পেশাদার ফুটবল লিগ চালু হওয়ার পর আসরে নতুন জোয়ার আসার কথা। সেখানে কি না শুধুই হাহাকার। সাবেক তারকা ফুটবলার দেওয়ান শফিউল আরেফিন টুটুল এক সাক্ষাৎকারে ক্ষোভের সঙ্গে বলেছিলেন, ‘বাংলাদেশে এমন লিগ মানায় না। ফুটবল বাঁচাতে পুরোনো পদ্ধতিতে ফিরে যাওয়া উচিত। পেশাদার লিগ ধনীদের জন্য, আমাদের নয়।’ ২০০৭ সালে শুরুর পর এই লিগ একের পর এক হয়ে যাচ্ছে। দলগুলো চ্যাম্পিয়ন হচ্ছে। তারপরও কেমন জানি প্রাণহীন। যে সংকটাপন্ন অবস্থা দাঁড়িয়েছিল বসুন্ধরা গ্রুপ এগিয়ে না এলে পেশাদার লিগই বন্ধ হয়ে যেত। তখন ঘরোয়া ফুটবলে কী যে অবস্থা হতো তা ভাবায় যায় না।
বসুন্ধরা কিংস হোম ভেন্যু হিসেবে কিংস অ্যারিনা ব্যবহার করার পরই দর্শক আসতে শুরু করে। তবে অন্য সব ভেন্যু ছিল প্রায় দর্শক শূন্য। কেন এই অবস্থা এ নিয়ে অনেকে অনেক মন্তব্য করেছেন। তবে সবার মুখে একটাই কথা উচ্চারিত হয়েছে মোহামেডানের ব্যর্থতা। এখন তারা না পারলে কী করা যায়? খেলা তো আর বন্ধ রাখা যায় না। বিশ্লেষকদের মত হচ্ছে, শিরোপা যদি এক দলই বারবার জেতে লিগের আকর্ষণ থাকে না। তারপর আবার মোহামেডানের বিশাল সমর্থকের সংখ্যা তো সবারই জানা। যে দলের কাছে চ্যাম্পিয়ন হওয়াটা স্বাভাবিক ছিল। এমন জনপ্রিয় দল যদি বছরের পর বছর ব্যর্থতার বৃত্তে বন্দি থাকে। স্বাভাবিকভাবে সমর্থকরা তো লিগের প্রতি আগ্রহ হারাবেই। ৩/৪টি দল যদি নিয়মিত শিরোপা লড়াইয়ে থাকত তাহলে লিগের আকর্ষণ হতো অন্যরকম। এতে বিভিন্ন ভেন্যুর দর্শকের খরাও কাটত।
যাক অনেক দিন পর তো পেশাদার লিগে নতুন চ্যাম্পিয়নের দেখা মিলেছে। দলটি আবার ঐতিহ্যবাহী ঢাকা মোহামেডান। এতটা দাপট দেখিয়েছে যে, তিন ম্যাচ আগেই চ্যাম্পিয়ন। ভাবা যায় যেখানে তিনটি করে ম্যাচ বাকি সেখানে ঢাকা আবাহনী ১০, বসুন্ধরা কিংসের চেয়ে ১৩ পয়েন্টে এগিয়ে শিরোপা নিশ্চিত করে। পেশাদার লিগে প্রথম, আর সব মিলিয়ে ২৩ বছর পর সাদা-কালোরা চ্যাম্পিয়ন হয়েছে। তর্কের খাতিরে ধরে নিলাম শিরোপা লড়াইয়ে একঘেয়েমি নেমে এসেছিল বলে লিগ আকর্ষণ হারাচ্ছিল। এবার তো দর্শক বাড়বে! আসর কি আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে? এ নিয়ে সাবেক তারকারা কী বলেন।
গোলাম সারোয়ার টিপু স্বাধীনতার পর তিন বছর আবাহনীতে খেললেও তাকে সবাই মোহামেডানের ঘরের লোক বলে জানে ও চেনে। তার কাছে জানতে চাওয়া হয়েছিল নতুন চ্যাম্পিয়নে লিগের আকর্ষণ বা দর্শক বাড়বে কি? তিনি বলেন, ‘অনেক দিন পর মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় খুশি। দলের সবাইকে অভিনন্দন জানায়। তবে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় লিগের চেহারা বদলে যাবে তা আমি মনে করি না। বিশেষ করে দর্শকের বেলায় বলব কখনো আমরা ৭০ বা ৮০ দশকে ফিরে যেতে পারব না। টিভিতে তারা প্রতিদিনই বড় বড় ফুটবলারদের খেলা দেখছেন। এসব দেখে স্বাদই পাল্টে গেছে। তবে এটা বলব মোহামেডান, আবাহনী ও বসুন্ধরা কিংসের মধ্যে প্রতি বছর যদি হাড্ডাহাড্ডি লড়াই হয় তাতে লিগের আকর্ষণ বাড়বে। আর শিরোপা শেষ ম্যাচে নিষ্পত্তি হলে তাহলে উত্তেজনা থাকবে অন্য রকম। ঘরোয়ার বদলে এখন বাংলাদেশের ম্যাচেই দর্শক বাড়ার সম্ভাবনা বেশি। হামজা খেলেছেন, সামিতও খেলবেন। এসব মানসম্পন্ন প্রবাসী ফুটবলারদের ক্যারিশম্যা দেখতে দর্শক আসবে। আবার জাতীয় দলের জনপ্রিয়তা ঘরোয়া ফুটবলে কাজে লাগবে। এখানে বাফুফের দায়িত্ব অনেক।’ আরেক নন্দিত ফুটবলার আশরাফ উদ্দিন আহমেদ চুন্নু বলেন, ‘আবাহনীতে খেলেই ক্যারিয়ার পার করেছি। তারপরও এবার লিগে মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বড্ড খুশি হয়েছি। ঐতিহ্যবাহী এক দল। ক্রীড়াঙ্গনে তাদের অবদান স্মরণীয় হয়ে আছে। সেই ক্লাবই পেশাদার লিগে চ্যাম্পিয়ন না হওয়াটা ছিল ট্র্যাজেডি। আমি আরও খুশি হয়েছি। একজন দেশি কোচ আলফাজ আহমেদের প্রশিক্ষণে ২৩ বছর পর লিগ জেতায়। মোহামেডান চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বলেই সামনে থেকে লিগে দর্শক ও আসর আকর্ষণীয় হয়ে উঠবে তা আমি বলব না। তবে ধারাবাহিকভাবে শিরোপা লড়াইয়ে যদি একাধিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকে তাহলে অবশ্যই চেহারা বদলাবে। ঘরোয়া ফুটবলই তো দেশের প্রাণ। এ আসর আরও আকর্ষণীয় হয়ে উঠলে দেশেরই লাভ। এখানে ফুটবল ফেডারেশনেরও অনেক কাজ রয়েছে।’