পরশু বিকালে নিউ সাউথ ওয়েলসের নিজস্ব ওয়েবসাইট যখন জানায় চন্ডিকা হাতুরাসিংহের পদত্যাগের খবরটি। তখনই নিশ্চিত হয়ে যায়, মুশফিকুর রহিমদের হেড কোচ হচ্ছেন এই শ্রীলঙ্কান। দুপুরেই হাতুরাসিংহের চুক্তিপত্র হাতে চলে আসে বিসিবির। বিকালে বিসিবি সভাপতি নাজমুল হাসান পাপন ঘটা করে জানিয়ে দেন হেড কোচ হিসেবে তার নাম। জানান আগামী দুই বছরের জন্য নিয়োগ দেওয়া হয়েছে হাতুরাসিংহেকে। কোচ নিয়োগে হাফ ছেড়ে বেঁচেছে ক্রিকেট বোর্ড। তবে গোপন রেখেছে তার চুক্তির শর্তাবলী। এরমধ্যে অন্যতম তার বেতন। শোনা যায়, ২৬ টেস্ট ও ৩৫টি ওয়ানডে খেলা হাতুরাসিংহের বেতন শেন জার্গেনসেনের চেয়েও কম। জার্গেনসেন বেতন পেতেন ১৪ হাজার ডলার। হাতুরার বেতন ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ ডলার। বাংলাদেশ টাকায় ৯ লাখ ৭৫ হাজার টাকা (প্রতি ডলার ৭৮ টাকা হিসেবে)।
২০০০ সালে টেস্ট স্ট্যাটাস পাওয়ার পর হাতুরাসিংহে টাইগারদের নবম কোচ। টাইগারদের কোচ হয়েছেন তিনি হঠাৎ করেই। গত ২৮ এপ্রিল জার্গেনসেন পদত্যাগ করেন। যদিও তার মেয়াদ ছিল ২০১৫ সালের বিশ্বকাপ পর্যন্ত। তার পদত্যাগে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে যাওয়া বিসিবি তড়িগড়ি করে একটি কমিটি গঠন করে কোচ সন্ধান করতে থাকে। কমিটির অন্যতম সদস্য মাহাবুব আনাম যোগাযোগ করেন হাতুরাসিংহের সঙ্গে। সেটা ৮ মে। এরপর ১০ মে প্রথম বাংলাদেশ প্রতিদিনে ছাপা হয় টাইগারদের কোচ হতে যাচ্ছেন হাতুরাসিংহে। যদিও পরের কয়েকদিন বিভিন্ন মিডিয়ায় সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে, হাতুরাসিংহে বাংলাদেশের নয় শ্রীলঙ্কার কোচ হতে আগ্রহী। ২০১০ সালে ট্রেভর বেইলিসের সহকারী হিসেবে হাতুরাসিংহে কাজ করেছেন শ্রীলঙ্কান ক্রিকেট দলে। হাতুরাসিংহের সঙ্গে যোগাযোগ রাখার পাশাপাশি মাইকেল বেভান, অ্যালান বুচার, রুমেশ কালবিথারানাদের সঙ্গেও আলোচনা করেন কমিটি। ১৬ মে বিসিবি নিশ্চিত হয় হাতুরাসিংহের বিষয়ে। অবশেষে গত পরশু অবসান ঘটে সব জল্পনা-কল্পনার।
হাতুরাসিংহে টাইগারদের প্রথম শ্রীলঙ্কান কোচ। অনেক আলাপ-আলোচনার পর হাতুরাসিংহেকে নিয়োগ দেওয়া হলেও সুযোগ সুবিধা প্রাপ্তিতে পিছিয়ে জার্গেনসেন, জেমি সিডন্স, স্টুয়ার্ট ল কিংবা রিচার্ড পাইবাসের চেয়ে। উল্লেখিত চারজনের চেয়ে তার বেতন কম। বেতন কত জানাতে রাজি হননি বিসিবির ভারপ্রাপ্ত সিইও নিজামুদ্দিন চৌধুরী সুজন, 'চুক্তির শর্তানুযায়ী তার বেতন জানানো যাবে না। তবে একজন আন্তর্জাতিক কোচ যা যা সুবিধা পাবেন, তার সবই দেওয়া হবে তাকে।' অবশ্য বিসিবির ঘনিষ্ঠ এক সূত্র জানিয়েছে, হাতুরাসিংহের বেতন কোনোভাবেই জার্গেনসেনের চেয়ে বেশি নয়। বেতন ১০ থেকে ১২ হাজার ডলার। সত্যিকার অর্থে এই লঙ্কানের বেতন ধরা হয়েছে ১২ হাজার ৫০০ ডলার। ২৫ শতাংশ ট্যাঙ্ বহন করবে বিসিবি। জার্গেনসেনের বেতন ছিল ১৪ হাজার ডলার। বিসিবির নিয়োগপ্রাপ্ত কোচদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি বেতন পেতেন রিচার্ড পাইবাস, ২০ হাজার ৮৩৩ ডলার। স্টুয়ার্ট ল ১৮ হাজার ৭৫০ ডলার এবং জেমি সিডন্স ১৬ হাজার ডলার।
এদের তুলনায় সুযোগ সুবিধাও খুব ভালো নয় হাতুরাসিংহের। বাৎসরিক ছুটি পাবেন ৩০ দিন। সবচেয়ে বেশি ৪৫ দিন ছুটি ছিল পাইবাসের। ল ও জার্গেনসেন ৩০ দিন করে এবং সিডন্স পেতেন ৪০ দিন। চুক্তি অনুযায়ী প্রতি বছর ব্রিসবেন যাওয়ার দুটি বিজনেস ক্লাসের টিকিট পাবেন মুশফিকদের নতুন কোচ। তাকে বাড়িভাড়া দেওয়া হবে ৭০ হাজার টাকা। টিম বোনাসও পূর্বসূরিদের সমান পাচ্ছেন না তিনি। জার্গেনসেন, ল, সিডন্স ও পাইবাসের সমান টেস্ট ও টি-২০ ম্যাচের উইনিং বোনাস পাবেন হাতুরাসিংহে। টেস্ট উইনিং বোনাস ২০০০ ডলার এবং টি-২০ বোনাস ৫০০ ডলার। নতুন কোচ ওয়ানডে উইনিং বোনাস পাবেন ১০০০ ডলার। অন্যরা পেতেন ১৫০০ ডলার করে। ফোন বিল বাবদ তাকে মাসে দেওয়া হবে ৩০০০ টাকা। এক্ষেত্রে সবচেয়ে বেশি পেতেন সিডন্স, ল্যান্ড ও মোবাইল ফোনের বিল পেতেন বছরে প্রায় ১ লাখ টাকা। সুযোগ সুবিধা অন্যদের চেয়ে কম পেলেও কোচ হিসেবে তার সামর্থ্য নিয়ে কোনো প্রশ্ন নেই। চুক্তি ৩০ জুন থেকে হলেও তার আগেই ঢাকায় আসছেন হাতুরাসিংহে। ১০ জুন ঢাকায় আসবেন এবং টিমের দায়িত্ব তুলে নিবেন ১৩ জুন। টাইগারদের হেড কোচ হিসেবে তার প্রথম অ্যাসাইনমেন্ট ভারতের বিপক্ষে তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ।