সোমবার, ২৯ মে, ২০২৩ ০০:০০ টা

দক্ষিণ এশিয়ায় শুধুই বসুন্ধরা কিংস

রাশেদুর রহমান

দক্ষিণ এশিয়ায় শুধুই বসুন্ধরা কিংস

ধূমকেতুর মতোই বাংলাদেশের ফুটবলে বসুন্ধরা কিংসের আগমন। প্রতিষ্ঠার পর থেকেই সব কিছু জয় করে নেওয়ার দারুণ এক প্রেরণা কাজ করেছে দলটার মধ্যে। ২০১৮-১৯ মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে অভিষেক হয় দলটার। অভিষেকের পর থেকে টানা চতুর্থবারের মতো লিগ শিরোপা জয় করে দারুণ এক ইতিহাস গড়েছে বসুন্ধরা কিংস। দক্ষিণ এশিয়ায় এমন রেকর্ড নেই আর কোনো দলের। কেবল তাই নয়, অভিষেকের পর টানা চারবার লিগ শিরোপা জয়ের ঘটনা বিশ্ব ফুটবলেই আছে হাতেগোনা কয়েকটা।

প্রিমিয়ার লিগে ২০১৮-১৯ মৌসুমে ২৪ ম্যাচের লড়াইয়ে ২০ জয় এবং ৩ ড্রয়ে ৬৩ পয়েন্ট সংগ্রহ করে লিগ জয় করে সবাইকে চমকে দেয় বসুন্ধরা কিংস। দুইয়ে থাকা আবাহনীর সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান ছিল ৫। ২০১৯-২০ মৌসুমে লিগ স্থগিত হয় করোনার কারণে। ২০২০-২১ মৌসুমে ২৪ ম্যাচের মধ্যে ২১ জয় এবং ২ ড্রয়ে ৬৫ পয়েন্ট সংগ্রহ করে লিগ জয় করে দলটা। সেবার দুইয়ে থাকা শেখ জামালের সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান ছিল ১৩। ২০২১-২২ মৌসুমে ২২ ম্যাচে ১৮ জয় ও ৩ ড্রয়ে ৫৭ পয়েন্ট সংগ্রহ করে লিগ জয় করে কিংস। দুইয়ে থাকা আবাহনীর সঙ্গে পয়েন্টের ব্যবধান ছিল ১০। চলতি মৌসুমে তিন ম্যাচ হাতে রেখেই লিগ জয় করেছে কিংস। পয়েন্টের ব্যবধান আছে ১২। এ ব্যবধান আরও বড় হতে পারে। বসুন্ধরা কিংসের এসব লিগ জয়ের ঘটনা ইতিহাসের পাতায় যোগ করেছে নতুন এক অধ্যায়।

দক্ষিণ এশিয়ায় ভারত, পাকিস্তান, নেপাল, ভুটান, মালদ্বীপ, শ্রীলঙ্কা এবং আফগানিস্তানে অভিষেকের পর থেকে টানা চারবার লিগ জয়ের কোনো ঘটনা নেই। ভারতে কলকাতা লিগে মোহামেডান ও ইস্টবেঙ্গল টানা ছয়বার করে লিগ জয় করেছে। তবে অভিষেকে তাদের এ রেকর্ড নেই। দক্ষিণ এশিয়ার আর কোনো দেশে টানা লিগ জয়ের ঘটনাও খুব কম। দক্ষিণ এশিয়ার গন্ডি  পেরিয়ে এশিয়ার দিকে তাকালেও এ ঘটনা খুব একটা নেই। আল হিলাল, আল আইন, আল সাদ কিংবা পার্সিপোলিসের নাম অনেকেই জানেন। এসব ক্লাবের রয়েছে গৌরবজনক ইতিহাস। কিন্তু এদের কেউই অভিষেকের পর টানা লিগ জয়ের ঘটনার জন্ম দিতে পারেনি। এশিয়ার শীর্ষ লিগগুলোর খোঁজখবর নিয়ে কেবল জাপানের ক্লাব টোয়ো ইন্ডাস্ট্রিজের নাম পাওয়া গেল। বসুন্ধরা কিংসের মতো অভিষেকের পর থেকেই টানা চারটি লিগ শিরোপা জয়ের রেকর্ড রয়েছে টোয়ো ইন্ডাস্ট্রিজের। জাপান লিগ শুরু হয় ১৯৬৫ সালে। প্রথম থেকেই টানা চারবার লিগ জয় করে টোয়ো ইন্ডাস্ট্রিজ। এশিয়ার অন্য বিখ্যাত লিগগুলোয় এ রেকর্ড নেই।

এশিয়ার সীমানা পেরিয়ে ইউরোপে গেলেও এমন ঘটনার নজির খুব বেশি নেই। ইউরোপের শীর্ষ পাঁচ লিগে অভিষেকের পর থেকেই টানা চারবার লিগ জয়ের ঘটনা নেই। সুইডেনে ওরগ্রাইট ১৮৯৬ সাল থেকে টানা চারবার লিগ জয় করে। সুইডিশ লিগ শুরু হয় ১৮৯৬ সালেই। এ ছাড়া ফিফা র‌্যাঙ্কিংয়ে ওপরের দিকে থাকা ইউরোপিয়ান দেশগুলোর মধ্যে এ রেকর্ড খুঁজে পাওয়া যায়নি। দক্ষিণ আমেরিকাতেও নেই এ বিরল রেকর্ড। ব্রাজিলের সান্তোস, আর্জেন্টিনার অ্যালামনাই অ্যাথলেটিক ক্লাব টানা চারবার করে লিগ জয় করেছে। তবে অভিষেকের পর থেকেই তারা এ রেকর্ড গড়তে পারেনি। উরুগুয়ের প্যানারোল এবং ন্যাশনাল ক্লাব কয়েকবারই টানা লিগ জয় করেছে। তবে অভিষেকে তাদেরও বসুন্ধরা কিংসের মতো রেকর্ড নেই। যুক্তরাষ্ট্র কিংবা মেক্সিকান ফুটবলেও নেই এ রেকর্ড। আফ্রিকায় এই রেকর্ড আছে মিসরীয় ক্লাব আল আহলির। মিসরে ফুটবল লিগ শুরু হয় ১৯৪৮-৪৯ সালে। শুরু থেকে টানা নয়বার চ্যাম্পিয়ন হয় আল আহলি।

পৃথিবীতে বিখ্যাত ক্লাবের অভাব নেই। রিয়াল মাদ্রিদ, বার্সেলোনা, বায়ার্ন মিউনিখ, ম্যানইউ, ম্যানসিটি, লিভারপুল, জুভেন্টাস, এসি মিলান, পিএসজিসহ আরও কত কত নাম! এতসব নামি-দামি ক্লাবের ভিড়েও অনন্য হয়ে আছে বসুন্ধরা কিংস। অভিষেকের পর থেকেই টানা লিগ শিরোপা জয় করে চলেছে দলটা। এ ধারা অব্যাহত থাকলে বিশ্ব ক্লাব ফুটবলে নতুন এক মাইলফলকই স্থাপন করতে পারবে বসুন্ধরা কিংস।

সর্বশেষ খবর