বিশ্বকাপ ফুটবল তো ডাচদের জন্য শোকগাঁধা, বেদনার ইতিহাস। ফুটবল বিশ্বের নেদারল্যান্ডসই একমাত্র দেশ যারা তিন তিনবার বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলেও কোনো শিরোপা জিততে পারেনি। ১৯৭৪, ১৯৭৮ এবং ২০১০ সালে ফুটবল দেবতা যেন চরমভাবে হতাশ করেছে ডাচদের! তাই তো ফাইনালে তিনবারই শক্তি-সামর্থ্য-কৌশলে প্রতিপক্ষের চেয়ে অনেক বেশি এগিয়ে থেকেও হারতে হয়েছে দুর্ভাগ্যজনকভাবে।
১৯৭৪ সালে ইয়োহান ক্রুইফ ক্যারিশম্যাটিক ফুটবল উপহার দিয়ে ফাইনালে নিয়ে যান নেদারল্যান্ডসকে। শেষ লড়াইয়ে পশ্চিম জার্মানির বিরুদ্ধে শুরুতেই এগিয়ে যায় তারা। কিন্তু তারপরেও সেই ম্যাচেই কিনা ২-১ গোলে হেরে শিরোপা হাত ছাড়া হয়ে যায়। ৭৮-এর বিশ্বকাপে আর্জেন্টিনার বিরুদ্ধে ফেবারিট থাকা সত্ত্বেও হেরে যায় ৩-১ গোলে। ঠিক একইভাবে ডাচরা বঞ্চিত হয় গত বিশ্বকাপেও। ফাইনালে স্পেনের বিরুদ্ধে বেশ কয়েকটি সহজ সুযোগ নস্ট করার পর অতিরিক্ত সময়ের গোলে তারা শিরোপা হারায়। ব্রাজিল বিশ্বকাপেও ডাচদের উড়ন্ত সূচনা। প্রথম ম্যাচেই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন স্পেনকে তারা ৫-১ গোলে হারিয়ে প্রতিশোধ নিয়েছে। দ্বিতীয় ম্যাচে তারা অস্ট্রেলিয়ার মুখোমুখি। জিতলেই নকআউট পর্বের টিকিট পেয়ে যাবে নেদারল্যান্ডস। তবে স্পেনকে সহজে হারালেও অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে জেতা মোটেও সহজ নয়, বরং অঘটন ঘটানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন অস্ট্রেলিয়ার ফরোয়ার্ড ম্যাথু লেকি। যদিও প্রথম ম্যাচে চিলির কাছে ৩-১ গোলে হেরেছে অসিরা, তারপরেও নেদারল্যান্ডসের বিরুদ্ধে দারুন উজ্জীবিত তারা। ম্যাথু লেকি বলেন, 'আমরা নেদারল্যান্ডসকে এমনভাবে আঘাত করব, যা তারা প্রত্যাশা করেনি। আশা করি যখনই কোন সুযোগ পাব আমরা তাৎক্ষণিকভাবে সেটির সদ্ব্যাবহার করব। আমরা আমাদের গেম পরিকল্পনা নিয়েই মাঠে নামব। চিলির বিপক্ষে শেষ ৭০ মিনিট আমরা যেভাবে খেলেছি সেভাবেই ডাচদের বিপক্ষে লড়ব। আশা করি এভাবেই আমরা জয়ের পথ খুঁজে পাব।'
প্রথম ম্যাচে স্পেনকে উড়িয়ে দেওয়ার পর অনেকে নেদারল্যান্ডসকে চ্যাম্পিয়ন ভাবতে শুরু করেছেন। কিন্তু ডাচ অধিনায়ক রবিন ফন মনে করেন, এমন ভাবনা বিলাসী। অতীত থেকে শিক্ষা নিয়েই তিনি সামনে এগুয়েতে চান। প্রতিপক্ষ কে তা না ভেবে প্রতি ম্যাচেই নিজেদের সেরাটাই দিতে চান। পার্সি বলেন, 'বিশ্বকাপ তো কেবল শুরু হলো। আমরা অসাধারণ একটি জয় পেয়েছি। কিন্তু শিরোপার জন্য আমাদের এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে।' তবে প্রথম ম্যাচের কথা ভেবে এ ম্যাচে অতি আত্দবিশ্বাসী না হওয়ার জন্য সতীর্থদের অনুরোধ করেছেন পার্সি। তিনি বলেন, 'চিলির কাছে হেরে বলে অস্ট্রেলিয়াকে ছোট করে দেখার কিছু নেই। বিশ্বকাপের প্রতিটি দলই যেকোন প্রতিপক্ষকে হারানোর ক্ষমতা রাখে। তাই আমার এখন মনোযোগ শুধুই অস্ট্রেলিয়া ম্যাচের প্রতি। আমার মনে এই ম্যাচটি হবে ভিন্ন একটি ম্যাচ। অস্ট্রেলীয়রা ভিন্ন ধাচের ফুটবল খেলে থাকে। চিলির বিরুদ্ধে খেলা দেখেছি। ওরা হেরেছে ঠিকই, কিন্তু লড়াই করেছে। তাই একটু অসতর্ক হয়েই বিপদ হতে পারে।'
আজ রাতে অন্য ম্যাচে ক্রোয়েশিয়ার মুখোমুখি হয়ে আফ্রিকার অদম্য সিং ক্যামেরুন। দুই দলই প্রথম ম্যাচে হেরেছে। ক্রোটরা ৩-১ গোলে হেরেছে ব্রাজিলের কাছে। আর ১-০ গোলে মেক্সিকোর বিরুদ্ধে পরাজিত হয়েছে ক্যামেরুন।