বাংলাদেশের প্রশংসায় পঞ্চমুখ ক্রিকেটের অভিভাবক সংস্থা-আইসিসি। বিদেশি সাংবাদিকরাও অভিভূত। টি-২০ বিশ্বকাপের আগের চার আসরে নাকি এতো চমৎকার আয়োজন আর করতে পারেনি কোনো দেশ! কিন্তু আসল জায়গায়, ফলাফল- শূন্য। বিশ্বকাপের মতো বড় আসর সফলভাবে আয়োজনের জন্য বাংলাদেশ শতকরা ৯০ নম্বর পেলেও মাঠের ক্রিকেটে ১০ নম্বর পাওয়ার উপযুক্তও নন মুশফিকরা। প্রত্যাশা, প্রাপ্তি এবং যোগ্যতা -সব কিছু মিলে এবারের বিশ্বকাপের সবচেয়ে ব্যর্থ দল বাংলাদেশ। আর সেরা? আকাশে চাঁদ দেখে কি আর নতুন করে বলার দরকার আছে 'চাঁদ উঠেছে'। ...লঙ্কানরাই সেরা। দ্বিপক্ষীয় সিরিজ, এশিয়া কাপ এবং টি-২০ বিশ্বকাপ টানা সাফল্য শ্রীলঙ্কার। ওয়ানডে টি-২০ মিলে বিশ্বকাপের ফাইনালে চার চারবার ব্যর্থতার পর অবশেষে সফল। ১৯৯৬ এরপর ২০১৪, রচিত হলো নতুন রূপকথা।
প্রত্যাশা এবং প্রাপ্তির কথা চিন্তা করে এই বিশ্বকাপে লঙ্কারদের পরই দ্বিতীয় সেরা অবশ্যই নেদারল্যান্ড। ডাচ্দের ওয়ানডে স্ট্যাটাস নেই। ক্রিকেটাররা ঠিকমতো বেতনই পান না। তাছাড়া ফুটবলের গগণ চুম্বী জনপ্রিয়তার কাছে ক্রিকেট একেবারে নস্যি! তাই নেদারল্যান্ডের অধিবাসীরাও ক্রিকেট নিয়ে খুব একটা স্বপ্ন দেখেন না। তারপরেও বিশ্বকাপে এসে বাজিমাত করল ডাচ ক্রিকেটাররা। এবার সুপার টেনে ওঠাই ছিল নেদারল্যান্ডের জন্য অপ্রত্যাশিত। কিন্তু ডাচ্রা গ্রুপ পর্বে আইরিশদের অবিশ্বাস্যভাবে হারিয়ে সুপার টেনে ইংলিশদের ঘাঁড় মটকে ধরেছে। নেপালিরাও দারুণ সফল। প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপে সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করেছে তারা। গ্রুপ পর্বে আফগানিস্তান ও হংকংকে হারিয়ে সুপার টেন প্রায় নিশ্চিত করেই ফেলেছিল। কিন্তু নেট রানরেটে বাংলাদেশের চেয়ে পিছিয়ে থাকায় বিদায় নিতে হয়। তারপরেও দেশের ফেরার পর নেপালি ক্রিকেটারদের বীরোচিত সংবর্ধনা দিয়েছে দেশটির সরকার। প্রথমবারের মতো খেলতে এসে হংকং তো বাংলাদেশকে হারিয়ে ইতিহাসই গড়ে ফেলল।
ভারত ফাইনাল খেললেও সক্ষমতা ও প্রত্যাশার কথা চিন্তা করলে শিরোপা ছাড়া তাদের মানায় না। দুর্দান্ত কিছু বোলার, বিশ্বসেরা ব্যাটিং লাইনআপ এবং দুরন্ত ফিল্ডারদের সমন্বয়ে গড়া দলটি ফাইনালে নিজেদেরকে মেলে ধরতে ব্যর্থ হয়। ক্রিকেট এমনই। হঠাৎ কখনো এমন ঘটনা ঘটতেই পারে। কিন্তু দক্ষিণ আফ্রিকা তো একটুও বদলায়নি। তারকাসমৃদ্ধ দলটি চমৎকার খেলেই সেমিতে জায়গা করে নেয়। কিন্তু ভারতের কাছে হেরে যায় অনায়াসে। সত্যি কথা বলতে কী, প্রোটিয়ারা হেরে গেছে চাপের কাছেই। সেমিফাইনালের চাপ তারা সহ্য করতে না পেরে বিদায় নেওয়ার পাশাপাশি নিজেদের 'চোকার্স' নামটাকে আরও উজ্জ্বল করে তুলেছে।
ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিদায় ঘণ্টা বেজে যায় সেমিফাইনালে লঙ্কানদের কাছে বৃষ্টি আইনে হেরে গিয়ে। গেইল-স্যামিরা যেভাবে তাণ্ডব দেখিয়ে শেষ চারে জায়গা করে নিয়েছিলেন, মনে হচ্ছিল টানা দ্বিতীয় শিরোপাই পেতে যাচ্ছে ক্যারিবীয়রা। কিন্তু ভাগ্য তাদের সহায় ছিল না। নিউজিল্যান্ড ও পাকিস্তানের অবস্থা একই। ভালো খেলেও যেন অন্যদের জায়গা করে দিতেই তারা সরে গেছে গ্রুপ পর্ব থেকে। ক্রিকেটের দুই মোড়ল ইংল্যান্ড ও অস্ট্রেলিয়া দেশে ফিরেছে হতাশা নিয়েই। বাংলাদেশে এসেছিল শিরোপা জিততে, কিন্তু গ্রুপ পর্বের গণ্ডিই পার হতে পারেনি অসিরা। ইংলিশরা তো ডাচ্দের কাছেও হেরে যায়। বেতন-ভাতার দাবিতে ধর্মঘটের কারণে এবারের বিশ্বকাপে জিম্বাবুইয়ানদের অংশগ্রহণ করার কথাই ছিল না। তারপরেও শেষ মুহূর্তে বোর্ডের সঙ্গে ঝামেলা মিটে যায়। কিন্তু সুপার টেনে জায়গা পায়নি দলটি। অবশ্য টেস্ট খেলুড়ে দলগুলোর মধ্যে একমাত্র জিম্বাবুয়েই সুপার টেনে খেলতে পারেনি। আইরিশদের জন্য বিশ্বকাপটা দুঃস্বপ্নই! সুপার টেনে যাওয়ার সব আয়োজনই শেষ করেছিল তারা। কিন্তু ডাচ্রা অতি মানবীয় ক্রিকেট খেলায় সব ভণ্ডুল হয়ে যায়। আর সংযুক্ত আরব আমিরাত তো বাংলাদেশে এসেছিল বনভোজন করতে, তাদের উদ্দেশ্য পূরণই হয়েছে। আফগানদের হারানোর কিছু নেই, অংশগ্রহণই তাদের জন্য বড় কিছু।
তবে সবচেয়ে ব্যর্থ দল বাংলাদেশ। মুশফিকরা ঘরের মাঠে হয়েছে বাক্সবন্দী। শুধু হংকং ট্রাজেডি-ই নয়, কোনো ম্যাচেই প্রতিদ্বন্দ্বিতা করতে পারেনি টাইগাররা। সাকিব, এনামুল, আলআমিন ছাড়া অন্য কোনো ক্রিকেটারই সুবিধা করতে পারেনি। সব মিলে ঘরের মাঠে ব্যর্থ এক মিশন শেষ করল বাংলাদেশ।