ফুটবলে স্বস্তির হাওয়া বইছে। জাতীয় দল ব্যর্থতার বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে শুরু করেছে। ঘর ছাড়িয়ে আন্তর্জাতিক ক্লাব ফুটবলে বসুন্ধরা কিংসও দাপটের স্বাক্ষর রাখছে। ফুটবলে কিছুটা হলেও মানের উন্নয়ন ঘটেছে আভাস পাওয়া যায়। এতটা করুণ অবস্থা ছিল যে, জার্সি নম্বর ছাড়া ফুটবলারদের চেনাই যেত না। এখানেও পরিবর্তনের ছোঁয়া লেগেছে। জাতীয় ও ক্লাব ফুটবলে দুর্দান্ত খেলে বেশ কজন পরিচিত হয়েও উঠেছেন। আনিসুর রহমান জিকো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে দক্ষিণ এশিয়ার সেরা গোলরক্ষকের স্বীকৃতি পেয়েছেন। কিছুদিন আগে কিংস অ্যারিনায় বিশ্বকাপ বাছাই পর্বে লেবাননের বিপক্ষে অসাধারণ গোল করে এশিয়াসেরা পারফরমারদের তালিকায় ঠাঁই পেয়েছেন মোরসালিন। রাকিব হাসান, বিশ্বনাথ ঘোষ, তারিক কাজী, সোহেল রানা, ফয়সাল আহমেদ ফাহিম, হৃদয়রা এখন দেশের ফুটবলে পরিচিত মুখ। অধিনায়ক জামাল ভূঁইয়া তো আগে থেকেই নিজেকে চিনিয়েছেন।
জাতীয় দলের কোচদের নিয়ে কম বিতর্কের ঝড় বয়ে যায়নি। বলা হতো কমিশনের বিনিময়ে অযোগ্য বিদেশিদের দায়িত্ব দেওয়া হচ্ছে। হাভিয়ের কাবরেরা নতুন দায়িত্ব নেওয়ার পর সেই বিতর্ক নেই। সমালোচনার বদলে কাবরেরা প্রশংসায় পাচ্ছেন বেশি। তাহলে কি ফুটবলে সুদিন আবার ফিরে আসছে?
জাতীয় দলের সাবেক তারকা ফুটবলার সৈয়দ রহমান বিন ওয়ালি সাব্বির বিষয়টি কোন দৃষ্টিতে দেখছেন? তিনি বলেন, ‘প্রকৃতপক্ষে ফুটবলে ভালো বলতে যা বোঝায় তা কখনো ছিল না। ১৯৭৩ সাল থেকে বাংলাদেশ আন্তর্জাতিক ফুটবল খেলছে। সেক্ষেত্রে সাফ গেমস, সাফ চ্যাম্পিয়নেই মূলত বাংলাদেশ সাফল্য পেয়েছে। এর বাইরে একবার মিয়ানমারে চ্যালেঞ্জ কাপে চ্যাম্পিয়ন। স্বাধীনতার ৫০ বছর পেরিয়ে গেলেও এ সাফল্যকে আমি ঠুনকোই বলব। ফুটবলে বাংলাদেশের যে জনপ্রিয়তা তাতে পারফরম্যান্সের দিক দিয়ে অবস্থান আরও উঁচুতে থাকার কথা। আমরা তা পারিনি। তারপরেও দেশের ফুটবলে জোয়ার ছিল। ঘরোয়া আসর ঘিরে দর্শকরা উন্মাদনায় ভাসত। অথচ সেই উন্মাদনাকে আমরা কাজে লাগাতে পারেনি। সালাউদ্দিন ভাই ফেডারেশনের সভাপতি নির্বাচিত হওয়ার পর আশায় ছিলাম এবার নতুনত্ব আসবে। কারণ তাঁর মতো জাত ফুটবলার ফুটবল উন্নয়নে কাজ করবেন এটাই স্বাভাবিক। ১৫ বছর ধরে তিনি দেশের ফুটবলে অভিভাবক। কই কিছু কি পরিবর্তন আনতে পেরেছেন? নানা বিতর্কে জড়িয়ে ফুটবলকে অন্ধকারে ঠেলে দিয়েছেন। জোয়ার সে তো শেষই হয়ে গেছে।’
সাব্বির বলেন, ‘আফগানিস্তানের সঙ্গে ড্র, মালদ্বীপকে হারানো এবং লেবাননের বিপক্ষে জাতীয় দলের ড্র দেখে অনেকে বলছেন দেশের ফুটবলে পরিবর্তন এসেছে। আমি এর সঙ্গে একমত নয়, ছেলেরা অবশ্যই ভালো খেলছে। তবে ২/১ জয় বা ড্র মানে ফুটবলে পরিবর্তন না। সালাউদ্দিন ভাইয়ের নেতৃত্বে বাফুফে ফুটবলকে বিতর্ক ছাড়া কিছু দিতে না পারলেও আমি বলব ফুটবলে যতটুকু পরিবর্তন এসেছে তা বসুন্ধরা গ্রুপের কল্যাণে। মৃতপ্রায় ফুটবলকে জাগাতে তারা সব রকম চেষ্টায় করছে। বসুন্ধরা কিংসই পেশাদারি মেনে পেশাদার লিগ খেলছে। সাংগঠনিক কাঠামো শক্ত হলে সফলতা আসবে তার বড় প্রমাণ বসুন্ধরা গ্রুপের বসুন্ধরা কিংস।’ সাব্বিরের মতে, ‘বাফুফের সব আসরই তো স্পন্সর করছে বসুন্ধরা গ্রুপ। তারপর আবার জাতীয় দলকে নিজেদের মাঠ ব্যবহার করতে দিচ্ছে। ফুটবল উন্নয়নে সব চেষ্টায় করছে তারা। সেক্ষেত্রে বাফুফে একেবারে নীরব। তাহলে আর ফেডারেশন রেখে লাভ কী? ১৬ বছর ধরে পেশাদার লিগ হচ্ছে। এতে ফুটবলে নতুনত্ব কিছু আসছে কি? হবেই বা কীভাবে? ১০/১১ দল নিয়ে পেশাদার লিগ বড্ড বেমানান। আমি মনে করি ফুটবলের স্বার্থে পেশাদার লিগে দলের সংখ্যা ২০ করা উচিত। তা না হলে পেশাদারের বদলে ঢাকা প্রিমিয়ার লিগে ফিরে গেলে দেশের ফুটবল বরং উপকৃত হবে।’