দেড় যুগ পর আবারও বিশ্বসেরা শ্রীলঙ্কা। ওয়ানডে এবং টি-২০ বিশ্বকাপের চার চারটি আসরে 'সেকেন্ড বয়' থাকার পর ২০১৪ সালে সেই বন্ধ্যাত্ব ঘুচিয়েছে দ্বীপরাষ্ট্র। ১৯৯৬ সালের পর দ্বীপরাষ্ট্রকে আবারও বিশ্বসেরা করেছেন এই মুহূর্তের সবচেয়ে ধারাবাহিক ক্রিকেটার কুমার সাঙ্গাকারা। পরশু রাতে মিরপুরে টি-২০ বিশ্বকাপের ফাইনালে সাঙ্গাকারা খেলেছেন ৩৫ বলে ৫২ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস। তারপরও এই লঙ্কানের জায়গা হয়নি আইসিসির বাছাই টি-২০ একাদশে। একাদশে জায়গা পাননি বাংলাদেশের কোনো ক্রিকেটারও। ভারতকে চ্যাম্পিয়ন করতে না পারলেও 'মি. কুল' মহেন্দ্র সিং ধোনিকে অধিনায়ক নির্বাচিত হয়েছেন আইসিসি একাদশের। একাদশে সর্বোচ্চ চারজন ভারতের, দুজন করে দক্ষিণ আফ্রিকা ও ওয়েস্ট ইন্ডিজের এবং একজন করে নেদারল্যান্ডস, অস্ট্রেলিয়া ও শ্রীলঙ্কার।
আইসিসির নির্বাচিত একাদশে আইসিসি সহযোগী দেশ নেদারল্যান্ডসের বাঁ হাতি ওপেনার স্টিফেন মাইবার্গের সুযোগ পাওয়াটা বিস্ময়ের। কিন্তু অসাধারণ খেলেছেন এ বাঁ হাতি ওপেনার। রান করেছেন ২২৪। তার সঙ্গী ওপেনার ভারতের রোহিত শর্মা। যার রান ২০০। ওয়ান ডাউন পজিশন নিয়ে ভাবতে হয়নি এলিট প্যানেলের। টুর্নামেন্ট সেরা বিরাট কোহলি জায়গা করে নিয়েছেন চোখবন্ধ করে। ৬ ম্যাচে চার হাফসেঞ্চুরিতে তার রান ৩১৯। এরমধ্যে সেমিফাইনালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে ছিল অপরাজিত ৭২ এবং ফাইনালে খেলেন ৭৭ রানের দৃষ্টিনন্দন ইনিংস।
একাদশ নির্বাচন করতে গলদগর্ম অবস্থার সৃষ্টি হয়েছিল ডেভিড বুনের নেতৃত্বাধীন আইসিসির এলিট প্যানেলের। একাদশ নির্বাচন করতে যেয়ে তাই বলেন সাবেক অসি ওপেনার, 'একাদশ নির্বাচন করা আসলেই কঠিন ছিল। অনেককেই বাদ দিতে হয়েছে।' পারফরম্যান্স করার পরও জায়গা পাননি ভারতীয় লেগ স্পিনার অমিত মিশ্র, দুই প্রোটিয়াস এবি ডি ভিলিয়ার্স ও ইমরান তাহির, শ্রীলঙ্কার অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, রঙ্গনা হেরাথ, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সুনীল নারাইন ও ডোয়াইন ব্রাভোর। বাংলাদেশের সেরা পারফরমার ছিলেন সাকিব আল হাসান। যিনি ১৮৬ রান করার পাশাপাশি উইকেট নিয়েছেন ৮টি। চার নম্বর পজিশনে ব্যাট করবেন প্রোটিয়াস ব্যাটসম্যান জ্যা পল ডুমিনি। পাঁচ নম্বরে সুযোগ পেয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার হার্ড হিটার গ্লেন ম্যাঙ্ওয়েল। ছয় নম্বরে ব্যাট করবেন ধোনি। যিনি পুরো আসরে রান করেছেন মাত্র ৫০ এবং উইকেটরক্ষক হিসেবে ডিসমিসাল ৬টি। কিন্তু ভারতকে যেভাবে পরিচালনা করেছেন, তা এক কথায় অসাধারণ। ক্যারিশমা দেখেই তাকে দলনেতা নির্বাচন করেছেন বুনরা। এবারের আসরে সেরা ক্রিকেটার যেমন কোহলি, তেমনি আলোচিত ক্রিকেটার ক্যারিবীয় অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে হারা ম্যাচ তিনি জিতিয়েছেন চার-ছক্কার ঝড় তুলে। মাত্র ১০ বলে রান তুলেছিলেন ৩১। ১০০ রান করার পরও তার এই বিধ্বংসী ব্যাটিং জায়গা করে দিয়েছে সাত নম্বর পজিশনে।
এলিট প্যানেল একাদশ সাজিয়েছেন ৬ স্পেশালিস্ট ব্যাটসম্যান, তিনজন অলরাউন্ডার ও চার বোলারকে নিয়ে। অলরাউন্ডার ক্যাটাগরিতে রয়েছেন ধোনিও। বোলারদের মধ্যে সুযোগ পেয়েছেন ভারতের 'ক্যারম বল' স্পিনার রবীচন্দন অশ্বিন। যিনি উইকেট সংখ্যা ১১টি। ১৪ উইকেট পেয়েও সুযোগ পাননি তাহির। একাদশে নতুন বলে বোলিং করবেন দুই পেসার ডেল স্টেইন ও ল্যাসিথ মালিঙ্গা। মালিঙ্গা সুযোগ পেয়েছেন ফাইনালে দুর্দান্ত বোলিং করে। অবাক করেছে তাহিরকে পিছনে ফেলে ক্যারিবীয় লেগ স্পিনার স্যামুয়ের বদ্র্রির সুযোগ পাওয়া। বদ্র্রির উইকেট ১১টি। স্বাভাবিক নিয়মে একজন দ্বাদশ ব্যক্তি রয়েছে। তিনি ক্যারিবীয় ক্রিসমার সান্তোকি। আইসিসির এলিট প্যানেলের প্রধান ছিলেন বন। তার সতীর্থ ছিলেন পাকিস্তানের সাবেক অধিনায়ক ওয়াসিম আকরাম, সাবেক ইংলিশ অধিনায়ক নাসির হুসেন, ওয়েস্ট ইন্ডিজের সাবেক ফাস্ট বোলার ইয়ান বিশপ, এলিট প্যানেলের আম্পায়ার মারাইস ইরাসমুস এবং বাংলাদেশের ক্রীড়া সাংবাদিক উৎপল শুভ্র।
স্কোয়াড : রোহিত শর্মা (ভারত, ২০০ রান), স্টিফেন মাইবার্গ (নেদারল্যান্ডস, ২২৪ রান), বিরাট কোহলি (ভারত, ৩১৯ রান), জেপি ডুমিনি (দক্ষিণ আফ্রিকা, ১৮৭ রান), গ্লেন ম্যাঙ্ওয়েল( অস্ট্রেলিয়া, ১৪৭ রান), মহেন্দ্র সিং ধোনি (ভারত, অধিনায়ক, ৫০ রান, ৬ ডিসমিসাল), ড্যারেন স্যামি (ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১০১ রান), রবীচন্দন অশ্বিন (ভারত, ১১ উইকেট), ডেল স্টেইন (দক্ষিণ আফ্রিকা, ৯ উইকেট), স্যামুয়েল বদ্র্রি
(ওয়েস্ট ইন্ডিজ, ১১ উইকেট), ল্যাসিথ মালিঙ্গা
(শ্রীলঙ্কা, ৫ উইকেট)। ক্রিসমার সান্তোকি
(ওয়েস্ট ইন্ডিজ, দ্বাদশ ম্যান, ৮ উইকেট)।