বসুন্ধরা বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগের চলতি মৌসুমে কয়েকটি ম্যাচে উত্তেজনার পারদ বেশ অনেকটা চড়েছিল। ফুটবলার, কোচিং স্টাফদের পাশাপাশি সমর্থকরাও জড়িয়ে পড়েন নানা ঘটনায়। তর্কের পাশাপাশি হাতাহাতির ঘটনাও ঘটেছে। গত কয়েক দিনে এসব ঘটনা নিয়ে ফুটবলপাড়ায় বেশ আলোচনা হয়েছে। এবার বাফুফের শাস্তির খড়গ নেমে এলো ফুটবলার, কোচিং স্টাফ এবং সমর্থকদের ওপর। ক্লাবগুলোও ছাড় পায়নি। জরিমানা গুনতে হচ্ছে বাংলাদেশের ফুটবলে শীর্ষ ক্লাবগুলোকে।
গতকাল বাংলাদেশ ফুটবল ফেডারেশনের ডিসিপ্লিনারি কমিটি বিভিন্ন ম্যাচের ঘটনা পর্যালোচনা করে ১৩টি সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। আবাহনী ও মোহামেডানের পাশাপাশি টানা পাঁচবারের লিগ চ্যাম্পিয়ন বসুন্ধরা কিংসকেও জরিমানা গুনতে হচ্ছে। ফুটবলারদের মধ্যে বিভিন্ন মেয়াদে শাস্তি পেয়েছেন সাদ উদ্দিন, সোহেল রানা ও মোহাম্মদ শাহীন।
গত ১২ এপ্রিল বসুন্ধরা কিংস অ্যারিনায় অনুষ্ঠিত হয় কিংস-মোহামেডান লড়াই। সে ম্যাচে মোহামেডানের সমর্থকরা স্মোক ফ্লেয়ার জ্বালিয়েছিল। এ কারণে মোহামেডানকে ১ লাখ ২৫ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে। ওই ম্যাচেই সমর্থকদের কারণে ১ লাখ টাকা জরিমানা গুনতে হচ্ছে কিংসকে। ভাষা সৈনিক ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে গত ২৬ এপ্রিল আবাহনী-মোহামেডান ম্যাচ হয়। সেই ম্যাচে সমর্থকদের উচ্ছৃঙ্খল আচরণের কারণে মোহামেডানকে আরও ১ লাখ টাকা আর্থিক জরিমানা গুনতে হবে।
গত ২ মে ধীরেন্দ্রনাথ দত্ত স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয় মোহামেডান-বাংলাদেশ পুলিশ এফসি। সেই ম্যাচে পুলিশ এফসির দানিলো অগাস্তো ও মান্নাফ রাব্বি এবং মোহামেডানের ইমানুয়েল সানডে ও মো. সুজন দ্বন্দ্বে জড়িয়ে পড়েন। এ ঘটনায় তাদের কেবল সতর্ক করেই শেষ করেছে ডিসিপ্লিনারি কমিটি। অথচ একই ধরনের ঘটনায় শাস্তি হিসেবে নিষেধাজ্ঞা পেয়েছেন সোহেল রানা ও শাহীন আহমেদ। ২ মের মোহামেডান-পুলিশ এফসি ম্যাচে মোহামেডান সমর্থক আওলাদ হোসেন অবৈধভাবে মাঠে ঢুকে প্রতিপক্ষ দলের খেলোয়াড়কে ধাক্কা দেন এবং মারতে তেড়ে যান। এ ঘটনায় আওলাদকে পরবর্তী এক বছরের জন্য বাফুফে কর্তৃক আয়োজিত যে কোনো প্রতিযোগিতায় স্টেডিয়ামে প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া এই কারণে মোহামেডানকে আরও ৫০ হাজার টাকা জরিমানা করা হয়েছে।
শাস্তির মুখে পড়েছেন বসুন্ধরা কিংসের সহকারী কোচ মাহবুব হোসেন রক্সিও। তাকে কারণ দর্শাতে বলা হয়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত বাফুফে আয়োজিত ম্যাচে থাকতে পারবেন না তিনি। সাদকেও পরবর্তী সিদ্ধান্ত না দেওয়া পর্যন্ত বাফুফে আয়োজিত ম্যাচে নিষিদ্ধ করা হয়েছে। সোহেল রানা ও শাহীন দুই ম্যাচ করে নিষিদ্ধ হয়েছেন। বসুন্ধরা-আবাহনী ম্যাচে আবাহনীর সমর্থকরা গোলমাল করে। এ কারণে আবাহনীকে গুনতে হবে ১ লাখ টাকা জরিমানা। আর্থিক জরিমানার দিক দিয়ে মোহামেডানকে গুনতে হবে মোট ২ লাখ ৭৫ হাজার টাকা এবং কিংসকে মোট ২ লাখ টাকা।
ফুটবলে উত্তেজনা থাকবেই। প্রতিপক্ষ দলের ফুটবলার এবং সমর্থকরা হাতাহাতিতেও জড়িয়ে পড়তে পারেন। এসব ঘটনা বরং ফুটবলকে আরও বেশি জনপ্রিয় করে তুলতে সাহায্য করে। তবে সবকিছুরই তো সীমা থাকা উচিত। সেই সীমাই যেন বুঝিয়ে দিল বাফুফের ডিসিপ্লিনারি কমিটি। অবশ্য তাদের এ সিদ্ধান্ত নিয়েও আপত্তির শেষ নেই। আরও অনেকেই তো শাস্তির উপযুক্ত ছিল। তাদের কেন শাস্তি দেওয়া হলো না? বিশেষ করে কিংস-আবাহনী ম্যাচে আবাহনীর কোচিং স্টাফরাও অশোভন আচরণ করেছেন বলে অভিযোগ উঠেছে। সেসব ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভেসে বেড়াচ্ছে। নিরপেক্ষভাবে শাস্তি হলেই কেবল ফুটবলে শৃঙ্খলা ফিরতে পারে।