থিয়াগো এমিলিয়ানো দা সিলভা। বন্ধুরা 'থিয়াগো সিলভা' নামেই ডাকেন। ফুটবল বিশ্বেও তিনি এ নামেই পরিচিত। এই থিয়াগো সিলভাই এবার ব্রাজিলের 'প্রধান প্রহরী'। বিশ্বকাপে ব্রাজিলের 'কাণ্ডারী'। হেঙ্া শিরোপা মিশনের প্রধান সেনাপতি। ব্রাজিলের ২১ কোটি মানুষের স্বপ্ন সারথি। থিয়াগো সিলভার দিকে তাকিয়ে সারা বিশ্বের ব্রাজিল ভক্তরাও। ব্রাজিল অধিনায়ক নিয়েও এবারের বিশ্বকাপ নিয়ে রোমাঞ্চিত। স্বপ্ন দেখছেন ঘরের মাঠে বিশ্বকাপ জয়ের। থিয়াগো ব্রাজিলের 'সেন্ট্রাল ব্যাক'। শুধু তাই নয়, বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে দ্রুত গতির ডিফেন্ডারও। মজার ব্যাপার হচ্ছে, থিয়াগো পেশাদার ফুটবল শুরু করেছিলেন 'রাইট উইঙ্গার' হিসেবে। ছেলেবেলায় স্বপ্ন দেখতেন, পেলের মতো বড় মহাতারকা হওয়ার। দিয়েগো ম্যারাডোনের জাদুকরি ফুটবলও তাকে মোহিত করতো। তাই দলের প্রয়োজনে তিনি যখন 'উইঙ্গার' থেকে 'মিডফিল্ডার' হিসেবে খেলতে শুরু করলেন, তখনো খারাপ লাগেনি। তারপর সেখান থেকে ডিফেন্সিভ মিডফিল্ডার, অবশেষে ডিফেন্ডার। ব্রাজিলের রিও ডি জেনিরোতে জন্ম নেওয়া সদা হাস্য এই ছেলেটি যখন যে পজিশনে খেলেছেন, সেখানে তার প্রতিভার স্বাক্ষর রেখেছেন। বর্তমানে ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইনের হয়ে রক্ষণভাগেই বাজিমাত করছেন। অলিখিতভাবে বিশ্বের সেরা ডিফেন্ডারের 'খেতাব'টাও যেন পেয়ে গেছেন ছয় ফুট উচ্চতার এ ব্রাজিলিয়ান তারকা। এখন শুধু ঘরের মাঠে হলুদ জার্সিতে তা নতুন করে দেখানোর অপেক্ষা। থিয়াগো সিলভার ফুটবল শুরু ফ্লুমেনিজে। কিন্তু ব্রাজিলের পেশাদার এই ফুটবল ক্লাবে হাতে খড়ি হলেও বড় হয়ে ওই ক্লাবের সঙ্গে তিনি কোনো চুক্তিতে স্বাক্ষর করেননি। কিশোর থিয়াগো প্রস্তাব পান পেশাদার ফুটবল ক্লাব আরএস-এ খেলার। ক্লাবটি অবস্থিত রিও গ্রান্দ দো সুল নামের ছোট এক রাজ্যে। ২০০৪ সালে তিনি জুভেনটুডেতে যোগ দিয়ে প্রথম বিভাগে দারুণ এক মৌসুম কাটান। এ সময়ই কোচের পরামর্শে রক্ষণভাগে খেলা শুরু করেন থিয়াগো। ডিফেন্সে তার দ্রুত গতি ও কৌশল ইউরোপের ক্লাবগুলোকে মুগ্ধ করে। এরপর তিনি পর্তুগালের পোর্তো, রাশিয়ার ডায়নামো মস্কো, ইতালির এসি মিলানে খেলেছেন। অবশেষে ২০১২ সালে যোগ দিয়েছেন ফরাসি ক্লাব প্যারিস সেন্ট জার্মেইনে। থিয়াগোর ফুটবল ক্যারিয়ার আর ১০টা ফুটবলারের মতো সহজ সরল নয়। তাকে অনেক চড়াই উৎড়াই পেরিয়ে আসতে হয়েছে। ইনজুরি তাকে অনেক ভুগিয়েছে। পোর্তো ও ডায়নামো মস্কোতে এক মৌসুম করে কাটানোর পর ইনজুরির কারণে ব্রাজিলে ফিরতে বাধ্য হয়েছিলেন। তারপর ফ্লুমিনিজে কাটিয়েছেন দুই বছর। নতুন করে ফর্ম ফিরে পাওয়ায় আবারও পাড়ি জমিয়েছেন ইউরোপে। জাতীয় দলের জার্সি থিয়াগোর অভিষেক ২০০৮ সালে। খেলেছেন ওই বছর গ্রীষ্মকালীন অলিম্পিকেও। কোচ ডুঙ্গা দারুণ পছন্দ করতেন থিয়াগোকে। তাই অলিম্পিকে অনূধর্্ব-২৩ দলে খেলা দুজন বেশি বয়সী ফুটবলারের মধ্যে একজন ছিলেন রোনালদিনহো, আরেকজন থিয়াগো। ২০১০ সালের ফিফা বিশ্বকাপে ব্রাজিল দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য ছিলেন তিনি। তারপর দক্ষিণ আফ্রিকায় ব্রাজিলের ভরাডুবি, ডুঙ্গা বরখাস্ত। কিন্তু কোচ মানো মেনেজেসের প্রথম পছন্দ সিলভা। এখন স্কলারিও থিয়াগোকেই সবচেয়ে বেশি ভালোবাসেন।