বুধবার, ২০ অক্টোবর, ২০২১ ০০:০০ টা

দুরন্ত জয়ের পরও কিছু প্রশ্ন

দুরন্ত জয়ের পরও কিছু প্রশ্ন

ওমানের বিপক্ষে বাঁচা মড়ার লড়াইয়ে জয়ের নায়ক সাকিব আল হাসান। দেশসেরা অল রাউন্ডারকে ব্যাটিংয়ে সহায়তা করেছেন তরুণ ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম শেখ। তৃতীয় উইকেট জুটিতে যোগ করেন ৮০ রান।

ঘুরে ফিরে পাওয়ার প্লেতে সেই একই চিত্র। রান খরা। টি-২০ ক্রিকেটের মেজাজের সঙ্গে যেন নিজেদের মানিয়েই নিতে পারছেন না টাইগাররা। প্রথম ৬ ওভারে বাংলাদেশ করতে পেরেছে মাত্র ২৯ রান। হারাতে হয়েছে দুই ব্যাটসম্যানকে। প্রথম ম্যাচে স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধেও পাওয়ার প্লে ছিল খুবই হতাশার। ওই ম্যাচে ২ উইকেট হারিয়ে করেছিল ২৫। এ ম্যাচে তবু ৪ রান বেশি হয়েছে। শেষ পর্যন্ত মিডল অর্ডারের দৃঢ়তায় বাংলাদেশ ১৫৩ রান করে এবং বোলারদের ক্যারিশমায় ওমানকে ১২৭ রানে আটকে দিয়ে ২৬ রানের দারুণ এক জয় তুলে নেয়। এ জয়ে সুপার টুয়েলভের পথে এক পা দিয়ে রাখলেন টাইগাররা। শেষের ম্যাচে পাপুয়া নিউগিনিকে হারালেই নিশ্চিত হয়ে যাবে পরের রাউন্ড।

এ ম্যাচে দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফর্ম করেছেন বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব আল হাসান। তিনি ব্যাট হাতে ২৯ বলে করেছেন ৪২ রান এবং বল হাতে ২৮ রানে নিয়েছেন ৩ উইকেট। ম্যাচসেরার পুরস্কারও জিতেছেন তিনি। স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে পরাজয়ের পর সাকিবের ব্যাটিং নিয়ে প্রশ্ন উঠেছিল। তিনি ২৮ বল খেলে করেছিলেন ২৮ রান। গতকাল বাইশগজে গিয়ে প্রথম বলেই ৪ হাঁকান। তবে দুর্ভাগ্যজনকভাবে রানআউট না হলে হয়তো হাফসেঞ্চুরি হয়ে যেত। বোলিংয়েও সাকিবই খেলার মোড় ঘুরিয়ে দিয়েছেন। তার করা ১৭তম ওভারেই ম্যাচ বাংলাদেশের হাতে চলে আসে। ওই ওভারে সাকিব ৩ রানে নেন ২ উইকেট। ম্যাচ শেষে সাকিব বলেন, ‘স্কটল্যান্ডের বিরুদ্ধে হারের পর আমরা ভেঙে পড়েছিলাম। ওটা আমরা প্রত্যাশাই করিনি। তবে ওমান খুবই শক্তিশালী দল। ওরা দারুণ খেলেছে। ১৫ ওভার পর্যন্ত ম্যাচেই ছিল।’

অসাধারণ ব্যাটিং করেছেন মোহাম্মদ নাঈম। খেলেছেন ৬৪ রানের ইনিংস। অথচ এ নাঈমকেই প্রথম ম্যাচে বসিয়ে রাখা হয়েছিল। গত এক বছর থেকে টি-২০ বিশ্বকাপের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন ওপেনার মোহাম্মদ নাঈম। বিশ্বকাপের আগে জাতীয় দলের টানা ১৬ ম্যাচ খেলেছেন। কিন্তু প্রথম ম্যাচে হঠাৎ করেই তাকে একাদশের বাইরে রাখা হয়। নাঈম নাকি বেশি ডট বল খেলেন! সেই নাঈম কাল সুযোগ পেয়ে দেখালেন ক্যারিশমা। গতকাল নাঈম অর্ধশত পূরণ করেন ৪৩ বলে। ৩টি করে চার ও ছক্কা ছিল তার ইনিংসে। টি-২০ ক্যারিয়ারে এটি তার তৃতীয় হাফসেঞ্চুরি। সব মিলে ইনিংসে আরও ২টি ছক্কা হাঁকিয়েছেন নাঈম। গতকাল তার স্ট্রাইকরেট ছিল ১২৮। তবে দুবার নতুন জীবনও পেয়েছেন। একবার ১৮ রানে আরেকবার ২৬ রানে। একবার নতুন জীবন পেয়েছিলেন ওপেনার লিটন কুমার দাসও। তার পরও ২ অঙ্কের কোঠায় নিয়ে যেতে পারেননি নিজের স্কোর। প্রথম ম্যাচে আউট হয়েছিলেন ৫ রানে, গতকাল করলেন ৬। নিজেকে যেন পুরোপুরি হারিয়ে ফেলেছেন এই ওপেনার।

আগের ম্যাচে ভালো করতে না পারায় কালকের ম্যাচে একাদশে জায়গা হয়নি সৌম্য সরকারের। তার জায়গায় সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করে দিয়েছেন মোহাম্মদ নাঈম।

গতকাল একের পর এক মিস ফিল্ডিং করলেন ওমানি ফিল্ডাররা। তারা ৩টি সহজ ক্যাচ মিস করেছেন। কিন্তু সেই ওমানই কি না দুর্দান্ত এক ফিল্ডিংয়ে রানআউট করে দিলেন সাকিবকে। পয়েন্ট থেকে সরাসরি থ্রোতে উইকেট ভেঙে দেন। তবে গতকাল দুর্দান্ত ব্যাটিং করেন সাকিবও। ২৯ বলে খেলেছেন ৪২ রানের ইনিংস। সাকিবের ইনিংসে কোনো ছক্কা না থাকলেও ছিল ৬টি দর্শনীয় চারের মার। নাঈমের সঙ্গে সাকিবের ৮০ রানের জুটিই বাংলাদেশকে এনে দেয় ১৫৩ রানের স্কোর।

কাল বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডারে ছিল ব্যাপক বৈচিত্র্য। সাকিব আল হাসানের প্রিয় পজিশন ওয়ান ডাউনে নামানো হয়েছিল মেহেদী হাসানকে। কিন্তু নতুন পজিশনে নিজেকে মানিয়ে নিতে পারেননি তিনি। ৪ বল মোকাবিলা করে কোনো রান করতে পারেননি এই অলরাউন্ডার। ব্যাটিং অর্ডারে উন্নতি হয়েছিল নুরুল হাসান সোহান ও আফিফ হোসেনেরও। কিন্তু এ সুযোগটা কাজে লাগাতে পারলেন না দুজনের কেউই। নুরুল হাসান ৪ বলে করেছেন মাত্র ৩। আফিফ ১ রানের বেশি করতেই পারেননি।

লোয়ার অর্ডারের তিন ব্যাটসম্যানকে জায়গা করে দিতে নিজের প্রিয় ৪ নম্বর পজিশনে জায়গা তো হয়ইনি, মুশফিককে খেলতে হয়েছে ৮ নম্বরে।

অধিনায়ক মাহদুল্লাহর ব্যাটিং অর্ডারেও এসেছিল পরিবর্তন। তিনি ৫ নম্বর থেকে নেমে যান ৭ নম্বরে।

তবে কালকের ম্যাচ বাংলাদেশ জিতলেও ব্যাটিং, ফিল্ডিং এবং বোলিংয়ের বেশ কিছু ভুল নিয়ে প্রশ্ন আছে। ভুলগুলো শুধরে নিতে না পারলে বড় দলের বিরুদ্ধে বড় বিপদ অপেক্ষা করছে।

 

সংক্ষিপ্ত স্কোর

বাংলাদেশ : ১৫৩/১০, ২০ ওভার (নাঈম ৬৪, সাকিব ৪২, মাহমুদুল্লাহ ১৭; বিলাল ৩/১৮, ফয়েজ ৩/৩০)।

ওমান : ১২৭/৯, ২০ ওভার (জাতিন্দর ৪০, প্রজাপতি ২১;

মুস্তাফিজ ৪/৩৬, সাকিব ৩/২৮)।

ফল : বাংলাদেশ ২৬ রানে জয়ী।

ম্যাচ সেরা : সাকিব আল হাসান

স্কটল্যান্ড : ১৬৫/৯, ২০ ওভার (বেরিংটন ৭০; মোরিয়া ৪/৩১)।

পাপুয়া নিউ গিনি : ১৪৮/১০, ১৯.৩ ওভার

(ভানুয়া ৪৭; ডেভি ৪/১৮)।

ফল : স্কটল্যান্ড ১৭ রানে জয়ী, ম্যাচ সেরা : রিচি বেরিংটন।

সর্বশেষ খবর