এশিয়ান গেমস ফুটবলে বাংলাদেশের সাফল্যের ভাণ্ডার শূন্য। ১৯৭৮ সাল থেকে এই গেমসে অংশ নিলেও প্রতিবারই তলানিতে থাকতে হয়েছে। এবার ইতিহাস গড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সোমবার 'বি' গ্রুপে প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ ১-০ গোলে আফগানিস্তানকে পরাজিত করেছে। ১৯৮২ সালে বাংলাদেশ ২-১ গোলে মালয়েশিয়াকে পরাজিত করেছিল। পরের আসরে নেপালের বিপক্ষে একই ব্যবধানে জয় পেয়েছিল। এরপর হারের বৃত্ত থেকে বের হয়ে আসতে পারছিলেন না ফুটবলাররা। অবশেষে এবার বন্ধ দুয়ার খুলেছে ২৮ বছর পর। আফগানিস্তানকে হারানোর ফলে বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলার সম্ভাবনা জেগেছে। 'বি' গ্রুপের অপর দুই দল উজবেকিস্তান ও হংকং তাদের প্রথম ম্যাচে ১-১ গোলে ড্র করেছে। পুরো তিন পয়েন্ট নিয়ে বাংলাদেশ আপাতত গ্রুপে শীর্ষে রয়েছে। সেক্ষেত্রে আজ উজবেকিস্তানকে হারাতে পারলেই বাংলাদেশের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলা অনেকটা নিশ্চিত হয়ে যাবে। দেশের ফুটবলে যে রুগ্নদশা তাতে এই মুহূর্তে এশিয়ান গেমসে শেষ আটে ঠাঁই পাওয়াটা বড় সাফল্য হিসেবে বিবেচিত হবে।
কথা হচ্ছে বাংলাদেশ আজ জিততে পারবে কি? ফুটবলের মান এতই নিচে নেমে গেছে যে ভালো কিছু আশা করা যায় না। সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে শিরোপা জেতাটাও স্বপ্নে পরিণত হয়েছে। তাই যতই প্রস্তুতি নেওয়া হোক না কেন ইনচেন এশিয়ান গেমসে প্রথম ম্যাচে আফগানিস্তানকে হারাবে এ আশা অনেকেই ছেড়েই দিয়েছিলেন। বাফুফের অনেক কর্মকর্তাকে বলতে দেখা গিয়েছিল ড্র করলেই সম্মান বাঁচে। অন্যদিকে আত্দবিশ্বাসী সুরে অধিনায়ক মামুনুল ইসলাম ঢাকা ছাড়ার আগে বলে গিয়েছিলেন অতীত অতীতই এবার আমরা দেশবাসীকে জয় উপহার দিতে চাই। হ্যাঁ, মামুনুলরা কথা রেখেছেন। প্রথম ম্যাচেই জয় পেয়ে ২৮ বছরের দুর্নাম ঘুচিয়েছেন। অন্যদিকে দলের ম্যানেজার আমিরুল ইসলাম বাবুও বলেছিলেন, হতে পারে আফগানিস্তান এখন সাফ চ্যাম্পিয়ন। কিন্তু তাদেরকেতো আমরা ২০১০ সালে এস এ গেমস ফাইনালে ৪-০ গোলে বিধ্বস্ত করে স্বর্ণ জিতেছিলাম। সুতরাং তাদেরকে এত ভয় পাওয়ার কিছুই নেই। মাঠে খেলোয়াড়রা যোগ্যতার প্রমাণ দিতে পারলে অবশ্যই জয় সম্ভব। শেষ পর্যন্ত তাই হয়েছে। উদ্বোধনী ম্যাচে মামুনুলরা উজার করে খেলেছেন। শেষ মুহূর্তের গোলে জয় পেলেও বাংলাদেশ সেদিন যে নৈপুণ্য প্রদর্শন করেছিল তাতে প্রথমার্ধেই গোল পাওয়া উচিত ছিল। সহজ সহজ গোলের সুযোগ নষ্ট না হলে ব্যবধান আরও বাড়তে পারত। যাক পুরো পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে এ জন্য খেলোয়াড়দের ধন্যবাদ দিতে হয়। বিশেষ করে অধিনায়ক মামুনুলের প্রশংসা করতে হয়। ম্যাচ যখন ড্র'র দিকে এগোচ্ছিল তখন তার দেওয়া গোলেই বাংলাদেশ জয়লাভ করে।
প্রথম ম্যাচ জিতে খেলোয়াড়দের আত্দবিশ্বাস বেড়ে গেছে ঠিকই। কিন্তু আজ এমন প্রতিপক্ষের বিপক্ষে লড়তে হচ্ছে যারা শুধু গ্রুপ নয়, গেমসেও ফেবারিট দল। যদিও প্রথম ম্যাচে তারা হংকংয়ের সঙ্গে ১-১ গোলে ড্র করেছে। তারপরও উজবেকদের খাটো করে দেখার উপায় নেই। মনে রাখতে হবে প্রথম ম্যাচ ড্র করাতে জয়ের জন্য উজবেকরা আজ মরণ কামড় দেবেই। দেশের নন্দিত কোচ শফিকুল ইসলাম মানিক বলেছেন, এশিয়ান ফুটবলে উজবেকের অবস্থান বেশ মজবুত। তারপরও তাদের সঙ্গে পারবই না এটা মানব না। এক সময় উজবেকের সেরা ক্লাব ঢাকা মোহামেডানের কাছে হেরেছে। সবাই যদি মাঠে ভালো খেলতে পারে ড্র নয়, উজবেককে হারানো সম্ভব। তাছাড়া যতটা শক্তিশালী ভাবা হচ্ছে তা নাও হতে পারে। তাহলে হংকংয়ের বিপক্ষে ড্র করবে কেন? মামুনুলরা ভালো খেলতে পারলে আমি মনে করি সব ভয়কে জয় করা সম্ভব। গতকাল এ ব্যাপারে মামুনুলের সঙ্গে কথা হলে তিনি বলেন, উজবেকদের শক্তি আমাদের জানা আছে। আমরা প্রস্তুত হয়েই মাঠে নামব। জয়ের নিশ্চয়তা দিতে না পারলেও এতটুকু বলব পুরো পয়েন্ট পেতেই আমরা জানপ্রাণ দিয়ে লড়ব। সবদিকে আমাদের সতর্ক হয়ে খেলতে হবে। বিশেষ করে ম্যাচে সুযোগ হাতছাড়া করা যাবে না। কোচ লোডডিক ক্রুইফ বলেন, আমি যা চেয়েছি ছেলেরা প্রথম ম্যাচে তা দিতে পেরেছে। উজবেকিস্তানের বিপক্ষে আরও ভালো খেলতে হবে। এশিয়ান হলেও ওদের খেলায় ইউরোপিয়ান ছন্দ খুঁজে পাওয়া যায়। মামুনুলদের সেভাবে বুঝে-শুনে খেলতে হবে। মনে রাখতে হবে বাংলাদেশের দর্শকরা ম্যাচের দিকে চেয়ে থাকবে। সুতরাং জয় পেতে হলে পুরো দলকেই ভালো খেলতে হবে। ২২ সেপ্টেম্বর হংকংয়ের বিপক্ষে গ্রুপের শেষ ম্যাচ। আজ জিতলেই দ্বিতীয় রাউন্ডে খেলা নিশ্চিত হবে অনেকটা। ড্র করলেও সম্ভাবনা ভালোভাবেই টিকে থাকবে।