শুক্রবার, ১২ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

বিদেশের মাঠ যখন ‘বাড়ির আঙিনা’

মেজবাহ্-উল-হক

বিদেশের মাঠ যখন ‘বাড়ির আঙিনা’

দর্শক হচ্ছে ক্রিকেটের প্রাণ। গ্যালারি ভর্তি যখন সমর্থক থাকে তখন মাঠের খেলোয়াড়দের দায়িত্বও যেন বেড়ে যায়। ক্রিকেটাররা অনুপ্রাণিত হন, ভালো পারফর্ম করতে উদ্বুদ্ধ হন। এ কারণেই যখন ঘরের মাঠে খেলা হয় তখন স্বাগতিক দল বাড়তি সুবিধা পেয়ে থাকে।

যদিও ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’ এর সঙ্গে আরও বেশ কিছু অনুষঙ্গ জড়িত। তবে একটা বড় বিষয় নিশ্চয়ই দর্শক। দর্শকের কথা চিন্তা করলে বাংলাদেশ এখন গোটা বিশ্বেই (উপমহাদেশের বাইরে) পাচ্ছে ‘হোম অ্যাডভান্টেজ’! সেটা মধ্যপ্রাচ্য হোক কিংবা অস্ট্র্রেলিয়া-ইউরোপ! বিদেশের মাঠও যেন এখন টাইগারদের ‘বাড়ির আঙিনা’।

ইংল্যান্ডের কথা একটু আলাদা করেই বলতে হবে। লন্ডন কিংবা লন্ডনের বাইরে যেখানেই বাংলাদেশের খেলা হোক না কেন দর্শকরা একজোট হয়ে খেলা দেখতে যান। ম্যানচেস্টার, বার্মিংহাম, ব্রিস্টল, সাউদ্যাম্পটন, সমারসেট কিংবা কার্ডিফ -যেখানেই খেলা হোক না কেন গ্যালারিতে বাঙালির রাজত্ব।

বাংলাদেশের খেলা থাকলে প্রবাসী দর্শকের মনে যেন একটা উৎসব উৎসব ভাব কাজ করে। পুরো বাঙালি কমিউনিটির মধ্যে এই আবহ থাকে। টিকিট সংগ্রহ থেকে শুরু করে একসঙ্গে খেলা দেখতে যাওয়া- সবকিছুর মধ্যেই উৎসবের আমেজ। বাঙালি দর্শকরা দারুণ একজোট। তাদের টিকিট সংগ্রহ করার কৌশলও দুর্দান্ত। একজন আরেকজনকে টিকিট সংগ্রহ করে দেন। মজার বিষয় হচ্ছে, দর্শকদের মধ্যে একটা অন্যরকম প্রতিযোগিতা কাজ করে। কে কত বেশি টিকিট সংগ্রহ করে কমিউনিটির অন্য সদস্যকে দেবেন!  সবার যেন একটাই চ্যালেঞ্জ- গ্যালারিতে যত বেশি সংখ্যক লাল-সবুজের সমর্থক আনা যায়।

ইংল্যান্ডের সমর্থকরা বেশির ভাগ হোয়াইটচ্যাপেলকেন্দ্রিক। রাজধানী শহর লন্ডনের এই অংশ যেন পুরোটাই বাঙালিদের দখলে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিল্প-সংস্কৃতি সবকিছুতেই বাঙালির ছাপ পরিষ্কার। অধিকাংশ দোকানের সাইনবোর্ড পর্যন্ত বাংলায় লেখা। সন্ধ্যার পর গান-আড্ডায় জমে ওঠে পুরো এলাকা। কখনো কখনো মনে হবে যেন বাংলাদেশের কোনো একটি শহর। এই এলাকায় ইংলিশদের খুব একটা চোখে পড়বে না।

বাংলাদেশ ক্রিকেট দল ইংল্যান্ড সফর করলে হোয়াইটচ্যাপেলে যেন আনন্দের বন্যা বয়ে যায়। তরুণদের কেউ কেউ টিকিট সংগ্রহ করেন, কেউ বাংলাদেশ থেকে টাইগারদের জার্সি তৈরি করে নিয়ে যান, কেউ যানবাহনের দায়িত্ব নেন (লন্ডনের বাইরে খেলা হলে)। যেন পিকনিকের আমেজে বাংলাদেশের খেলা দেখতে যান প্রবাসীরা।

তবে শুধু হোয়াইটচ্যাপেল নয়, ইংল্যান্ডের প্রতিটি শহরেই এমন বাঙালি সমর্থক গ্রুপ আছে। যে কারণে ইংল্যান্ডের মাটিতে বাংলাদেশের খেলা মানেই ‘গ্যালারি লাল-সবুজে পূর্ণ’। সবচেয়ে অবাক হওয়ার মতো ঘটনা ঘটেছিল ২০১৯ বিশ্বকাপে কার্ডিফের সোফিয়া গার্ডেনে অনুষ্ঠিত ‘ইংল্যান্ড-বাংলাদেশ’ ম্যাচে। ইংল্যান্ডের মাটিতে ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে খেলা, অথচ দর্শক প্রায় ফিফটি-ফিফটি! তখন বিশ্ব মিডিয়ায় বাংলাদেশের দর্শকদের নিয়ে ব্যাপক আলোচনা হয়েছিল।

এবার চেমসফোর্ডের চিত্র দেখেও বিশ্ব মিডিয়ায় আলোচনার ঝড় উঠেছে। এই সিরিজে ঘোষিত হোস্ট হচ্ছে আয়ারল্যান্ড। কিন্তু মাঠে তাদের দর্শক নেই। চেমসফোর্ডের গ্যালারি লাল-সবুজে সয়লাব। বাঙালি দর্শকদের কী উচ্ছ্বাস উদ্দীপনা। ধারাভাষ্যকাররাও যেন অবাক হয়ে যাচ্ছিলেন, খেলা বাংলাদেশের মিরপুরে হচ্ছে নাকি ইংল্যান্ডের চেমসফোর্ডে! বাংলাদেশ-আয়ারল্যান্ড প্রথম ওয়ানডে পরিত্যক্ত হলেও দর্শকের কারণেই ম্যাচটি নিয়ে আলোচনা হচ্ছে বিশ্ব মিডিয়ায়। বাঙালিদের ক্রিকেট প্রেম দেখে যেন আরেকবার অবাক বিশ্ববাসী!

চেমসফোর্ডের একই মাঠে আজ আয়ারল্যান্ডের বিরুদ্ধে দ্বিতীয় ওয়ানডে খেলতে নামছে বাংলাদেশ। প্রথম ম্যাচটি পরিত্যক্ত হয় বৃষ্টিতে। অতৃপ্তি ছিল টাইগারদের ব্যাটিং নিয়েও। আগের ম্যাচের ভুলত্রুটি শুধরে এ ম্যাচে খেলতে নামছেন হাতুরাসিংহের শিষ্যরা।

তবে ম্যাচের চেয়েও বেশি আকর্ষণ যেন গ্যালারিতে। আজও নিশ্চয়ই টাইগারদের অনুপ্রেরণা দিতে ইংল্যান্ডের নানা প্রান্ত থেকে চেমসফোর্ডের গ্যালারিতে হাজির হবেন সমর্থকরা। আর জিতলে তো কথাই নেই। উৎসবে মাতোয়ারা হবে ইংল্যান্ডের বাঙালি কমিউনিটি।

সর্বশেষ খবর