে। মুশফিক অপরাজিত ৬৮ রানে এবং লিটন দাস আউট হয়েছেন ৫০ রানে।

ইনিংসে প্রথম ৬ ব্যাটসম্যানের পাঁচজন পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলে গড়েছেন নতুন রেকর্ড। দ্বীপরাষ্ট্রের বিপক্ষে সর্বোচ্চ রান ২০১৩ সালে গলে গড়েছিল টাইগাররা। মুশফিকের ২০০, মোহাম্মদ আশরাফুলের ১৯০ ও নাসির হোসেনের ১০০ রানে ভর করে ৬৩৮ রান করেছিল। টেস্টটি ড্র হয়েছিল।                 

ইনিংসে প্রথম ছয় ব্যাটসম্যানের পাঁচজন পঞ্চাশোর্ধ্ব ইনিংস খেলেছেন। গোটা ইনিংসে পাঁচটি পঞ্চাশোর্ধ্ব স্কোর রয়েছে আরও দুই টেস্টে। প্রথমবার ২০১২ সালে মিরপুর স্টেডিয়ামে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে প্রথম ইনিংসে ৫৫৬ রান করেছিল বাংলাদেশ। সেঞ্চুরি করেছিলেন নাইম ইসলাম, ১০৮। ওপেনার তামিম ইকবাল ৭২, পাঁচে সাকিব আল হাসান ৮৯, সাতে নাসির হোসেন ৯৬ ও আটে মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ ৬২ রান করেছিলেন। ম্যাচটি টাইগাররা হেরেছিল ৭৭ রানে। অথচ ম্যাচটির প্র্রথম ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজের সংগ্রহ ছিল ৪ উইকেটে ৫২৭ রান। দ্বিতীয়বার এক ইনিংসে পাঁচটি পঞ্চাশোর্ধ ইনিংস ছিল ২০১৭ সালে নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে। ওয়েলিংটনের ম্যাচের প্রথম ইনিংসে ওপেনার তামিম ৫৬, তিনে মুমিনুল ৬৪, পাঁচে সাকিব ২১৭, ছয়ে মুশফিক ১৫৯ ও সাতে সাব্বির রহমান অপরাজিত ছিলেন ৫৪ রানে। একটি ডাবল ও একটি সেঞ্চুরি এবং তিনটি হাফসেঞ্চুরির ইনিংসে ৮ উইকেটে ৫৯৫ রান করেই হেরেছিল টাইগাররা।

পাল্লেকেলে টেস্টের ফল কী হবে, তৃতীয় দিন শেষে বলা যাচ্ছে না। তবে এখন পর্যন্ত শক্ত অবস্থানেই রয়েছে বাংলাদেশ।

মুশফিকের অপরাজিত ৬৮

বাংলাদেশের ইনিংসে খুবই পরিচিত দৃশ্য, টপ অর্ডার ভালো করলে মিডল অর্ডার সুবিধা করতে পারেন না। আবার কখনো উল্টো ঘটনাও দেখা যায়। কিন্তু শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে পাল্লেকেলেতে দেখা গেল ভিন্ন চিত্র। টপ অর্ডারের দুর্দান্ত ব্যাটিংয়ের পর মিডল অর্ডারও দাপট দেখিয়েছে। ৫৪১ রানে ইনিংস ঘোষণার সময় ৬৮ রানে অপরাজিত ছিলেন মুশফিকুর রহিম। ইনিংসে তিনি খেলেছেন ১৫৬ বল। হাঁকিয়েছেন ছয়টি বাউন্ডারি।

 

লিটনের দাপুটে ফিফটি

লিটন দাস ওয়ানডেতে ওপেন করলেও টেস্টে তিনি ব্যাটিং করেন ছয় নম্বরে। এ পজিশনে কখনো দ্রুত রান তুলতে হয়, কখনোবা উইকেট ধরে রাখতে সংগ্রাম করতে হয়। গতকাল দরকার ছিল দ্রুত স্কোরলাইন বাড়ানোর, সে কাজটা খুব ভালোভাবেই করতে পেরেছেন লিটন। ৫৭ বলে খেলেছেন ৫০ রানের ইনিংস। ফিফটি করতে গিয়ে একটি ছক্কা ও পাঁচটি বাউন্ডারি হাঁকিয়েছেন লিটন। টেস্টে অষ্টম হাফ সেঞ্চুরি তার।

 

বাউন্সে তাসকিনের দাপট

দারুণ বোলিং করেছেন পেসার তাসকিন আহমেদ। লাঞ্চের আগে লঙ্কান দুই ওপেনারকে বিপদে ফেলে দিয়েছিলেন গতি ও বাউন্স দিয়ে। তার প্রথম তিন ওভারে কোনো রানই নিতে পারেননি লঙ্কানরা। শুরুতে থিরিমানেকে লেগ বিফোরের ফাঁদেও ফেলে দিয়েছিলেন। মাঠের আম্পায়ার আউট দিয়েও সেবার রিভিউ নিয়ে বেঁচে যান থিরিমানে। তবে আউট করেছেন ওয়ান ডাউনে নামা ওসাদা ফার্নান্দোকে। ১২ ওভারে ৩৫ রান দিয়ে এক উইকেট।

 

 

জুটি ভাঙলেন মিরাজ

বাংলাদেশ ৫৪১ রানে ইনিংস ঘোষণার পর বোলিংয়ের শুরুটা চমকপ্রদ হয়নি। লঙ্কান দুই ওপেনার সেঞ্চুরি জুটি গড়েন। এরপর মেহেদী হাসান মিরাজ এসে ভাঙলেন ১১৪ রানের জুটি। ওপেনার লাহিরু থিরিমানেকে ৫৮ রানে ফিরিয়ে দেন। দলে স্বস্তি ফেরান মিরাজ। অবশ্য এর আগেই থিরিমানেকে আউট করার সুযোগ এসেছিল। রিভিউ না নেওয়ার কারণে সুযোগটি নষ্ট হয়ে যায়।

 

 

করুণারত্নের ক্যাচ মিস

শ্রীলঙ্কাকে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিচ্ছেন অধিনায়ক দিমুথ করুণারত্নে। দিন শেষে ৮৫ রানে অপরাজিত রয়েছেন তিনি। তবে তাইজুলের বলে একটা ক্যাচ তুলে দিয়েছিলেন। কিন্তু ক্যাচটি মিস করেন তাইজুল। ড্রাইভ দিয়েছিলেন, বল তালুবন্দী করতে পারেননি। ওই সময় লঙ্কান দলপতি ৮০ রানে অপরাজিত ছিলেন। দিমুথকে আউট করতে পারলে দিন শেষে আরও ভালো অবস্থানে থাকত বাংলাদেশ।

সর্বশেষ খবর