সহ সভাপতি নির্বাচনের আগে বৈঠকে বসে বিসিবির পরিচালনা পর্ষদ। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে ক্রিকেট দলের লজ্জাজনক পারফম্যান্সের কারণ খুঁজে বের করতে একটি টেকনিক্যাল কমিটি গঠনের সিদ্ধান্ত নেয় পর্ষদ। এর আগেও কমিটি গঠিত হয়েছে। কিন্তু ফলাফল শূন্য। তারপরও নতুন কমিটি গঠন হওয়ার পর দেশের ক্রিকেটের কতটা লাভ হবে, এ নিয়ে প্রশ্ন সবার। কমিটি গঠন হউক, বা না হউক, মুশফিকুর রহিমরা ফের লজ্জার কালো কাপড়ে ঢেকে দিল বাংলাদেশকে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৫০০তম টেস্টে একদিন আগেই ২৯৬ রানের বিরাট ব্যবধানে হেরেছে টাইগাররা। যা রানের ব্যবধানে ক্যারিবীয়দের বিপক্ষে সর্বোচ্চ ব্যবধান। আগের সর্বোচ্চ ব্যবধান ছিল ২২৯ রান, ২০১১ সালে। এ নিয়ে ৬ সিরিজের ১২ টেস্টে অষ্টম জয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের।
কিংসটাউন টেস্টে দ্বিতীয় ইনিংসে অধিনায়ক মুশফিকুর রহিমের সেঞ্চুরিতে জোর লড়াই করেছিল টাইগাররা। তারপরও হেরেছিল ১০ উইকেটের বড় ব্যবধানে। সেই ধাক্কা সামলানোর টার্গেট সেন্ট লুসিয়াকে করেছিল নামে মুশফিকবাহিনী। কিন্তু আত্মবিশ্বাসে চিড় ধরা ব্যাটসম্যানদের ব্যর্থতায় উল্টো ঘুরে দাঁড়ানোর রাস্তাই হারিয়েই ফেলে টাইগাররা। সেন্ট লুসিয়ার বোসেজর স্টেডিয়ামে বোলাররা ভালো করলেও ব্যাটসম্যানরা ছিলেন যাচ্ছেতাই। স্বাগতিক ওয়েস্ট ইন্ডিজের ৩৮০ রানের জবাবে তালগোল হারিয়ে ফেলেন মুশফিকরা। মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ যদি ৫৩ রানের ইনিংস না খেলতেন, তাহলে শয়ের ঘর পেরোতো কি না সন্দেহ ছিল! তার হাফ সেঞ্চুরিতেই প্রথম ইনিংসে ১৬১ রান করে টাইগাররা। মুশফিকবাহিনীর ব্যাটিং লাইন গুঁড়িয়ে দেন ফাস্ট বোলার কেমার রোচ, ৪২ রানে ৫ উইকেট নিয়ে। যা সেন্ট লুসিয়ায় সেরা ব্যক্তিগত বোলিং। আগের রেকর্ড স্বদেশী কোরে কলিমোরের। ২১৯ রানে এগিয়ে ফলোঅন করানোর সুযোগ পেয়েও বোলারদের বিশ্রাম দেন স্বাগতিক অধিনায়ক দিনেশ রামদিন। তার চিন্তা কতটা সহায়ক ছিল, স্পষ্ট হয়েছে দ্বিতীয় ইনিংসেই। বোলারদের বিশ্রাম দিয়ে ৪ উইকেটে ২৬৯ রান তুলে দ্বিতীয় ইনিংস ঘোষণা করে স্বাগতিকরা। ছুড়ে দেয় ৪৮৯ রানের টার্গেট। প্রথম টেস্টে সেঞ্চুরির সুযোগ থাকলেও অধিনায়কের ইনিংস ঘোষণায় শিবনারায়ণ চন্দরপলকে অপরাজিত থাকতে হয়েছিল ৮৫ রানে। তাই টপকানো হয় অসি লিজেন্ড ব্যাটসম্যান স্যার ডন ব্রাডম্যানকে। সেন্ট লুসিয়াও প্রথম ইনিংসে ব্রাডম্যানকে টপকানোর সুযোগ তৈরি হয়েছিল ৪০ বছর বয়স্ক চন্দরপলের। কিন্তু সতীর্থদের সহায়তা না পাওয়ায় অপরাজিত থাকতে হয় ৮৪ রানে। দ্বিতীয় ইনিংসে সেই ভুল করেননি চন্দরপল এবং অধিনায়ক রামদিন। অধিনায়ক সুযোগ দিয়েছেন এবং সেটাকে কাজে লাগিয়ে ১০১ রানের ম্যাজিক্যাল ইনিংস খেলেন চন্দরপল। টেস্ট সেঞ্চুরির সংখ্যায় এই ক্যারিবীয় বাঁ হাতি পেছনে ফেলেন ব্রাডম্যানকে। ব্রাডম্যানের সেঞ্চুরি ২৯টি। চন্দরপলের ৩০টি। সবচেয়ে বেশি ৫১টি শচীন টেন্ডুলকারের। সেন্ট লুসিয়া টেস্টটি ওয়েস্ট ইন্ডিজ ক্রিকেট ইতিহাসে যেমন বিশেষ মর্যাদার, তেমনি চন্দরপলের কাছেও ভিন্ন আবেদনের। এখানে এবং এই টেস্টেই তিনি টপকে গেছেন ব্রাডমানকে।
৪৮৯ রানের টার্গেটের আত্মবিশ্বাসী ভঙ্গীতেই খেলতে শুরু করেন দুই টাইগার ওপেনার তামিম ইকবাল ও শামসুর রহমান শুভ। শামসুর ব্যাটিং করেন টি-২০ স্টাইলে। প্রতিটি বলেই বাউন্ডারি হাঁকানোর ধান্ধায় চালিয়েছেন ব্যাট। ২৭ বলে ৪ চার ও ২ ছক্কায় ৩৯ রান করলেও ব্যাটিং দেখে মনে হয়েছে যেনতেনভাবে রান আসাই মুখ্য। শামসুরের বিদায়ের তিন ওভার পর বাঁ হাতি স্পিনার সুলেমান বেনের প্রথম শিকার এনামুল হক বিজয়। ৪৮ রানে ২ উইকেট হারানোয় মনে হচ্ছিল এবারও হারের ব্যবধানটা বিরাট হবে! সেই অবস্থায় তামিম ও মুমিনুল হক সৌরভ তৃতীয় উইকেট জুটিতে ১১০ রান যোগ করেন ৪৭.১ ওভারে। দুই ন্যাটা ব্যাটসম্যান যখন ব্যাটিং করছিলেন, তখন মনের গহিনে উঁকি দিচ্ছিল ড্রয়ের স্বপ্ন। দলীয় ৫৯ ওভারের প্রথম বলে বেনকে মিড উইকেট দিয়ে অহেতুক উড়িয়ে মারতে যেয়ে তামিম দুর্দান্ত ক্যাচে পরিণত হন গ্যাব্রিয়েলের। তামিমের বিদায়ের পরই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পরে বাংলাদেশের সব প্রতিরোধ। বেন, জেরোমি টেলরের দুরন্ত বোলিংয়ে শেষ ৩৪ রানে ৮ উইকেট হারায় বাংলাদেশ। কখনও স্পিন, কখনও আবার আর্মারে বেন ৫ উইকেট তুলে নেন ৭২ রানে। টেলর ৩ উইকেট নিয়ে ২০ নম্বর ক্যারিবীয় বোলার হিসেবে ১০০ উইকেট নেওয়ার কৃতিত্ব দেখান। ১১০ রানের জুটি গড়া তামিম ও মুমিনুল দুজনেই তুলে নেন হাফসেঞ্চুরি। পুরো সিরিজে চূড়ান্তভাবে ব্যর্থ নাসির হোসেন। দুই টেস্টের চার ইনিংসে তার রান মাত্র ২৪! অথচ তার চেয়ে বেশি স্কোর পেসার শফিউল ইসলাম সুহাসের।
এমন পারফরম্যান্স নিয়ে ঘরের মাটিতে আগামী মাসে জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে কেমন করবেন মুশফিকরা? প্রশ্ন ক্রিকেটপ্রমীদের।